হত্যা মামলায় প্রধান আসামি হয়ে পলাতক অবস্থায় জামিন নিয়ে ফিরেই প্রতিপক্ষের ওপর পুনরায় হামলার করে ফেঁসে গেছেন দক্ষিণ বগুড়ার ত্রাস শীর্ষ সন্ত্রাসী যুবলীগ নেতা নাদিম প্রামানিক। শুক্রবার (২৬ মার্চ) রাতে নাদিম প্রামানিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বগুড়া শহরের ফুলতলা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রুপের ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডের অন্যতম হোতা এই নাদিম। তিনি ফুলতলা বাজার এলাকার আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী মজনু প্রামানিকের ভাগিনা এবং বগুড়া শহর যুবলীগের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সাধারণ সম্পাদক। একই সাথে নাদিম ফুলতলা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি।
পুলিশ জানায়, দক্ষিণ বগুড়ার ফুলতলা এলাকার যুবলীগ নেতা নাদিম প্রামানিক ও তৌহিদুর রহমান লিখন গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। আধিপত্য বিস্তার ও পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি লিখন গ্রুপের সদস্য ফোরকান নামে এক সন্ত্রাসীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। ওই মামলায় নাদিম প্রামানিককে প্রধান করে ১৩ জনকে আসামি করা হয়। হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই নাদিম পলাতক ছিলেন।
এদিকে, এই হত্যা মামলার আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নিয়েছে বলে দাবি করে দলবলসহ এলাকায় ফিরে নাদিম। তারা বৃহস্পতিবার রাতে ফুলতলা সরকারি স্কুলের সামনে প্রতিপক্ষ লিখন গ্রুপের সদস্যদের ওপর সশস্ত্র হামলা করে। এ হামলার নেতৃত্ব দেনে নাদিম। সংঘর্ষে লিখন গ্রুপের তিনজন এবং নাদিম গ্রুপের একজন আহত হন।
হামলার ঘটনায় শুক্রবার বিকেলে লিখন গ্রুপের পক্ষে ফয়সাল কবির নামে একজন বাদী হয়ে যুবলীগ নেতা নাদিমকে প্রধান আসামি করে ১৮জনের বিরুদ্ধে শাজাহানপুর থানায় মামলা দায়ের করে। এরপরই রাতে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দক্ষিণ বগুড়া ফুলতলা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে মাত্র ১০ বছরে দু’পক্ষের ১০ জন খুন হন। এক সময় এখানকার সন্ত্রাসী গ্রুপের নেতৃত্ব দিতেন দুই বন্ধু শাহীন ও মজনু প্রামাণিক। এরা দুজনই যুবলীগের স্থানীয় নেতা ছিলেন। কিন্তু অভ্যন্তরীন কোন্দলে প্রথমে শাহীনের হাতে মজনুর বাবা শুকুর আলী প্রামাণিক খুন হন। প্রতিশোধ হিসাবে মজনু গ্রুপের সদস্যরা ফুলদীঘি এলাকায় হর্টিকালচার সেন্টারে শাহীনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এরপর থেকেই শাহীন গ্রুপের হাল ধরেন তার ছেলে তৌহিদুর রহমান লিখন। পিতার হত্যার জের ধরে লিখন বাহিনীর হাতে খুন হন মজনুর ভাতিজা শামীম আহম্মেদ বুশ।
একই বাহিনীর হাতে একটি বাড়ির ভেতরে পরবর্তী সময়ে খুন হন যুবলীগ নেতা মজনু প্রামাণিক ও তার ভাতিজা নাহিদ প্রামাণিক। এর রেশ কাটতে না কাটতেই বাড়ির অদূরে খুন হন মজনুর ভাই রঞ্জু প্রামাণিক। প্রতিশোধ নিতে আবার মজনু গ্রুপের হাতে খুন হন লিখন গ্রুপের অন্যতম সদস্য শীর্ষ সন্ত্রাসী আকুল। এরই মধ্যে জুমার নামাজ আদায় করতে যাওয়ার সময় শাকপালা মসজিদের সামনে খুন হয় জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু হানিফ মিস্টার। সর্বশেষ আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে শাহিন গ্রুপের সদস্য ফোরকানকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত ফোরকানও দুটি হত্যা মামলার আসামি ছিলেন।
শাজাহানপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, শুক্রবার রাতে ফুলতলা এলাকার নিজের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয় নাদিমকে। তার গ্রুপের অন্য দুই সদস্য আবু হানিফ আকন্দ ও মিন্টু মিয়াকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়। নাদিমের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা, অস্ত্র ও চাঁদাবাজিসহ মোট নয়টি মামলা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আওয়ামী লীগ যুবলীগ নেতাকর্মীদের দৌরাত্ম্য দিনদিন চাউর হয়ে উঠছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে ক্ষমতার চূড়ান্তে বসবাস করেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ও সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আগ্রহবোধ না করায় তাদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে চলেছে। ক্ষমতা বলে তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ থেকে পার পেয়ে যান বলে তারা স্থানীয় পর্যায়ে নানা অপকর্মে উৎসাহী হয়ে ওঠেন। তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া চললে এমনটি হবার ঘটনা অনেকটাই নেমে আসবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এবিষয়ে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের যথাযথ ভূমিকা পালনের দাবি জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৫৩৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ