সরকারবিরোধী আন্দোলনে, বিক্ষোভে পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘সহায়ক’ শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে মারমুখী অবস্থান নিয়ে সর্বস্তরেই কম বেশি সমালোচিত হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এমনকি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে দলটি। সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ, সংঘাত এবং তাদের ডাকা হরতালে পুলিশ বিজিবি’র পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাঠে থাকা নিয়ে দলের ভেতরেই কথা উঠেছে। ঢাকার বায়তুল মোকাররমসহ কোথাও কোথাও হেফাজতের কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষেও জড়িয়েছেন সরকারি দলের কর্মীরা। বিশেষজ্ঞরা এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে একে সংঘাতে উসকানি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
পুলিশের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন
দেশে এতগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকার পরও পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন দলের কর্মীদের নামাতে হল, এই প্রশ্ন সামনে এসেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যদিও সর্বতভাবে স্বীকার করা হয়েছে দলীয় কর্মীদের মাঠা থাকা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি, উল্টা উত্তেজনা ছড়িয়েছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করেন, নেতা-কর্মীদের এভাবে মাঠে নামানোর কারণে মনে হতে পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর সরকার বা দলের পুরোপুরি আস্থা নেই। অথবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। মানুষের মনে এ ধরনের ধারণা তৈরি হলে তা বিপজ্জনক হবে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একজন নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরবিরোধী বিক্ষোভ এবং এটাকে কেন্দ্র করে সংঘাত মোকাবিলা আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিষয়। ফলে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগের এখানেও সারসরি সম্পৃক্ত হওয়ার প্রয়োজন ছিল না।
নির্দেশ ছিল শীর্ষ পর্যায় থেকে
অতীতে বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধসহ জ্বালাও–পোড়াও কর্মসূচিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঠে রাখার জোর চেষ্টা ছিল। কিন্তু তখনও সেভাবে নেতা-কর্মীদের মাঠে নামানো যায়নি।
মোদিবিরোধী কর্মসূচি ও হেফাজতের হরতালে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের মাঠে নামাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাঠপর্যায়ের কিছু কর্মকর্তার উৎসাহ ছিল বলেও জানা গেছে। এর মধ্যে যুবলীগের নেতা-কর্মীদের মাঠে থাকার জন্য সংগঠনের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশনা ছিল।
এ বিষয়ে যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান খান (নিখিল) গণমাধ্যমকে বলেন, সাম্প্রতিক এই কর্মসূচিতে হেফাজত, বিএনপি ও জামায়াত একাকার হয়ে গেছে। অতীতে এরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও হত্যা করতে দ্বিধা করেনি। এমন কর্মসূচিতে জনগণ ও রাজনৈতিক শক্তি মাঠে থাকলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভরসা পায়। এ জন্যই তারা নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
আর হেফাজতের কর্মসূচি ঘিরে নেতা–কর্মীরা সজাগ ছিলেন বলে জানান স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান।
উসকানি হিসেবে দেখছে বিএনপি
তবে বিএনপি বলছে, সরকার দলীয় কর্মীদের মাঠে নামিয়ে সংঘাতে উসকানি দিয়েছে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি করেছেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে একদিকে যখন জনগণ মহান স্বাধীনতার দিবস পালন করছে, তখন অন্য দিকে এই অবৈধ সরকার তার পুলিশ বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা রাজপথে রক্ত ঝরিয়েছে।
এরপর বায়তুল মোকাররমে জুমা নামাজের পরে একটি সংগঠনের শান্তিপূর্ণ মিছিলে বিনা উসকানিতে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হামলায় প্রায় ২ শতাধিক তরুণ মারাত্মকভাবে গুলিবিদ্ধ ও আহত হয়েছে।
এর প্রতিবাদে হাটহাজারীতে শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপর পুলিশের নৃশংস হামলা ও নির্বিচারে গুলি চালানোয় কমপক্ষে ৪ জন নিহত ও অসংখ্য আহত হয়েছে।
একই সঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিহত হয়েছে ১২ জন। মহান স্বাধীনতা দিবসে ৫০ বছর পূরণ উদযাপনে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড জাতির জীবনে এক জঘণ্য কলঙ্কজনক অধ্যায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারা লক্ষ্য করে দেখবেন যে, প্রথম যে মিছিল হেফাজতের ছিল বায়তুল মোকাররমে। তারা একটা সাধারণভাবে প্রতিবাদ মিছিল করতে চেয়েছিল। সেই প্রতিবাদ মিছিলের ওপরে উত্তর দিক থেকে পুলিশ আক্রমণ করেছে। দক্ষিণের গেইট দিয়ে যখন পালাতে গেছে তখন আওয়ামী লীগের সশ্বস্ত্র সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করেছে এবং সেখানে বহু লোককে হতাহত করেছে।
আ’লীগ নেতা-কর্মীরা পরিস্থিতি সংঘাতময় করে তুলেছে
অন্যদিকে হেফাজতে ইসলামের নেতারা বলছেন, ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে জুমার নামাজের পর মোদিবিরোধী বিক্ষোভে সরকারি দল হামলা না করলে পরিস্থিতি সংঘাতময় হত না।
সংগঠনটির দাবি, মুসল্লিদের মিছিলে সরকারি দল হামলা করেছে, এই ভিডিও চিত্র দেখে হাটহাজারীতে মাদ্রাসার ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। তাতে পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ বাঁধে। সেখানে পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত হন। এর জেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদ্রাসার ছাত্ররা মাঠে নামেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টানা তিন দিন সহিংসতায় ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সেখানে নিহত হয়েছেন মোট ১২ জন।
বায়তুল মোকাররমে সংঘাতের ঘটনার ভিডিও ফুটেজে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীদের পাশাপাশি অবস্থানে দেখা গেছে।
ছাত্রলীগের উপস্থিতি জানত না পুলিশ
পরিস্থিতি সামাল দিতে দলীয় নেতা–কর্মীদের কেন সঙ্গে নিতে হলে, এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, সেদিন (২৬ মার্চ) মসজিদে অনেকেই নামাজ পড়তে এসেছিলেন, তারা ছাত্রলীগ না যুবলীগ পুলিশ তো কাউকে চেক করে ঢুকায়নি। রাজনৈতিকভাবে তারা কী করবে, সে সিদ্ধান্ত তো আমি দেইনি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির নিরাপত্তা নিয়ে বেশির ভাগ ফোর্স ব্যস্ত ছিল। আশঙ্কা ছিল তেমন কিছু হতে পারে, তখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে। তাই বলে এইটা না যে, কাউকে বলব, আপনি এসে আমার পক্ষে মারামারি করেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, সবচেয়ে বড় আন্দোলনও পুলিশ সফলতার সঙ্গে মোকাবিলা করেছে। তাহলে কাউকে কি আর ডাকার প্রয়োজন আছে?
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও আওয়ামী লীগের সাংসদ নূর মোহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশ পুলিশের এখন যে সুযোগ-সুবিধা, সক্ষমতা; তা দিয়ে নিঃসন্দেহে এ ধরনের পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব। এরপরও বিরোধী পক্ষের কর্মসূচিতে সরকার–সমর্থক রাজনৈতিক নেতা–কর্মীরা মাঠে থাকার চেষ্টা করেন, এটা অতীতেও হয়েছে, এখনো হচ্ছে। তবে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিষয় দেখার জন্য পেশাদার বাহিনীই যথেষ্ট।
দলের মধ্যে দেখা দিয়েছে মতপার্থক্য
এদিকে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দলীয় কর্মীদের মাঠে থাকার বিষয়টি আগে থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে হয়নি। নেতা-কর্মীদের সব সময়ই সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সতর্কতা থেকেই হয়তো তাঁরা প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম যেভাবে তাণ্ডব চালিয়েছে, সেটা খুবই বিপজ্জনক। এটা চলতে দেওয়া যায় না।
মোদিবিরোধী বিক্ষোভে এবার ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা প্রথম শক্তি দেখায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। গত ২৫ মার্চ রাতে ‘প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনসমূহ’ ব্যানারে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনের মোদিবিরোধী বিক্ষোভে হামলা চালান ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। ওই ঘটনায় কয়েকজন সাংবাদিকও আহত হন।
পরে রোববার হেফাজতের ডাকা হরতালে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ও ঢাকার বাইরেও আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মাঠে দেখা গেছে। অনেক জায়গায় তাঁদের হাতে লাঠিসোঁটাও ছিল। ওই দিন কয়েকটি স্থানে সরকারি দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে হেফাজতের নেতা–কর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, নৈরাজ্য, ধ্বংসযজ্ঞ ও জ্বালাও-পোড়াওয়ের বিরুদ্ধে সব সময় আওয়ামী লীগ সোচ্চার। এ ধরনের ঘটনা ঘটলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তো বসে থাকবেন না। প্রতিবাদ করবেনই। আওয়ামী লীগ কোনো দল বা সংগঠনকে লক্ষ্য করে কর্মসূচি নেয় না। ঘটনার প্রতিক্রিয়া দেখায়।
দলীয় সূত্র জানায়, ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররম এলাকায় ধর্মভিত্তিক দলের সঙ্গে সংঘাতে জড়ান ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তাদের অনেকে আহতও হয়েছেন। এর মধ্যে খিলগাঁও এলাকার একজন নেতার অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক।
সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ, সংঘাত এবং তাদের ডাকা হরতালে পুলিশ বিজিবি’র পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মাঠে থাকা নিয়ে দলের ভেতরেই কথা উঠেছে।
আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নরেন্দ্র মোদির সফর ও উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশের পাশাপাশি বিজিবিও নামানো হয়। অতীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এর চেয়েও বড় বিক্ষোভ-সংঘর্ষ মোকাবিলা করেছে। কিন্তু এবার কেন দলীয় নেতা-কর্মীদের নামানো হলো তা বোধগম্য নয়।
দেশ জুড়ে ত্রাসের অন্য নাম ছাত্রলীগ
স্বাধীন বাংলাদেশে ক্যাম্পাসে খুনের রাজনীতি কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী কিংবা সরকারবিরোধী কোনো ছাত্রসংগঠন শুরু করেনি। বড় দাগে এই খুনের রাজনীতি চালু করে ছাত্রলীগেরই একাংশ, ১৯৭৪ সালে। তারও আগে ১৯৭৩ সালের ডাকসু নির্বাচনে জাসদ–সমর্থিত ছাত্রলীগের সঙ্গে যৌথভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল সরকার সমর্থক ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন। ওই নির্বাচনে ভরাডুবি হবে জেনে ব্যালট বাক্স ছিনতাই করে সরকার সমর্থক ছাত্রলীগ। যদিও তখন জাসদ ছাত্রলীগের ওপরই এর দায় চাপানোর চেষ্টা হয়েছিল। বাংলাদেশে সুস্থ ছাত্ররাজনীতির সর্বনাশ শুরু হয় তখন থেকেই। হত্যা ছাড়াও চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অপহরণ ও নির্যাতনের অনেক অভিযোগ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে৷ শুধু সাধারণ পর্যায়ের কর্মী বা নেতার বিরুদ্ধে নয়, ছাত্রলীগের সাবেক কয়েকজন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধেও এই অভিযোগ আছে৷ এখানে ছাত্রলীগের খুন ও লাশের রাজনীতির কিছু ঘটনা তুলে ধরা হলো:
২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলে সিট দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে নিহত হন মেধাবী ছাত্র আবু বকর৷ ময়না তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী শক্ত ভোঁতা অস্ত্রের আঘাতে আবু বকরের মাথা থেঁতলে দেয়া হয়৷ এই হত্যার ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়৷ ২০১৭ সালে আদালতের রায়ে ছাত্রলীগের অভিযুক্ত ১০ নেতা-কর্মীর সবাই বেকসুর খালাস পায়৷
২০১০ সালে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের ইফতারের টোকেন নিয়ে সংঘর্ষ বাধে রাজশাহী ছাত্রলীগের মধ্যে৷ তার জের ধরে দলটির কর্মী নাসরুল্লাহ নাসিমকে পিটিয়ে শাহ মখদুম হলের দ্বিতীয় তলা থেকে ফেলে দেয়া হয়৷ ১০ দিন হাসপাতালে থাকার পর তার মৃত্যু হয়৷ এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হয় ১০ জন, যাদের সবাই এখন জামিনে৷
২০১২ সালে জানুয়ারিতে মারা যান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের৷ তাকে পরিকল্পিতভাবে কুপিয়ে হত্যা করে তারই সংগঠনের প্রতিপক্ষরা৷ এই মামলায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল ২০১৫ সালে পাঁচ জনের মৃত্যুদণ্ড এবং ছয় জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন৷ গত বছরের জানুয়ারিতে পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড ও দুজনের যাবজ্জীবন বহাল রাখে হাইকোর্ট৷ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে চারজনই পলাতক৷
বিশ্বজিৎ দাস ছিলেন পুরান ঢাকার একজন দর্জি৷ ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নৃশংস হামলায় তার মৃত্যু হয়৷ সেসময় ১৮ দলের অবরোধ চলছিল৷ বিশ্বজিৎ শিবির কর্মী এমন ধারণা করে তাকে চাপাতি, কিরিচ দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে কোপায় ছাত্রলীগ কর্মীরা৷
২০১৩ সালে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয় মারা যায় ১২ বছরের শিশু রাব্বি৷
২০১৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সংস্কৃতি বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র তাপস সরকার৷ ২০১৬ সালে এই ঘটনায় ২৯ নেতাকর্মীর নামে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ৷ মূল আসামী আশরাফুজ্জামানসহ গ্রেপ্তারকৃত ১৫ জনই জামিন পান৷
২০১৬ সালের ৩ অক্টোবরের ঘটনা৷ এমসি কলেজ থেকে বিএ পরীক্ষা দিয়ে বের হবার পরই খাদিজা আক্তার নার্গিসকে চাপাতি দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবি)-র ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলম৷
শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় হেলমেট পরিহিত সশস্ত্র কিছু যুবক ধানমন্ডি, জিগাতলা এবং সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় পুলিশের উপস্থিতিতে শিক্ষার্থী এবং সাংবাদিকদের ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করে৷ হামলাকারীরা ছাত্রলীগের কর্মী বলে বিভিন্ন গনমাধ্যমে পরিচয় সহ খবর বের হয়৷ কিন্তু এই ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার হয়নি, কারও বিচারও হয়নি৷
দেশব্যাপী কোটা আন্দোলনের সময় বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ ওঠে৷ তেমনই একটি ঘটনা ঘটে গত বছরের ২ জুলাই৷ তরিকুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থীকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের রাস্তায় পেটায় ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী৷ তাকে হাতুড়ি পেটা করে দলটির সহ-সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল-মামুন৷ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি৷
২০১৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস এম হলে এহসান নামের এক ছাত্রকে পিটিয়ে আহত করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা৷ নিজের ক্যালকুলেটর ফেরত চাইলে এই হামলা চালায় তারা৷ এসময় তাকে শিবির কর্মী বলেও অপবাদ দেয়া হয়৷ হামলায় এহসানের চোখের কর্নিয়া গুরুতর জখম হয়৷ ঘটনায় ছাত্রলীগের ৭ নেতা-কর্মী বিভিন্ন মেয়াদে বহিস্কার হলেও তারা হলে থাকতেন বলে খবর বের হয়৷ অন্যদিকে নিরাপত্তাহীনতায় দেশ ছাড়ে এহসান৷
২০১৯ এর ৭ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে ছাত্রলীগের নৃশংসতার শিকার হন বুয়েটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ৷ রাত ২টার দিকে শেরে বাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এই ছাত্রের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতারা আগের দিন সন্ধ্যায় তাকে রুম থেকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে৷
এসডব্লিউ/এসএস/২০৩১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ