মানুষের ভাষার সূচনা কবে থেকে? এ প্রশ্ন সবার মনেই কখনো না কখনো এসেছে, যা মানুষের অতীত সম্পর্কে গভীর এক প্রশ্ন।
নতুন গবেষণা বলছে, এক লাখ ৩৫ হাজার বছর আগেও মানুষের ভাষা ব্যবহারের সক্ষমতা ছিল। তবে সামাজিক পর্যায়ে মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠতে আরও ৩৫ হাজার বছর সময় লেগেছিল ভাষার।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীতে মানুষ অর্থাৎ হোমো স্যাপিয়েন্স-এর আগমন ঘটেছে প্রায় দুই লাখ ৩০হাজার বছর আগে।
জীবাশ্ম ও প্রাচীন যন্ত্রপাতি বা হাতিয়ার বিশ্লেষণ করে ভাষা কবে থেকে শুরু হয়েছিল তা জানার চেষ্টা করেছেন বিজ্ঞানীরা। তবে তারা এই নতুন গবেষণায় ভিন্ন এক পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
গবেষণায় আদি মানুষের জেনেটিক তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা জানতে পেরেছেন, কবে থেকে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল প্রাথমিক পর্যায়ের বিভিন্ন মানব গোষ্ঠী।
সব ধরনের মানব গোষ্ঠীই বর্তমানে ভাষা ব্যবহার করে। বিজ্ঞানীদের অনুমান, বিভক্ত বা ছোট ছোট ভাগে ভাগ হওয়ার আগে আমাদের পূর্বপুরুষদেরও একটি ভাষা ছিল।
“সব মানব গোষ্ঠীরই নিজস্ব ভাষা রয়েছে এবং সব ভাষারই একে অপরের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। মানবগোষ্ঠীর প্রথম বড় বিভাজন ঘটেছিল প্রায় এক লাখ ৩৫ হাজার বছর আগে। তাই আমাদের ভাষা সক্ষমতা তার আগেই ছিল,” বলেছেন এই গবেষণার একজন সহ লেখক ও ‘ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’ বা এমআইটি’র অধ্যাপক শিগেরু মিয়াগাওয়া।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘ফ্রন্টিয়ার্স ইন সাইকোলজি’-তে। গবেষণায় গত ১৮ বছরের আগের ১৫টি জেনেটিক গবেষণা খতিয়ে দেখেছেন গবেষকরা।
এ গবেষণায় ওয়াই ক্রোমোজোম, মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ ও সম্পূর্ণ জিনোম’সহ মানবদেহের বিভিন্ন ধরনের ডিএনএ নিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন তারা।
গবেষকরা বলছেন, প্রায় এক লাখ ৩৫হাজার বছর আগে আদিম মানুষ ছড়িয়ে পড়ার আগেও একটি একক মানব গোষ্ঠী ছিল, যা এ ধারণাকে সমর্থন করে যে, সেই সময়ে ওই মানব গোষ্ঠীর ভাষা ছিল।
অধ্যাপক মিয়াগাওয়া’র দাবি, সব ধরনের মানব ভাষা একই উৎস থেকে এসেছে। বিভিন্ন ভাষার মধ্যে মিল খুঁজতে ইংরেজি, জাপানি ও কিছু আফ্রিকান ভাষা নিয়ে গবেষণা করেছেন তিনি। বর্তমানে গোটা বিশ্বে সাত হাজারেরও বেশি ভাষা রয়েছে, যাদের সকলেরই রয়েছে কিছু মৌলিক কাঠামো।
কিছু বিজ্ঞানীর ধারণা, ভাষা লাখ লাখ বছরের পুরানো, যা আদিম প্রাইমেটদের শব্দ তৈরির ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে তৈরি। তবে মিয়াগাওয়া যুক্তি দিয়েছেন, মানুষের ভাষা অনন্য। কারণ, শব্দ ও ব্যাকরণকে উন্নত এক পর্যায়ে একসঙ্গে করেছে ভাষা। মানুষের জটিল চিন্তাভাবনা তৈরিতে ও একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতেও সাহায্য করে ভাষা, যা অন্য কোনও প্রজাতি পারে না।
গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, মানুষ একে অপরের সঙ্গে কথা বলা শুরুর আগে ভাষা কেবল মানুষের মনের মধ্যেই ছিল। এক লাখ ৩৫ হাজার বছর আগে কোনও এক সময়ে, মানুষের হয়তো শব্দের মাধ্যমে চিন্তা করার সক্ষমতা ছিল, তবে যোগাযোগের জন্য তখনও ভাষার ব্যবহার করেনি তারা।
অবশেষে এ ব্যক্তিগত চিন্তা ব্যবস্থা এক সময় সামাজিক হাতিয়ার হয়ে ওঠে, যা জন্ম দিয়েছে আমাদের এই পরিচিত ভাষার।
এই ধারণাকে সমর্থন করে প্রত্নতাত্ত্বিক রেকর্ডও। প্রায় এক লাখ বছর আগে খোদাই ও রঞ্জক ব্যবহারের মতো প্রতীকী কার্যকলাপে জড়িত হতে শুরু করে মানুষ। এসব কাজ তাদের উন্নত চিন্তাভাবনারই ইঙ্গিত দেয়, যা সম্ভব হয়েছে ভাষার মাধ্যমে। মিয়াগাওয়া বলেছেন, মানব অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে ভাষা।
“আধুনিক মানব আচরণের সূত্রপাত ঘটিয়েছে ভাষা। মানুষকে জ্ঞান ভাগ করে নিতে, একে অপরের কাছ থেকে শিখতে ও নতুন ধারণা বিকাশের সুযোগ করে দিয়েছে ভাষা।”
আপনার মতামত জানানঃ