বেলাগাম হিংসায় জর্জরিত ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্য মণিপুর। বিভিন্ন জায়গায় দেখা দিয়েছে জনরোষ। ক্ষোভের আগুনে পুড়ছে একাধিক জায়গা। রাজ্যের মন্ত্রী বিধায়করাও সেই জনরোষ থেকে বাদ যাচ্ছেন না। সেই হিংসা সামাল দিতে এবার আরো ৫০ কোম্পানি সিআরপিএফ জওয়ান পাঠানো হচ্ছে। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা সেখানে অভিযান চালাবে নিরাপত্তাবাহিনী।
সোমবার এই ইস্যুতে হাইভোল্টেজ বৈঠকে বসেছিলেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তার পরই প্রকাশ্যে এল এই তথ্য। তিনি সিআরপিএফ ডিজি অনীশ দয়াল সিংকে, যিনি আইপিএস-এর মণিপুর ক্যাডারের অন্তর্গত, একটি গ্রাউন্ড অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট পাঠাতে এবং সেখানকার বাহিনীর সাথে সমন্বয় করতে ইম্ফলে পাঠিয়েছিলেন।
সূত্রের খবর, কেন্দ্রের তরফে আধাসেনাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অল আউট অভিযানে নামার। যে সব বিদ্রোহীরা এখানে সক্রিয় তাঁদের প্রত্যেককে আটক করার এমনকি প্রয়োজনে নিকেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সশস্ত্র বিদ্রোহীদের কাছে কী কী অস্ত্র রয়েছে, তাদের ঠিকানা কোথায় সে সব তথ্য জানতে গোয়েন্দা বিভাগ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
মায়ানমার সীমান্তের পাশাপাশি জায়গায় জায়গায় তল্লাশি অভিযান চালাবে নিরাপত্তাবাহিনী। কড়া হাতে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আধাসেনাকে। প্রয়োজনে নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা কর্মীদের সংখ্যা বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। গত ৭ নভেম্বর থেকে নতুন করে ফের একবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মণিপুর। বিশেষ করে এই অঞ্চলের জিরিবাম জেলা।
এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে এখানে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে গত ১৪ নভেম্বর, নতুন করে লাগু হয়েছে আফস্পা। এমনকি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। এখানে ২০ কোম্পানি আধাসেনা আগে থেকেই মোতায়েন করেছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। এবার আরও ৫০ কোম্পানি আধাসেনা অর্থাৎ, ৫ হাজার সিআরপিএফ মোতায়েন করা হল এই রাজ্যে।
মণিপুরের পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসন ব্যর্থ এমন অভিযোগ তুলে রবিবার বীরেন সিং সরকারের উপর থেকে সমর্থন তুলে নেয় মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার দল ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)। মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে ঘরে-বাইরে চাপের মুখে সে রাজ্যের বিজেপি সরকার। সোমবার সন্ধ্যা ৬টায় সচিবালয়ে বৈঠকের ডাক দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং। মণিপুর প্রশাসনের একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, মূলত দু’টি বিষয় নিয়ে বৈঠক উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সিংহভাগ বিধায়ক কুকি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আর্জি জানান।
এর পাশাপাশি মেইতেই অধ্যুষিত ইম্ফল উপত্যকার ছ’টি থানায় সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা ‘আফস্পা’ প্রত্যাহারের আর্জি জানান ওই বিধায়কেরা। প্রস্তাব আকারে নিজেদের এই দুই দাবি তুলে ধরার পর এনডিএ-র বিধায়কেরা হুঁশিয়ারির সুরে জানান, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কেন্দ্র তাদের কথা মেনে না-নিলে জনগণের পরামর্শ নিয়ে তারা ভবিষ্যতের কর্মপন্থা স্থির করবেন।
আপনার মতামত জানানঃ