তারহীন বিদ্যুৎ প্রবাহের স্বপ্ন দেখেছিলেন বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলা। ১৮৯১ সালে তাঁর আবিষ্কৃত টেসলা কয়েল হলো বিশ্বের প্রথম তারহীন বিদ্যুৎ প্রবাহের যন্ত্র।তবে অদ্ভুত সব পরীক্ষায় টেসলা কয়েল ব্যবহার শুরু করেন বিজ্ঞানীরা। বর্তমানে বেতার প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিজ্ঞানের কিছু যন্ত্রপাতির অতি প্রয়োজনীয় একটি যন্ত্রাংশ টেসলা কয়েল।এ যন্ত্র বিদ্যুৎ শক্তিকে অতি উচ্চ বৈদ্যুতিক চার্জে রূপান্তর করে। এই চার্জ শক্তিশালী বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বৈদ্যুতিক বজ্র তৈরি করে।
বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলা একসময় যে ভবিষ্যতের কল্পনা করেছিলেন, তা বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে। টেসলার এক শতাব্দীরও বেশি সময় পর তারবিহীন বিদ্যুৎ স্থানান্তরের প্রযুক্তি এখন বাস্তবায়নের দোরগোড়ায়।
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তারবিহীন বিদ্যুৎ প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েভ ইনক., জাপানের স্পেস পাওয়ার টেকনোলজিস এবং নিউজিল্যান্ডের এমরড-এর মতো প্রতিষ্ঠান মাইক্রোওয়েভ ও লেজার-ভিত্তিক শক্তি সংক্রমণ এবং মহাকাশ থেকে সৌরশক্তি প্রেরণের মতো উদ্ভাবনী প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে।
ইতোমধ্যেই নিউজিল্যান্ডে এমরড-এর তারবিহীন বিদ্যুৎ অবকাঠামো পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে, যা দুর্গম অঞ্চলে পরিবেশবান্ধব শক্তি সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এছাড়া, ইলেকট্রিক গাড়ির (ইভি) জন্য তারবিহীন চার্জিং ব্যবস্থা, এমনকি রাস্তার নিচে চার্জিং প্রযুক্তির উন্নয়নও এগিয়ে চলেছে, যা বৈদ্যুতিক যানবাহন ব্যবহারের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে।
তবে, এখনও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। জনসাধারণের মধ্যে নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় রয়েছে, পাশাপাশি প্রযুক্তির দক্ষতা এবং খরচও বড় একটি বিষয়।
তা সত্ত্বেও ক্যালটেক ও পারডু বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শীর্ষ গবেষণা প্রতিষ্ঠান তারবিহীন বিদ্যুৎ প্রকল্পের ওপর ব্যাপক গবেষণা চালাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ইন্ডাকটিভ চার্জিং, মহাকাশ-ভিত্তিক সৌর শক্তি এবং রেকটেনা-চালিত বিদ্যুৎ গ্রিড প্রযুক্তি টেসলার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে সাহায্য করবে।
সফল হলে এই প্রযুক্তি প্রচলিত বিদ্যুৎ গ্রিডের সীমাবদ্ধতা দূর করে শিল্পখাতের চেহারা পাল্টে দিতে পারে এবং টেকসই শক্তির এক নতুন যুগের সূচনা করতে পারে।
একটা সময় আসতে পারে, যখন বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য প্লাগ ইন করার দরকারই পড়বে না—শুধু সুইচ অন করলেই মিলবে শক্তি!
২০২১ সালে নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিদ্যুৎ বিতরণকারী কোম্পানি পাওয়ারকো এমরোদের প্রযুক্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। এই পাইলট প্রোগ্রামে ১৩০ ফুট দূরত্বে ওয়্যারলেস বিদ্যুৎ স্থানান্তরের প্রোটোটাইপ স্থাপন করা হয়েছে। এমরোদ রেক্টিফাইং অ্যান্টেনা বা রেক্টেনা ব্যবহার করে, যা মাইক্রোওয়েভের মাধ্যমে বিদ্যুৎ এক ওয়েপয়েন্ট থেকে অন্য ওয়েপয়েন্টে প্রেরণ করে। এই প্রযুক্তিটি নিউজিল্যান্ডের পার্বত্য এলাকার জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। বিশেষায়িত স্কোয়ার উপাদানগুলো মধ্যবর্তী পোলগুলোতে স্থাপন করা হয়, যা বিদ্যুৎ প্রবাহকে অবিচ্ছিন্ন রাখে এবং একটি বিস্তৃত পৃষ্ঠ এলাকা বিদ্যুতের সম্পূর্ণ তরঙ্গ সরবরাহ বজায় রাখে।
এমরোদের প্রযুক্তি দুটি প্রধান উপাদান ব্যবহার করে বিদ্যুতের বিমকে সংকীর্ণ এবং ফোকাসড রাখে। প্রথমটি ট্রান্সমিশন-সম্পর্কিত : ছোট রেডিও উপাদান এবং একক তরঙ্গ প্যাটার্ন একটি সমান্তরাল বিম তৈরি করে, যা বিস্তৃত হয় না। দ্বিতীয়ত এমরোদ ইঞ্জিনিয়ার্ড মেটামেটেরিয়াল ব্যবহার করে, যা রেডিও তরঙ্গের সাথে কার্যকরভাবে ইন্টারঅ্যাক্ট করে।
এমরোদের ওয়্যারলেস অ্যান্টেনাগুলো একটি কেবলের মতো করে কাজ করে। এটির কাজ হলো কেবল বিদ্যুৎ সরবরাহকে গ্রাহকের সাথে সংযুক্ত করা। এই প্রযুক্তি দীর্ঘ দূরত্বের জন্য প্রচলিত তামার তারের প্রয়োজনীয়তা দূর করে, যা পরিবেশগত সুফলও বয়ে আনতে পারে। কেননা অনেক দূরবর্তী এলাকায় ডিজেল জেনারেটরের উপর নির্ভর করতে হয়।
আপনার মতামত জানানঃ