আওয়ামী লীগ নেতার মৃত্যুর একদিন পর রহস্যজনকভাবে বাঁশখালীতে একই কায়দায় বিএনপি নেতাকে হত্যা করল সন্ত্রাসীরা। এ নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে জনমনে। গত চার দিনে এ নিয়ে বাঁশখালীতে তিনজন খুন হওয়ার ঘটনা ঘটল। পুলিশ এখনও হত্যাকাণ্ডগুলোর কারণ জানতে পারেনি। প্রতিশোধ নিতেই বিএনপি নেতাকে হত্যা করা হয়েছে কিনা তা এখনও নিশ্চিত নয়।
শুক্রবার দিবাগত রাত একটার দিকে চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন বিএনপি নেতা আবুল বশর তালুকদার (৪৮)। ঘটনার সময় তার দুই পা কেটে নেয় সন্ত্রাসীরা। জানা যায়, আবুল বশর তালুকদার বাহারছড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ও ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে পুকুরিয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছাবের আহমদেরও (৪৮) একই কায়দায় খুন করে দুর্বৃত্তরা।
সূত্র মতে, উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের পূর্ব চাপাছড়ি গ্রামের উত্তরপাড়ার রাস্তায় মাথা এলাকায় আবুল বশরের গ্যারেজ রয়েছে। সেখানে কাজ শেষ করে গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাড়ি যাচ্ছিলেন তিনি। বাড়ির একটু কাছেই রাস্তায় আগে থেকে ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা বশরের পথ আগলে দাঁড়ায়। একপর্যায়ে সন্ত্রাসীরা আবুল বশরকে কুপিয়ে তার দুই পা কেটে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে রেখে যায়।
পুলিশি তৎপরতা
শুক্রবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম রসিদুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পুলিশ ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মো. মোজাঙ্গীর, মো. সাদু রশিদ, আব্দুল জব্বার নামের ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
বাঁশখালী থানার (ওসি) মোহাম্মদ সফিউল কবীর বলেন, তারা তিনজনকে আটক করেছেন। পুলিশ ঘটনার রহস্য উন্মোচনে কাজ শুরু করছে।
সহকারী পুলিশ সুপার (আনোয়ারা সার্কেল) মো. হুমায়ুন কবির বলেন, আবুল বশর কেন খুন হয়েছেন তা রহস্য বের করার তদন্ত চলছে। পুলিশ সার্বক্ষণিক মাঠে আছে। জুয়া খেলায় সম্পৃক্ত ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কেটে নেওয়া পা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। খুনিদের কেউ রেহায় পাবে না।
সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যমতে
গ্রেফতারকৃত গ্যারেজের মালিক আব্দুল জব্বার বলেন, শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত তার গ্যারেজে তাস খেলা খেলেন আবুল বশর তালুকদার, জমির, শাহজাহান ও রুবেল। ওই সময় বাইরে বসে থাকা লাসু বার বার উঁকি দিচ্ছিল। তাস খেলা শেষে আবুল বশর বাড়ি যাবার সময় বাড়ির পাশে কবরস্থানে পৌঁছলে ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা আবুল বশরের দুই পা কেটে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এমনকি কাটা এক পা নিয়েও যায়।
আবুল বশরের আহত অবস্থার গোঙানির খবর পেয়ে স্থানীয় আরেক ইউপি সদস্য করিম ও আবুল বশরের কন্যা শাবনাজ তাকে উদ্ধার করে। এর কিছুক্ষণ পর আবুল বশর প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে মারা যান।
আবুল বশরের স্ত্রী খালেদা বেগম ও মেয়ে শাবনাজ জানান, স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের মাদক ব্যবসায় বাধা দিতে গিয়ে খুন হয়েছেন আবুল বশর তালুকদার। তিনি মারা যাবার আগে তার বড় কন্যা শাবনুরকে সব খুনিদের নাম বলে গেছেন। শাবনুর তার বাবার লাশ নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত কাজে পুলিশের সাথে গেছেন।
বাঁশখালীতে ৪ দিনে ৩ খুন
এ নিয়ে গত চার দিনে বাঁশখালীতে তিনজন খুন হল। এর মধ্যে গত ১৮ মার্চ রাতে পায়ের গোড়ালি বিচ্ছিন্ন করে খুন করা হয়েছে পুকুরিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছাবের আহমদকে (৪৫)। তিনি ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে শুক্রবার বিকালে মৃত্যুবরণ করেন।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী আমেনা খাতুন বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে এ ঘটনায় পুলিশ মো. হাসান(১৯) নামে একজনকে গ্রেফতার করেন।
অন্যদিকে গত ১৬ মার্চ রাতে বাঁশখালী চাম্বল বাজারের মুরগী ও ডিম ব্যবসায়ি নুরুল ইসলাম (৩৫)কে ছুরিকাঘাত করে ভুঁড়ি নামিয়ে দিয়েছে দৃষ্কৃতকারীরা। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পথেই তিনি মারা যান।
দোকান শেষে বাড়ি ফেরার পথে দৃষ্কৃতকারীদের রোষানলে পড়ে খুন হন এই ব্যবসায়ি। এ ঘটনায় নিহতের ভাই নুর মোহাম্মদ বাদী হয়ে বাঁশখালী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। হত্যা মামলাটিতে আসামি অজ্ঞাত।
এসডব্লিউ/এসএস/০২৩৮
আপনার মতামত জানানঃ