পোশাক খাতে নারী শ্রমিকের সংখ্যা কমছে, এ খাতে নারী শ্রমিকের হার এখন ৫৯ শতাংশ। পাঁচ বছর আগে ছিল ৬৫ শতাংশ। প্রতিবছর পুরুষ শ্রমিক বাড়ছে ৭ থেকে ১০ শতাংশ। সেখানে নারী শ্রমিক বৃদ্ধির হার ২ থেকে ৪ শতাংশ কমেছে- এমন তথ্য উঠে এসেছে এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্টের (এসিডি) এক জরিপ প্রতিবেদনে। শনিবার (৬ মার্চ) ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে অনলাইনে ‘বাংলাদেশে পোশাকশ্রমিকদের আর্থসামাজিক অবস্থা’ শীর্ষক এই জরিপের ফল প্রকাশ করেন এসিডির নির্বাহী পরিচালক এ কে এনামুল হক। তিনি জানান, জরিপের কাজটি শুরু হয় গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। দৈবচয়নের ভিত্তিতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ১৬০টি পোশাক কারখানার ওপর জরিপটি করা হয়। এর মধ্যে ঢাকা ও এর আশপাশের জেলার কারখানা ১২৯টি, বাকি ৩১টি চট্টগ্রামের।
নিটওয়্যার, ওভেন ও সোয়েটার—এই তিন ক্যাটাগরি বা শ্রেণিতে কাজ করেন এমন ১ হাজার ১১৯ জনের ওপর জরিপটি করা হয়। ১৬০ কারখানায় প্রথম গ্রেড থেকে সপ্তম গ্রেডের শ্রমিকদের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালে এসিডি পোশাক খাত নিয়ে প্রথম জরিপ করেছিল।
এনামুল হক বলেন, পোশাক খাতে এখন মোট ৪২ লাখ ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। এর মধ্যে নারী ২৪ লাখ ৯৮ হাজার আর পুরুষ ১৭ লাখ ২২ হাজার। ৫ বছর আগে পোশাক খাতে মোট ৪০ লাখ ১ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৯১ হাজার। আর পুরুষ ছিলেন ১৪ লাখ ১০ হাজার। ৫ বছরে পোশাক খাতে ২ লাখ ১৯ হাজার শ্রমিক যুক্ত হয়েছেন। অর্থাৎ প্রতিবছর গড়ে ১ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ হারে শ্রমিক বেড়েছে পোশাক খাতে। এই সময়ে পোশাক খাতে পুরুষের অন্তর্ভুক্তির প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ শতাংশ। অন্যদিকে প্রতিবছর নারী শ্রমিক কমেছে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ হারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের গার্মেন্টস খাতে বিদেশি কর্মীর সংখ্যা ১৫.৬ শতাংশ। তবে এর মধ্যে ব্যবস্থাপনার ৮৪ শতাংশ শ্রমিকই বিদেশি। মার্চেন্ডাইজিংয়ে ৮ শতাংশ, টেকনিক্যাল অপারেশনে ১৬ শতাংশ, কাটিং ও ডিজাইনিংয়ে ৪ শতাংশ এবং অন্যান্য পদে ৮ শতাংশ বিদেশি শ্রমিক কাজ করছে।
এদিকে, গার্মেন্টেসে ৭৪ শতাংশ শ্রমিকই বিবাহিত, ২৫ শতাংশ শ্রমিক অবিবাহিত এবং ১ শতাংশ শ্রমিক বিবাহের পরও আলাদা থাকেন। একইসঙ্গে শ্রমিকদের মধ্যে ২৭.৯ শতাংশ পুরুষ এসএসসি কিংবা এইএচসি পাস করেছেন। আর নারীদের মধ্যে এই হার ১৫.৪ শতাংশ। ৪.৮ শতাংশ পুরুষ শ্রমিকের ব্যাচেলর ডিগ্রি রয়েছে, নারীদের মধ্যে এই হার ১.৫ শতাংশ।
জরিপে দেখা গেছে, পোশাক খাতে বর্তমানে একজন শ্রমিকের মাসিক গড় মজুরি ১১ হাজার ৪০২ টাকা, যা ২০১৪ সালে ছিল ৬ হাজার ৮২০ টাকা। এই খাতে কর্মরত একটি শ্রমিক পরিবারের মাসিক আয় এখন ২৩ হাজার ৬৯৯ টাকা, ২০১৪ সালে যা ছিল ১৫ হাজার ৭১৯ টাকা। প্রতিদিন শ্রমিকদের ৬৭ শতাংশ মাছ ও ৭৪ শতাংশ সবজি খাওয়ার কথা বলেছেন। এ ছাড়া ২৫ শতাংশ ডিম, ১১ শতাংশ গরুর মাংস ও ২২ শতাংশ মুরগির মাংস খাওয়ার তথ্য জানান।
জরিপে আরও বলা হয়, দেশের ৪০ শতাংশ পোশাক শ্রমিক ইন্টারনেট ব্যবহার করেন। এরমধ্যে ফেসবুক ব্যবহার করেন ৩৩.৩ শতাংশ। শ্রমিকদের মধ্যে ইউটিউব ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৩২.৫ শতাংশ, ইমো ৩৩ শতাংশ, হোয়াটসঅ্যাপ ৪.৭ শতাংশ ও ভাইবার ২.১ শতাংশ।
আলোচনায় শ্রমিকদের আয় এবং জীবনযাত্রা প্রসঙ্গে জরিপের ফল নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সিপিডির সম্মাননীয় অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে মূল্যস্ম্ফীতির সঙ্গে উপস্থাপিত জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংগতি নেই জরিপে। এ সময় চালের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। জরিপে এসএসসি এবং এইসএসসি পাস করে পোশাক খাতে যোগদানের প্রসঙ্গ এনে পিআরআইর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, শিক্ষিতরা এলেও কারিগরি জ্ঞানে দক্ষ জনবল আসছে না।
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ক্রেতারা পোশাকের ন্যায্য দাম দিচ্ছে না। গত এক বছরে পোশাকের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ। অথচ এ সময় এক পয়সাও দর বাড়ায়নি ক্রেতারা। আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা চায় আইএলও। ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে আরও নারী শ্রমিককে দেখতে চান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১২১৫
আপনার মতামত জানানঃ