নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারির ২০ তারিখে বিশ্বের অন্যতম ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেন জো বাইডেন। শপথ নেওয়ার মাস পেরুতেই যুক্তরাষ্ট্রের চিরায়ত ধারায় ফিরেছেন জো বাইডেন। সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলে ইরান সমর্থিত বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়ে যুদ্ধে তিনি হাতেখড়ি করলেন। গতকাল বৃহস্পতিবারের এ হামলায় কমপক্ষে ১৭ জন নিহত হয়েছেন। জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা নেওয়ার পর তার নির্দেশে এটাই প্রথম হামলা।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের খবরে বলা হয়, জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা নেওয়ার পর তার নির্দেশে জানামতে এটাই প্রথম হামলা। সিরিয়ায় যে স্থানে মার্কিন সেনাদের লক্ষ্য করে রকেট হামলা হয়েছিল, গতকালের ওই হামলা নির্দিষ্ট করে সেই স্থানে চালানো হয়নি। তবে মার্কিন বাহিনীর হামলার স্থানে ইরান-সমর্থিত শিয়া মিলিশিয়ারা সক্রিয় রয়েছেন।
বাইডেন পাঁচ সপ্তাহ আগে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর ইরান সম্পৃক্ত বিভিন্ন গ্রুপের বিরুদ্ধে তাদের এই প্রথম সামরিক অভিযানের ব্যাপারে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ জানায়, তারা সিরিয়া-ইরাক সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ পয়েন্টে এসব গ্রুপের ব্যবহার করা ‘অনেক স্থাপনা’ বিমান হামলা চালিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, সিরিয়া-যুদ্ধের ওপর নজর রাখা যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে, মার্কিন বাহিনীর হামলায় ইরানপন্থী ১৭ জন মিলিশিয়া নিহত হয়েছেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেছেন, তিনি এই হামলার জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সুপারিশ করেছিলেন। পরে বাইডেন এই হামলার অনুমোদন দেন।
মার্কিন বাহিনীর হামলা প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কিরবি জানান, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নির্দেশনায় যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় এই বিমান হামলা চালায়। সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়ায় আমেরিকান ও তাদের মিত্রদের প্রতি হামলা এবং বিভিন্ন বিষয়ে চলমান হুমকির জবাবে এই আক্রমণ চালানো হয়।
কিরবি আরও জানান, একটি বর্ডার কন্ট্রোল পয়েন্টে চালানো হামলায় কাতাইব হিজবুল্লাহ, কাতাইব সাইয়্যিদ আল সুহাদার (কেএসএস) মতো ইরান সমর্থিত জঙ্গিগোষ্ঠীর বিভিন্ন স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে এখনো হতাহতের সংখ্যার ব্যাপারে সঠিক তথ্য জানা যায়নি। ২০১৪ সাল থেকে আইএস ও আইএসআইএলের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যেতে বিদেশি সেনাদল মোতায়েন করা হয়।
কিরবি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর সদস্যদের রক্ষায় বাইডেন প্রশাসন পদক্ষেপ নেবে—অভিযানের মধ্য দিয়ে এ দ্ব্যর্থহীন বার্তাই পাঠানো হয়েছে। একই সময়ে, আমরা স্বেচ্ছায় কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি; সিরিয়ার পূর্বাঞ্চল ও ইরাকের সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত করাই যার লক্ষ্য।’
মার্কিন হামলার স্থানকে মিলিশিয়ারা অস্ত্র চোরাচালানের কাজে ব্যবহার করত বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। পেন্টাগনের ওই কর্মকর্তা বলেন, ভবিষ্যতে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হামলা করার সক্ষমতা হ্রাস করা এবং বিদ্রোহীদের সাম্প্রতিক হামলা সম্পর্কে বার্তা পাঠাতেই এ হামলা চালানো হয়েছে।
সিরিয়ায় হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত প্রশাসনের একেবারে শীর্ষস্থান থেকে নেওয়া হয়েছে জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেন, সেনাবাহিনীর কোনো সুনির্দিষ্ট সুপারিশের ভিত্তিতে এ হামলা করা হয়নি।
বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে একটি সমঝোতায় আসার চেষ্টা করছে ওয়াশিংটন ও তেহরান। গতকালের হামলা ইরানের কর্মসূচি নিয়ে চলমান ভঙ্গুর সমঝোতা-প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ফেব্রুয়ারির শুরুতে ইরাকে মার্কিন স্থাপনায় রকেট হামলায় এক বেসামরিক কন্ট্রাক্টর নিহত হন। মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের ঘাঁটিতে চালানো ওই রকেট হামলায় এক সেনা ও অপর পাঁচ কন্ট্রাক্টর আহত হয়েছিল। বাগদাদের গ্রিন জোন বলে পরিচিত মার্কিন ঘাঁটিতেও রকেট আঘাত হেনেছে। এই গ্রিন জোনে মার্কিন ও অন্যান্য কূটনৈতিক মিশন অবস্থিত।
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাঈদ খাতিবজাদেহ ইরবিলে ১৫ ফেব্রুয়ারির হামলার সঙ্গে তার দেশের কোনো রকম সংশ্লিষ্টতার কথা নাকচ করে দিয়েছিলেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪২২
আপনার মতামত জানানঃ