গত ৩১ জানুয়ারি কুমিল্লার সদরে প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা ও নির্যাতনের অভিযোগে মো. রনি নামে এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। এরপর থেকেই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন হুমকি দিতে থাকে। হুমকি দেওয়া সত্বেও মামলা তুলে না নেওয়ায় বাদীকে মারধর করেন আসামি। গত মঙ্গলবার(২৩ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে প্রবাসীর স্ত্রীকে ছাত্রলীগ নেতা মারধর করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহত বাদী এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
রনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতির পদে রয়েছেন। তার বাড়ি জেলার সদর উপজেলার বারপাড়া এলাকার কৃষ্ণপুরে। মামলায় রনির মা-কেও আসামি করা হয়েছে। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি বাদী ও অভিযুক্তদের জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সেলে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ দিয়েছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।
রনির বিরুদ্ধে গত ৩১ জানুয়ারি কুমিল্লা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলাটি করেন ওই নারী। তবে বিষয়টি জানাজানি হয় গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে।
তবে মামলার পর রনির বিরুদ্ধে ফের ওই প্রবাসীর স্ত্রীর ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে জেলার সদর উপজেলার বারপাড়া এলাকার কৃষ্ণপুরে এ হামলা ও মারধরের ঘটনা ঘটে।
আহত নারীকে কুমিল্লা জেনারেল (সদর) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় রনি ও তার পরিবারের লোকজনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় আরেকটি অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী।
ওই নারীর মা জানান, তার মেয়েকে বাড়ির সামনে পেয়ে তার ওপর হামলা করা হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই নারী দাবি করেন, ঘটনার পর থেকেই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য রনি হুমকি দিয়ে আসছিল। তার কথামতো মামলা প্রত্যাহার না করায় রনির নেতৃত্বে তার পরিবারের সদস্যরা মঙ্গলবার রাতে আমার ওপর হামলা চালিয়েছে। রাতেই এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করেছি।
অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা রনি বলেন, ওই নারীর কাজই হলো মানুষকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো। তদন্তে সব সত্য বেরিয়ে আসবে।
আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
জানা গেছে, স্বামী প্রবাসে থাকার কারণে এক সন্তানের জননী ওই নারী শিশু সন্তানসহ তার বাবার বাড়িতে বসবাস করছেন। একই এলাকার ছাত্রলীগ নেতা রনি বিভিন্ন সময় তাকে কু-প্রস্তাব দিত। এ নিয়ে অতীতে সালিশ বৈঠক হয়। সালিশ বৈঠকের সিদ্ধান্ত মতে ছাত্রলীগ নেতা রনি আর এই রকম করবে না বলে অঙ্গীকার করে। কিন্তু গত ২৮ জানুয়ারি বিকালে ওই প্রবাসীর স্ত্রীকে বাড়িতে একা পেয়ে ঘরে ঢুকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় ছাত্রলীগ নেতা রনি। এ সময় ওই নারী চিৎকার করলে তাকে মারধরও করে সে। এছাড়া তার কাছে চাঁদাও দাবি করেন রনি। পরে আহত এই নারীকে স্বজনরা উদ্ধার করে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
এরপর গত ৩১ জানুয়ারি রনির বিরুদ্ধে কুমিল্লা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১এ মামলাটি করেন ওই নারী। উভয় পক্ষকে নোটিশ দেয়ার পর বিষয়টি জানাজানি হয়। মামলায় রনির মাকেও আসামি করা হয়েছে।
আদালতের বিষয়টি আমলে নিয়ে কুমিল্লা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের উপ-পুলিশ পরিদর্শক শামছুন নাহার গত ৮ ফেব্রুয়ারি স্বাক্ষরিত এক পত্রে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জকে আসামিদের আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টায় কুমিল্লা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে হাজির করানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। এই পত্রের আলোকে ৯ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ারুল হক থানার এএসআই নাজিম উদ্দিনকে দায়িত্ব দেন।
কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানার চকবাজার ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) নাজিম উদ্দিন বলেন, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ সেলকে নির্দেশ দিয়েছেন। দুই পক্ষকে নোটিশ দিয়ে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দৌরাত্ম্য দিনদিন চাউর হয়ে উঠছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে ক্ষমতার চূড়ান্তে বসবাস করেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ও সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আগ্রহবোধ না করায় তাদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে চলেছে। প্রবাসীর স্ত্রীকে নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি ছাত্রলীগ নেতা রনির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৩৪
আপনার মতামত জানানঃ