সিআইডির উপপরিদর্শক (এসআই) মো. নওয়াব আলীর কোটিপতি স্ত্রী গোলজার বেগমকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গোলজার বেগম চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক। তার স্বামী নওয়াব বর্তমানে ঢাকায় সিআইডির এসআই পদে আছেন।
আজ (৯ মার্চ) চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন গোলজার বেগম। আত্মসমর্পণের পর তিনি আদালতে জামিনের আবেদন করেন। তবে আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, দুনীতির মামলায় আজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন আসামি গোলজার বেগম। তিনি আদালতে জামিন চান। দুদকের পক্ষ থেকে জামিনের বিরোধিতা করা হয়। পরে আদালত গোলজার বেগমকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
আইনজীবী মাহমুদুল হক জানান, এই মামলায় দুদকের দেওয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করে গোলজার বেগম, তার স্বামী এসআই নওয়াব আলীসহ চার আসামির বিরুদ্ধে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। কিন্তু আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। পত্রিকায় এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর আসামি গোলজার বেগম আজ আত্মসমর্পণ করেন। এই মামলায় আগামী ৬ এপ্রিল শুনানির পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে।
দুদক সূত্র জানা গেছে, নওয়াব আলীর গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ সদরের কেকানিয়ায়। ১৯৯২ সালে কনস্টেবল পদে যোগ দেন তিনি। নওয়াব আলী দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা কামালেও তার মালিক সাজিয়েছেন স্ত্রীকে। গোলজার বেগম মাছ চাষ করে ১ কোটি ১০ লাখ আয় টাকা করেছেন বলে কাগজপত্রে দেখিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে মাছ চাষের অস্তিত্ব পাওয়া না গেলেও কর কর্মকর্তারা ‘মাছ চাষ করা হয়’ মর্মে প্রতিবেদন দেন।
এ ঘটনায় এসআই নওয়াব আলী, তার স্ত্রী গোলজার বেগম, কর অঞ্চল-১ চট্টগ্রামের অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) বাহার উদ্দিন চৌধুরী ও কর পরিদর্শক দীপংকর ঘোষকে আসামি করে আদালতে দুদক অভিযোগপত্র দেয়। অভিযোগপত্র গ্রহণ করে এই চার আসামির বিরুদ্ধে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
দুদক সূত্র আরও জানিয়েছে, নওয়াব আলী তার গ্রামের বাড়িতে নিজের নামে ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ জমির ওপর একটি দোতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। আর স্ত্রী গোলজারের নামে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ছলিমপুরে ৩৫৪ শতক জমি কিনেছেন। চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার এলাকায় পার্কিংসহ ১ হাজার ১০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, একই এলাকায় ৪ শতক জমি রয়েছে স্ত্রীর নামে। এছাড়া গোলজারের নামে একটি মাইক্রোবাসও রয়েছে।
তবে দুদকে জমা দেওয়া হিসাববিবরণীতে গোলজার দাবি করেছেন, তিনি মিরসরাইয়ের পশ্চিম ইছাখালীর মদ্দারহাটে স্থানীয় সাতজনের সঙ্গে চুক্তি করে একটি জলমহাল ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করেছেন। কিন্তু যেসব ব্যক্তির সঙ্গে চুক্তি দেখানো হয়েছে, তারা ২০ বছর আগে মারা গেছেন বলে তদন্তে উঠে আসে।
ওই এলাকার বাসিন্দা বাবুল চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, যাদের জায়গায় জলমহাল দেখানো হয়েছে, সেটা নাল জমি। এখানে কখনো মাছ চাষ হয়নি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক আলী আকবর বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা নওয়াব আলী ঘুষ, দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থে স্ত্রী ও নিজ নামে ফ্ল্যাট, জমি ও গাড়ি কিনেছেন। এগুলো জায়েজ করার জন্য স্ত্রীকে মৎস্যচাষি দেখিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবে মাছ চাষের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশে আইন রক্ষাকারীরা আইন ভঙ্গ করলে এক বিশৃঙ্খল তৈরী হয়। আইনের রক্ষক হয়ে যদি তা লঙ্ঘন করেন তবে সেটা অন্যদের নিকট গ্রহণযোগ্যতা হারায়। তারা বলেন, দেশে পুলিশের বিরুদ্ধে এতো এতো অভিযোগ আসে যে, সন্ত্রাসীদের চেয়ে পুলিশ নিয়ে ভাববার সময় চলে এসেছে। খুন, ধর্ষণ, মাদক সেবন ও পাচার, দুর্নীতি ইত্যাদি হেন অপকর্ম নেই যা পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠেনি। আইনের অপব্যবহার করে এসব করে থাকেন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৫৩৩
আপনার মতামত জানানঃ