ফাইজারের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের তথ্য হ্যাক করতে চেয়েছিল উত্তর কোরিয়া। এজন্য প্রতিষ্ঠানটির তথ্যভাণ্ডারে হানা দিয়েছে দেশটির হ্যাকাররা। টিকা ছাড়াও করোনার চিকিৎসা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল তারা। মঙ্গলবার এক ব্রিফিংয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার আইনপ্রণেতারা এ তথ্য জানান।
দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানি ফাইজারের কাছ থেকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের প্রযুক্তি চুরি করার চেষ্টা করেছিল উত্তর কোরিয়া। তবে কোন তথ্য চুরি হয়ে থাকলেও সেটা কতটুকু সে সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য ফাইজারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা এখনও কিছু জানায়নি।
গত ডিসেম্বরে ফাইজারের জার্মান অংশীদার বায়োএনটেক জানায়, তাদের টিকা সংক্রান্ত নথিগুলোকে সাইবার হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে। ২০২০ সালের নভেম্বরে মাইক্রোসফট করপোরেশন জানায়, রাশিয়ার পাশাপাশি উত্তর কোরিয়ার হ্যাকাররাও করোনা টিকা নিয়ে কাজ করছে এমন সাতটি খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করেছে।
বিশ্বের সঙ্গে প্রায় বিচ্ছিন্ন দেশ উত্তর কোরিয়া অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকলেও তাদের অত্যন্ত আধুনিক সাইবার-ইউনিট রয়েছে। সেখানকার হ্যাকাররা শুধুমাত্র গোপন তথ্য পেতে নয় বরং অর্থের জন্যও নিয়মিত নানা দেশে সাইবার হামলা চালায়। উত্তর কোরিয়া এখন পর্যন্ত দেশটির জনগোষ্ঠীর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরিসংখ্যান বিষয়ে কোন তথ্য জানায়নি। এই হামলার পেছনে উত্তর কোরিয়ার জিঙ্ক অ্যান্ড সেরিয়াম নামের একটি সংস্থা এবং রাশিয়ার ফ্যান্সি বিয়ার দায়ী বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
বিবিসির নিরাপত্তা বিষয়ক প্রতিনিধি গর্ডন করেরা বলেন, মহামারির শুরু থেকে করোনাভাইরাস সংকট মোকাবেলার অংশ হিসেবে কয়েকটি দেশ তাদের হ্যাকারদের নিয়োগ দিতে শুরু করে। এদের মধ্যে কারো কারো কাজ ছিল গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা আবার কারো কাজ ছিল সুবিধা আদায়ের জন্য বুদ্ধিভিত্তিক সম্পদ চুরি করা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে সক্রিয় দেশ হচ্ছে উত্তর কোরিয়া।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই উত্তর কোরিয়ার পাওয়ার কথা রয়েছে। গত বছরের জানুয়ারিতে চীনে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর নিজেদের সীমান্ত বন্ধ করে দেয় উত্তর কোরিয়া। গত বছর যুক্তরাজ্যের জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা কেন্দ্র টিকা উৎপাদনের গবেষণাকে ঘিরে একটি সুরক্ষা বলয় তৈরি করেছিল। চলতি বছর টিকা সরবরাহের প্রক্রিয়া এবং টিকাদান কর্মসূচি সুরক্ষিত করার উপরে জোর দেয়া হয়। আর নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, অদূর ভবিষ্যতে ফার্মাসিউটিক্যালস এবং স্বাস্থ্যখাতই হয়ে উঠবে সাইবার জগতে সম্মুখ যুদ্ধের প্রধান বিষয়।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। চীনে করোনায় প্রথম কোনো রোগীর মৃত্যু হয় ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি। তবে তার ঘোষণা আসে ১১ জানুয়ারি। ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি চীনের বাইরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় থাইল্যান্ডে। পরে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে অদৃশ্য ভাইরাসটি। এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ করোনার টিকা প্রদান শুরু করেছে। বাংলাদেশেও করোনার টিকাদান শুরু হয়েছে।
এসডব্লিউ/বিবি/এফএ/২২০০
আপনার মতামত জানানঃ