আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরও একতরফাভাবে ফিলিস্তিনের ওপর অব্যাহত বিমান ও স্থল হামলা, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা এবং খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহে বাধা দিয়ে যাচ্ছে। এই নৃশংসতা সুস্পষ্ট মানবতাবিরোধী অপরাধ। সব মানবতাবাদী দেশকে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর অব্যাহত নিপীড়ন বন্ধ করতে কার্যকর রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনকে সমর্থন করতে আহ্বান জানায় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘ইসরায়েলের এই নৃশংস কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা এবং দোষীদের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের আওতায় আনার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আরব বিশ্ব, জাতিসংঘ, পশ্চিমা বিশ্বসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানাচ্ছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। এসব ঘৃণ্য জুলুমে যারা অর্থ, অস্ত্র এবং সমর্থন দিচ্ছেন, তাদের সে সমর্থন বন্ধ করারও আহ্বান জানাচ্ছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।’
‘রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন মনে করে ইসরায়েলের বন্ধুদেরও আজকে স্বীকার করতেই হবে, ফিলিস্তিনে যা হচ্ছে, সেটা কোনো যুদ্ধ না। এটা স্রেফ একটা জাতিনিধন কর্মসূচি। এই স্বীকারোক্তি আদায় সংকট সমাধানের একটি প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এ লক্ষ্যে ড. ইউনুসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকারকে উদ্যমী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাচ্ছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন’, বিজ্ঞপ্তিতে যোগ করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশের অনেক মিডিয়া ভিউ ব্যবসার অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনে এই জাতিনিধন কর্মসূচিকে একটা যুদ্ধ হিসেবে তুলে ধরেন। এতে তারা ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হয়, তাদের পশ্চিমা প্রভুরা খুশি হয়। কিন্তু ফিলিস্তিনের ওপর বিপদ বাড়ে এবং বাংলাদেশের ওপরও বিপদের আশঙ্কা বাড়ে।’
যুদ্ধবিরতির ‘স্বস্তি’ সঙ্গে নিয়ে ঘর নামের বিধ্বস্ত স্তূপে ফিরে আসা গাজার অনেক বাসিন্দা ওই রাতে ছিলেন গভীর ঘুমে। কেউ কেউ সেহরির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সেই সময় ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান থেকে ফেলা ‘যুক্তরাষ্ট্রের নামাঙ্কিত’ একের পর এক বোমায় হতাহত হতে থাকেন নারী-শিশুসহ সব বয়সী ফিলিস্তিনি। রাতের অন্ধকারে রক্তাক্ত মানুষের আর্তচিৎকার আর আতঙ্কিতদের দিগ্বিদিক ছোটাছুটিতে আবারও ‘দোজখ’ নেমে আসে এ উপত্যকায়। নির্বিচার হামলায় হাতে হাতে সন্তানের ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহ নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটতে শুরু করেন অভিভাবকরা। পরে হোয়াইট হাউস জানায়, গাজায় এ হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করেছিল ইসরায়েল।
ওই রাতে গাজার দক্ষিণে খান ইউনিস ও রাফা, উত্তরে গাজা সিটি এবং মধ্যাঞ্চলের দেইর আল-বালাহসহ প্রায় সব জায়গায় যুদ্ধবিমান ও ড্রোন থেকে চালানো বোমা হামলায় ৪০৪ ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার কথা জানায় গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়; এর মধ্যে ছিল ১৮৩ শিশু ও ৯৪ নারী।
এমন ধ্বংসযজ্ঞ চলাকালে গাজার এক মসজিদ থেকে ক্রন্দনরত মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ফজরের আজানের ভিডিও সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিপন্ন-বিষাদের ওই ভোর পেরিয়ে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তাক্ত-মৃত-আহত শিশুদের লাশের ছবি ও ভিডিওতে ছেয়ে যেতে থাকে নিউজফিড। এর কোনো এক ভিডিওতে মেয়েকে হারানো বিলাপরত মাকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার মেয়ে ক্ষুধার্ত ছিল। সেহরির জন্য ঘরে খাবার ছিল না। ও ক্ষুধার্ত অবস্থাতেই মারা গেছে।’
গাজার আরেক বাসিন্দা মোমেন কোরেইকেহ গণমাধ্যমকে জানান—এ হামলায় নবজাতক, নারী-শিশুসহ পরিবারের ২৬ জন সদস্যকে হারিয়েছেন তিনি।
এদিকে গতকাল বুধবারও গাজার কয়েকটি জায়গায় চালানো হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা বেড়ে ৪৩৬ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র খালিল আল-দাকরান আল জাজিরার আরবি বিভাগকে জানান, এসব হামলায় অন্তত ৯০০ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। প্রাথমিক চিকিৎসার অভাব, জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ওষুধের সংকটের কারণে অনেক আহত ব্যক্তি মারা গেছেন।
যুদ্ধবিরতির মধ্যে গাজায় এমন হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘসহ কয়েকটি দেশ ও সংস্থা। নিজ দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাসীনদের চোখ রাঙানি এড়িয়ে ইসরায়েলবিরোধী প্রতিরোধের অনন্য নজির গড়ে যাচ্ছেন অনেক শুভবোধসম্পন্ন ইহুদি। খণ্ড-খণ্ডভাবে বিশ্বের নানা প্রান্তে চলছে প্রতিবাদ। তাতে শামিল হচ্ছেন এই গণহত্যায় প্রত্যক্ষ সমর্থন দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। এগুলোর মধ্যেই আজ বৃহস্পতিবার থেকে গাজায় স্থল অভিযান বাড়ানোর কথা জানিয়েছে ইসরায়েল।
আপনার মতামত জানানঃ