এই পৃথিবীর এমন অনেক স্থান আছে যেখানে এতোটাই ঠাণ্ডা পড়ে যে ফ্রিজ কিনতে হয় না। আবার কোন কোন স্থান এতোটাই গরম যে আগুন ছাড়াই রান্না করতে পারবেন। ভূতত্ত্ব অনুযায়ী, পৃথিবীর মাঝ বরাবর বিষুব রেখার কাছাকাছি অঞ্চলগুলোয় গরম বেশি পড়ে। আবার বিষুব রেখা থেকে যে অঞ্চলের অবস্থান যতো দূরে, সেটা ততোই ঠাণ্ডা। সবচেয়ে বেশি ঠাণ্ডা পড়ে উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে।
নাসার আর্থ অবজারভেটরি অনুযায়ী বিভিন্ন অঞ্চলের তাপমাত্রা হিসেব করে পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণ ও সবচেয়ে শীতল স্থানের তালিকা দিয়েছে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম ও বিজনেস ইনসাইডার।
বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম ৫টি স্থান:
১. ইরানের দাস্ত ই লুত মরুভূমি: ইরানের ২০০ মাইল জুড়ে বিস্তৃত এই তপ্ত মরুভূমির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হল এখানে কোন প্রাণের অস্তিত্ব নেই। এই স্থানটি এতোটাই গরম যে এখানে ব্যাকটেরিয়া পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে না। ২০০৫ সালে এখানকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৭১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছিল।
২. ব্যাডল্যান্ডস, কুইন্সল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া: অস্ট্রেলিয়ার এই অঞ্চলে তীব্র গরমের কারণে খুব কম মানুষ বসবাস করে। খরা এই অঞ্চলের নিয়মিত দুর্যোগ। এই অঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৬৮ থেকে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে।
৩. চীনের দ্য ফ্লেমিং মাউন্টেইন: চীনের জিনজিয়ান রাজ্যের তাকলিমাকান মরুভূমি এবং তিয়ান শান পর্বতশ্রেণীর প্রান্তে এর অবস্থান। এই পর্বতটি লাল বেলেপাথরে বেষ্টিত। যা চীনের সবচেয়ে উষ্ণতম স্থান বলে জানা গেছে। এখানকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৬৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত রেকর্ড করা হয়েছে।
৪. যুক্তরাষ্ট্রের ডেথ ভ্যালি: উত্তর আমেরিকার মোজাভে মরুভূমির কাছেই ডেথ ভ্যালির অবস্থান। এটি বিশ্বের অন্যতম গরম আর শুষ্ক স্থান। এখানে গরম এতোটাই বেশি আগুন না জ্বালিয়েই রাস্তায় কড়াই ফেলে ডিম ভাজতে পারবেন। এখানকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৫৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
৫. আরব উপত্যকার রুব, আল খালি: আরব উপত্যকার একতৃতীয়াংশ জুড়ে রয়েছে এই মরুভূমির অবস্থান। সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান ও ইয়েমেন- এই চারটি আরব দেশজুড়ে রয়েছে দীর্ঘতম এই বালির মরুভূমি। এখানকার আবহাওয়া ভীষণ শুষ্ক ও উত্তপ্ত। এই অঞ্চলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৫৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
বিশ্বের শীতলতম ৫টি স্থান:
১ রাশিয়ার ভার্খোয়ানস্ক: রাশিয়ার সাখা প্রজাতন্ত্রের ভার্খোয়ানস্ক শহরে শীতকালে ভয়াবহ ঠাণ্ডা পড়ে। তবে এই শহরের শীত এবং গ্রীষ্মের আবহাওয়ার ব্যাপক তারতম্য হয়। শীতকালে এই অঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা -৬৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে আবার গরম কালে তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে যায়। সেই হিসেবে এই অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা -৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে এই শহরে মাত্র ১৩০০ মানুষ বসবাস করে।
২ গ্রিনল্যান্ডের আইজমিট: গ্রিনল্যান্ডের আইজমিট শহর উত্তর গোলার্ধের সবচেয়ে শীতল স্থান। জার্মান ভাষায় আইজমিট বলতে বরফের কেন্দ্র বোঝানো হয়। এই শহরের গড় তাপমাত্রা -৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। শীতকালে এখানকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা -৬৬ ডিগ্রি এবং গরম কালের তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠে।
৩ যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা: যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় আলাস্কা শহরের ডেনালী পর্বত চূড়ায় সবচেয়ে বেশি ঠাণ্ডা পড়ে। এখানকার তাপমাত্রা ১৮ বছর আগে -৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। একই বছর এই চূড়ার তাপমাত্রা -৮৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে।
৪ কানাডার ফোর্ট সেলকির্ক: কানাডার পুরনো এই বাণিজ্য এলাকাটি ইউকন ও পেলি নদীর সংযোগস্থলে অবস্থিত। এখানে সেলকির্ক ‘ফাস্ট ন্যাশন’ নামের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল। এই স্থানটিতে জনমানব নেই বললেই চলে। এখানকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা -৫৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
৫ এন্টার্কটিকার ভোস্তোক: রাশিয়ার একটি গবেষণা কেন্দ্রর জন্য ভোস্তোক শহরটি বেশ পরিচিতি পেয়েছে। যদিও তীব্র ঠাণ্ডার কারণে শহরটি বসবাসের উপযোগী নয়। এখানে সারা বছর তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে থাকে। ভোস্তোক শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা -৮৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
সূত্র : বিবিসি
এসডব্লিউ/বিবিসি/এমআর/১৪২৯
আপনার মতামত জানানঃ