প্রেম ও ভালোবাসার প্রতীকের বাইরে গোলাপের পরিচিতি তার সৌন্দর্য এমনকি তীক্ষ্ণ কাঁটার জন্যও। শুধু গোলাপের যে এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আছে তা নয়, মাকড়সা ফুল বা ব্র্যাম্বল, রাস্পবেরি ও ব্ল্যাকবেরির গুল্মজাতীয় গাছেও রয়েছে সুতীক্ষ্ণ কাঁটা।
টমেটো, বেগুন, বার্লি এবং ধানের মতো কিছু সবজি ও ফসলের গাছেও থাকে কাঁটা বা এ-জাতীয় সুরক্ষা। এসব উদ্ভিদ প্রজাতির মধ্যে অনেক লাখ লাখ বছর ধরে আলাদাভাবে বিবর্তিত হয়েছে।
কিভাবে তাদের মধ্যে একই ধরনের কাঁটার বৈশিষ্ট্য এলো তা বিজ্ঞানীদের কাছে এক বড় প্রশ্ন। বৃহস্পতিবার ‘সায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণায় সম্ভবত তার জবাব মিলেছে। গবেষণাটি পরিচালনা করা আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল দেখতে পেয়েছে, এই প্রশ্নের জবাব নিহিত তাদের ডিএনএতে। একটি প্রাচীন জিন পরিবার থেকেই এসব প্রজাতির কাঁটার উৎপত্তি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই গবেষণার ফল কাঁটাহীন বিকল্প উদ্ভিদের জাত সৃষ্টির দরজা খুলে দিতে পারে। পাশাপাশি বেশ কিছু গণের উদ্ভিদের বিবর্তনের ব্যাপারে অন্তর্দৃষ্টিও জোগাতে পারে।
গোলাপের কাঁটা গঠনের দিক থেকে হানি লোকাস্ট ও সাইট্রাসসহ কিছু গাছের চেয়ে আলাদা। গোলাপের কাঁটা উঠে আসে গাছের ত্বক থেকে, যেমন করে প্রাণীর শরীরে চুল গজায়।
উদ্ভিদের কাঁটা এসেছে কমপক্ষে ৪০ কোটি বছর ধরে। ওই সময় ফার্ন (ঢেঁকিশাক জাতীয় উদ্ভিদ) এবং তাদের গোত্রের বিভিন্ন উদ্ভিদ এসেছিল পৃথিবীতে। তাদের কারো কারো কাণ্ডে কিছু কাঁটা ছিল। গবেষণার সহলেখক জ্যাকারি লিপম্যান বলেছেন, উদ্ভিদের মধ্যে কাঁটার এই বৈশিষ্ট্যটি তখন থেকে বিবর্তনের বিভিন্ন পর্যায়ে এসেছে এবং চলে গেছে। লিপম্যান একজন উদ্ভিদ জীববিজ্ঞানী এবং নিউ ইয়র্কের লং আইল্যান্ডের কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরির জেনেটিক্স বিষয়ের অধ্যাপক।
সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদ বর্গের একটি হচ্ছে সোলানাম। এর মধ্যে রয়েছে আলু, টমেটো ও বেগুনের মতো উদ্ভিদ, যাতে প্রথম কাঁটা আসে ৬০ লাখ বছর আগে। ইউটা ইউনিভার্সিটির তথ্য মতে, আজ বিশ্বজুড়ে এই বর্গের এক হাজারটিরও বেশি প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০০টিকে তাদের কাঁটার জন্য বলা হয় ‘স্পাইনি সোলানাম’। উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলেন, অনেক সময় বিভিন্ন আলাদা গণ ও প্রজাতি জুড়ে কাঁটার মতো অভিন্ন বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। যখন বিভিন্ন প্রজাতি নির্দিষ্ট পরিবেশগত প্রয়োজনের সঙ্গে একইভাবে খাপ খাইয়ে নেয়, তখন এমনটি ঘটে।
আপনার মতামত জানানঃ