নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, ‘ভারত সরকারের কর্তাব্যক্তিরা মুসলিমদের অধিকার হননের ব্যাপারে অতিমাত্রায় তৎপর।’ জার্মান বুক ট্রেড-এর দেওয়া শান্তি পুরস্কার (২০২০) উপলক্ষে বক্তব্যে তিনি ওই মন্তব্য করেছেন।
অমর্ত্য সেন বলেন, ‘এ দেশে হিন্দু এবং মুসলিমরা শতশত বছর ধরে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করে এসেছেন। কিন্তু ইদানীং রাজনৈতিকভাবে ‘চরমপন্থী হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো’র আচরণে এ দেশীয় মুসলিমদের বিদেশি হিসেবে গণ্য করার চেষ্টা প্রকট হয়ে উঠেছে। তারা এমন দোষারোপও করছে যে, মুসলিমরা দেশের ক্ষতি করে চলেছেন। চরমপন্থী হিন্দু রাজনীতির ক্রমবর্ধমান শক্তি এতে ইন্ধন জুগিয়ে চলেছে। এবং এরফলে সমাজে ধর্মাশ্রিত বৈরভাব ও গোষ্ঠীগত বিচ্ছিন্নতা বিপুলভাবে বাড়ছে।’
তিনি বলেন, ‘ইউএপিএ’র (সংশোধিত বেআইনি কার্যকলাপ (নিবারণ) আইন বলে বলীয়ান সরকার যাকে খুশি ‘সন্ত্রাসবাদী’ বানিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু অন্যপক্ষে যাঁদের অভিযুক্ত করা হচ্ছে তাঁরা প্রতিবাদের পথ হিসেবে সাধারণত গান্ধী প্রবর্তিত অহিংস ধারাটিকেই অনুসরণ করছেন। এটা বিশেষ করে ঘটে চলেছে নতুনভাবে উঠে আসা, বিশেষত ছাত্রদের দ্বারা সংগঠিত, ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে। (দিল্লির) জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম গবেষক ছাত্র ওমর খালিদের কথাই ধরা যাক। ওমরকে ‘ইউএপিএ’ আইনে ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে দেগে দিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং জেলে পুরে রাখা হয়েছে। কিন্তু ওমর এই আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ দিকটিকে চমৎকারভাবে বর্ণনা করেছেন : ‘ওরা আমাদের লাঠিপেটা করলে আমরা তেরঙ্গা (জাতীয় পতাকা) ওড়াব। ওদের বুলেটের জবাবে আমরা হাতে ধরে রাখা সংবিধানকে উপরে তুলে ধরব।’
অমর্ত্য সেন বলেন, ‘ভারতীয় সংস্কৃতি হল নানা ধর্মের লোকেদের যৌথ সাধনার ফল। সঙ্গীত বা সাহিত্য থেকে চিত্রকলা ও স্থাপত্য পর্যন্ত নানা ক্ষেত্রে এই সমন্বয়ের দেখা মেলে। এমনকী, ভারতের বাইরের লোকেরা যাতে পড়তে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে উপনিষদের মতো হিন্দু শাস্ত্রগুলোর তর্জমার কাজটি শুরু করেন দারা শুকো-সম্রাজ্ঞী মুমতাজের জ্যেষ্ঠপুত্র, যে মুমতাজের স্মৃতিতে ‘তাজমহল’ নির্মাণ করিয়েছিলেন সম্রাট শাহজাহান। অথচ, বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বহু স্কুলপাঠ্য বইতে এমন আদ্যন্ত মনগড়া ইতিহাস পরিবেশিত হচ্ছে, যেগুলোতে ‘মুসলিমদের অবদান’কে হয় ঢেকে দেওয়া হচ্ছে অথবা সম্পূর্ণ মুছে দেওয়া হচ্ছে।’
দলিতদের উপরে নিপীড়ন প্রসঙ্গে অমর্ত্য সেন বলেছেন, ‘সাধারণত দেখা যায়, স্বৈরতন্ত্রে সমাজের একটা বিশেষ অংশের উপর নিপীড়ন চালানো হয়। ভারতে এই নিপীড়ন সচরাচর চলে বিশেষ জাতি বা ধর্মের লোকেদের ওপর। আগে যাঁদের ‘অচ্ছুৎ’ বলা হতো এবং এখন ‘দলিত’ বলা হয়, সেই নিম্নবর্ণের লোকেরা চাকরি ও শিক্ষার ক্ষেত্রে স্বাধীনতার পরে চালু হওয়া সংরক্ষণের সুবিধা পান ঠিকই কিন্তু সমাজে তাঁদের প্রায়শই ভয়ানক দুর্ব্যবহারের শিকার হতে হয়। ইদানীং একদিকে উচ্চবর্ণের লোকেদের দ্বারা দলিতদের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা ব্যাপকভাবে বেড়ে চলেছে, অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে এগুলোকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাও খুব বেশি দেখা যাচ্ছে। একমাত্র জোরালো গণবিক্ষোভের চাপেই এগুলো কিছুটা প্রকাশ্যে আসে।’
‘কাউকে ‘দেশ-বিরোধী’ (অ্যান্টি-ন্যাশনাল) বললে পৃথিবীর যেকোনও দেশেই সেটা একটা বড় রকমের মতাদর্শগত নিন্দাবাদ বলে গণ্য হয়। কিন্তু আজকের ভারতে কেউ সরকারের সমালোচনা করলেই তাঁর গায়ে ‘দেশবিরোধী’ ছাপ লাগিয়ে দেওয়া হতে পারে। ‘সরকার-বিরোধিতা’ ও ‘দেশ-বিরোধিতা’র মধ্যে পার্থক্য আছে, কিন্তু ‘স্বৈরশাসনে’ সচরাচর এই ফারাকটাকে গুলিয়ে দেওয়া হয়’ বলেও অমর্ত্য সেন মন্তব্য করেছেন।
সূত্র : পার্সটুডে/এমএএইচ/এআর/৩
We chose a different approach. Will you support it? We believe everyone deserves to read quality, independent, factual news and authoritative, calm analysis – that’s why we keep State Watch journalism open to all. The free press has never been so vital. No one sets our agenda, or edits our editor, so we can keep providing independent reporting each and every day. Every contribution, however big or small, is so valuable for our future – in times of crisis and beyond. Support the State Watch today a little amount. Thank you.
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ