দিল্লির দুপুর, বাইরের গরম বাতাসও যেন ঘরের ভিতরে ঢুকে পড়েছে। ভারী পর্দা টানা একটা রুমের ভিতরের একটি রুমে বসে আছে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। তার চেহারায় কোন অনুশোচনা নেই। চোখে মুখে এখনো আত্মবিশ্বাস। বিপরীত দিকে সোফায় বসে থাকা ব্যক্তি সন্তষ্টির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন হাসিনার দিকে। এই ব্যক্তি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। ভারতীয় হিন্দুত্ববাদীদের কাছে তিনি দেবতা, প্রতিবেশী দেশগুলোর কাছে ষড়যন্ত্রের মাস্টার মাইন্ড।
মোদির ডান হাত দোভালের চোখেমুখে তৃপ্তির ছাপ। সবকিছু পরিকল্পনা মাফিক আগাচ্ছে। শেখ হাসিনা হাল ছাড়েননি। বরং এখনো তার নেতিবাচক চাল চালছে। তবে প্রশ্ন একটাই, কীভাবে এত দৃঢ় ও নির্লিপ্ত আছেন হাসিনা। জবাবটা জানে অজিত দোভাল। সবটাই তাদের পরিকল্পনার ফল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শেখ হাসিনার এই আত্মবিশ্বাসের পিছনে ৩টি বড় কারণ রয়েছে। মোদি সরকারের সরাসরি সহযোগিতা শেখ হাসিনাকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিচ্ছে ভারত। মোদি সরকারের একটি অংশ মনে করে, শেখ হাসিনা ভারতের পরীক্ষিত বন্ধু। তাই তাকে পুনরায় ক্ষমতায় আনার পরিকল্পনা এখনো টেবিলে আছে।
মানসিক প্রস্তুতি ও ট্রেনিং। শেখ হাসিনাকে এমনভাবে বোঝানো হচ্ছে, যেন কিছুই হয়নি। যেন তিনি এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। ভারতে তাকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের সাথে বসিয়ে ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে, যেন আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে পারে।
গোপন রাজনৈতিক সমর্থন। দিল্লির ভিতরে একটি অংশ এখনো মনে করে শেখ হাসিনা এখনো তাদের জন্য দরকারি। তারা চান বাংলাদেশের ক্ষমতা পালাবদলের ক্ষেত্রে তিনি কোনো না কোনো ভাবে তিনি নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখুন। তাই কৌশলগতভাবে তাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালী একদল নেতা ও নীতিনির্ধারক।
এত কিছুর পরেও, বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলছে। বাংলাদেশের জনগণ কি হাসিনাকে তাকে ফিরে আসতে দিবেন?
ভারত বহুবার বাংলাদেশে তাদের কৌশলগত প্রভাব ধরে রাখতে নির্দিষ্ট কিছু নেতাকে সমর্থন করেছে৷ শেখ হাসিনা ছিলো তাদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি৷
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের উচিত শেখ হাসিনাকে নিয়ে নতুন করে ভাবা। যদি তারা আবারও হাসিনাকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে তবে তা হবে বিশাল ভুল। কারণ, বাংলাদেশের জনগণ আগের থেকে রাজনৈতিকভাবে বেশি সচেতন। ভারতীয় প্রভাবের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তরুণ সমাজ বেশি সরব।
শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের ভিতরে চরম সঙ্কট তৈরি হয়েছে। শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। হাসিনার প্রতি যারা আনুগত্য দেখাতেন তারা এখন দোটানায় পড়েছেন। দলের শীর্ষ নেতারা বিস্মিত। তাদের একবারও জানিয়ে যাননি শেখ হাসিনা। বড় নেতাদের অনেকে মনে করছেন, শেখ হাসিনা তাদের এক রকম ছেড়ে চলে গেছেন।
আপনার মতামত জানানঃ