২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার যে লক্ষ্য তার এক বছর আগেই, অর্থাৎ ২০৪০ সালের মধ্যে দেশ থেকে তামাক নির্মূলের ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই লক্ষ্য পূরণ কতটা সম্ভব?
২০১৬ সালের ৩১শে জানুয়ারি এই ঘোষণা দেয়ার পর পেরিয়ে গেছে ৮ বছর৷ এর মাঝে এই ঘোষণার বাস্তবায়নের কাজ কতটা হয়েছে?
এই ঘোষণা বাস্তবায়নে অগ্রগতি তেমন একটা হয়নি বলে মনে করছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং জাতীয় তামাকবিরোধী মঞ্চের আহ্বায়ক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ৷
তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, এই ধারা যদি চলতে থাকে, তাহলে ৪১ সালে তো হবেই না, আরো ৪১ বছরেও হবে না৷ তামাক নির্মূলে তিনটি ধাপের কথা উল্লেখ করেন তিনি৷ নিয়ন্ত্রণে আনা, কমিয়ে আনা এবং নির্মূল করা৷ তিনি বলেন, ‘‘ধাপে ধাপে সেখানে যেতে হবে৷”
তামাকবিরোধী বেসরকারি সংস্থা ‘প্রগতির জন্য জ্ঞান বা প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, ‘‘তামাক নির্মূলের একটি বৈশ্বিকভাবে গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা আছে৷ তামাক নির্মূল মানে তামাকের ব্যবহার শূন্যে নামিয়ে আনা নয়৷ কোনো দেশে তামাকের ব্যবহার ৫শতাংশের নিচে নেমে এলেই সেটাকে আমরা তামাকমুক্ত দেশ বলতে পারি৷”
তিনি বলেন, ‘‘ধোঁয়াযুক্ত ও ধোঁয়ামুক্ত তামাকের ব্যবহারকারী এখন ৩৫শতাংশের মতো৷ এর বাইরে সাম্প্রতিক সময়ে ই-সিগারেটের ব্যবহার বাড়ছে৷ এইসব কিছু মিলিয়ে তামাকের ব্যবহার ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে পারলে আমরা বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত দেশ বলতে পারবো৷’’
২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নেও রয়েছে তামাক নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব৷ লক্ষ্যমাত্রা ৩-এ সকল বয়সি সকল মানুষের জন্য সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিতকরণে বলা হয়েছে, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, সকল দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন বাস্তবায়ন জোরদার করা৷
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রচলিত আইন অনুসারে ‘‘বিড়ি, সিগারেট, চুরুট, গুল, জর্দ্দা, খৈনি, সাদাপাতা, সিগার এবং হুক্কার মতো তামাক, তামাক পাতা বা উহার নির্যাস হইতে প্রস্তুত যে কোনো দ্রব্যকে তামাক পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷”
তামাকমুক্ত দেশ গড়তে সবগুলোর ব্যবহার ৫ শতাংশের নিচে নিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশসহ অনেক দেশে তামাকের তথ্য-উপাত্তের জন্য নির্ভর করতে হয় গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোবাকো সার্ভের উপর৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ তার সহযোগীরা বাংলাদেশে ২০০৯ ও ২০১৭ সালে মোট দুই বার এই সার্ভে করে৷
সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, বাংলাদেশের ৩ কোটি ৭৮লাখ মানুষ কোনো না কোনোভাবে তামাক ব্যবহার করে৷ এদের মধ্যে ১ কোটি ৯২ লাখ মানুষ সিগারেট, বিড়ির মতো ধোঁয়াযুক্ত তামাক ব্যবহার করে ৷ আর ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ গুল-জর্দার মতো ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করে৷
২০০৯ সালের রিপোর্টের সাথে মিলিয়ে দেখলে অবশ্য পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি চোখে পড়বে৷ ২০০৯ সালে দেশের মোট জনসংখ্যার ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ তামাক ব্যবহার করতো, ২০১৭ সালে যা কমে দাঁড়ায় ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ৷
পরোক্ষ ধূমপান সম্পর্কে এই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে কর্মক্ষেত্রে ৪২ দশমিক ৭ শতাংশ, ঘরে ৩৯শতাংশ এবং জনপরিসরে ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়৷ মহামারি সংক্রান্ত নানা গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে এতে বলা হয়, পরোক্ষ ধূমপানের ফলেও ফুসফুসের ক্যান্সার, হৃদরোগসহ নানা রোগ হতে পারে৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে মিলে বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি একটি গবেষণা করে৷ ‘দ্য ইকোনোমিক কস্ট অব টোবাকো ইউজ ইন বাংলাদেশ: এ হেলথ কস্ট অ্যাপ্রোচ’-শীর্ষক গবেষণায় অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা দেয় অ্যামেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি ও ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে৷
এই গবেষণায় বলা হয়, তামাক ব্যবহারের কারণে ২০১৮ সালে ১ লাখ ২৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়৷ এই সংখ্যাটি ২০২১ সালে করোনা ভাইরাসে মৃত্যুবরণকারী মানুষের সংখ্যার তুলনায় চারগুণেরও বেশি৷
গবেষণায় আরো বলা হয়, তামাকের ব্যবহারজনিত নানা রোগে ভুগছে ১৫ লাখ মানুষ৷ এর বাইরে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়ে ৬১ হাজার শিশু ভুগছে নানা রোগে৷ তামাকজনিত মৃত্যু ও অসুস্থতায় বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ৩০৫ দশমিক ৬ বিলিয়ন টাকার দায় শোধ করতে হয়৷
বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণের লড়াই: ফিরে দেখা
জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের এক নথিতে বলা হয়, ১৯৮৮ সালে তামাকের মোড়কে ‘সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর’-এর মত লিখিত স্বাস্থ্য সতর্কবাণীর প্রচলন করা হয়৷ সেই সাথে সরকারি গণমাধ্যমে তামাকের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হয়৷
তামাকবিরোধী সংগঠকদের মতে, তামাক মহামারি নিয়ন্ত্রণের প্রথম আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য চুক্তি হিসেবে খ্যাত এফসিটিসিতে প্রথম স্বাক্ষরকারী দেশ বাংলাদেশ৷ ২০০৩ সালের ২১ মে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অ্যাসেম্বলিতে গৃহিত হবার পরই বাংলাদেশ এতে স্বাক্ষর করে৷ পরের বছর এই চুক্তি বাংলাদেশ রেটিফাইও করে৷
২০০৫ সালে বাংলাদেশে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন পাস হয়৷ পরের বছর প্রণীত হয় বিধি৷ ২০০৭ সালে গঠন করা হয় জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল৷ ২০১৩ সালে সংশোধনী আনা হয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে৷ ২০১৫ সালে ফের প্রণয়ন করা হয় বিধি৷
এই সব উদ্যোগের নানা প্রভাব পড়ে মাঠ পর্যায়ে৷ মূলধারার গণমাধ্যমে তামাকের বিজ্ঞাপন বন্ধ হয়েছে, জনপরিসরে তামাকের ব্যবহার কমেছে৷ সবচেয়ে বেশি তামাকের ব্যবহার কমেছে গণপরিবহণে৷ এক সময় বাস-টেম্পুর মতো গণপরিবহণে সিগারেট বিড়ি খাওয়া নিত্যদিনের ঘটনা থাকলেও এক কামরা বিশিষ্ট গণপরিবহণে যাত্রীদের এই প্রবণতা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে৷
এসব কার্যক্রমের প্রভাব সম্পর্কে ২০১৭ সালে প্রকাশিত ডাব্লিউএইচও’র এক ফিচার স্টোরিতে বলা হয়, ২০০০ সালে যেখানে দেশে ধোঁয়াযুক্ত তামাকের ব্যবহারকারী ৩৪ দশমিক ৬ শতাংশ, সেটা ২০১৩ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ২০শতাংশে৷ ২০১৭ সালে গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোবাকো সার্ভেতে দেখা যায়, এটি আরো কমে ১৮ শতাংশে নেমে এসেছে৷
গত দুই দশকে সরকারি ও বেসরকারি নানা উদ্যোগের কারণে দেশে তামাকের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে বলে মনে করেন তামাকবিরোধী স্বতন্ত্র বিশ্লেষক তাইফুর রহমান৷
তিনি বলেন, ২০০৯ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে কমে ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ হয়ে গেছে, এটা বেশ ভালো অগ্রগতি৷ আন্তর্জাতিকভাবেও এটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ সংখ্যা৷
তামাকবিরোধী সংস্থা প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, ‘‘এই সময়ে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে বিড়ির ব্যবহার৷ বিড়ি যদি এখানকার একমাত্র তামাক পণ্য হতো, তাহলে আমরা তামাকমুক্ত দেশ হওয়ার কাছাকাছি চলে আসতাম৷”
দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বড় ঘোষণাটি আসে ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি৷ ঢাকার এক অনুষ্ঠানে সেই ঘোষণায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘‘আমরা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করতে চাই৷”
প্রধানমন্ত্রী সেদিন আরো বলেন, ‘‘এই ঈপ্সিত লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আমরা যে বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্বারোপ করছি, সেগুলো হচ্ছে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ব্যবহার করে একটি তহবিল গঠন করা, যা দিয়ে দেশব্যাপী জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে৷ দ্বিতীয় ধাপে আমরা তামাকের বর্তমান শুল্ক কাঠামো সহজ করে একটি শক্তিশালী তামাক শুল্কনীতি গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবো৷”
তামাক নিয়ন্ত্রণে পৃথিবীর নানা দেশ কঠোর থেকে কঠোরতর আইন তৈরি করছে৷ পর্তুগাল চাইছে ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত প্রজন্ম গড়ে তুলতে৷ এই জন্য তারা সংসদে একটি আইন প্রস্তাব করেছে, যেটি এখন পাসের অপেক্ষায়৷
২০৩৫ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত দেশ গড়তে চায় ক্যানাডা৷ এর মধ্যে দেশটি তামাকজাত পণ্যের স্বাস্থ্য সতর্কতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে৷ গত বছরের আগস্ট থেকে প্রতিটি সিগারেটের ফিল্টারে ‘সিগারেটে ক্যান্সার হয়’, ‘প্রতি টানে বিষ’- প্রভৃতি সতর্কবার্তা ফ্রেঞ্চ ও ইংরেজিতে ছাপাচ্ছে দেশটি৷ ২০৩০ সালে যাদের বয়স ২০ বছর হবে, তাদের সবাইকে অধূমপায়ী হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে ফ্রান্স৷
নিউ জিল্যান্ডে এমন একটি আইন পাস হয়েছে, যার ফলে ২০০৯ সালের জানুয়ারির পর জন্ম নেয়া ব্যক্তিরা কখনোই বৈধভাবে সিগারেট কিনতে পারবে না৷ সেখানে প্রতি বছর তামাক কেনার ন্যূনতম বয়সসীমা এক বছর করে বাড়ানো হবে৷ যুক্তরাজ্যে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকও কাছাকাছি একটি আইন প্রস্তাব করেছেন৷
এসবের বাইরে মেক্সিকো জনপরিসরে, থাইল্যান্ড পর্যটক-সৈকতে, রাশিয়া ব্যালকনিতে ধূমপান নিষিদ্ধ করেছে৷ এর বাইরে উচ্চ কর আরোপ করে তামাক বা তামাক জাতীয় দ্রব্যকে মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্যও কাজ করছে অনেক দেশ৷
বাংলাদেশে অপেক্ষায় আইনের সংশোধনী, রোডম্যাপ
২০৪০ সালের মধ্যে তামাক নির্মূলে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর তামাক নির্মূলে একটি রোডম্যাপ তৈরিতে সরকার উদ্যোগ নিলেও সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি৷ মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনী প্রস্তাব৷ তবে এখনো পর্যন্ত খসড়ায় থাকা প্রস্তাবে সন্তোষ রয়েছে তামাকবিরোধী সংগঠকদের৷
সংশোধিত আইনের প্রস্তাবে পাতার বিড়ি,ই-সিগারেট নিষিদ্ধের কথা বলা হয়েছে৷ এই আইন পাস হলে যে কোনো তামাকজাত পণ্য বিক্রির জন্য প্রয়োজন হবে লাইসেন্স৷ ভ্রাম্যমাণ দোকানে তামাক বিক্রি নিষিদ্ধ হবে৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ক্লিনিক, খেলাধুলার স্থান ও শিশু পার্কের সীমানার ১০০ মিটারের মধ্যে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি বন্ধ হবে৷ পানমশলার মতো পণ্যের সাথে তামাকের ব্যবহার থাকবে না৷ তামাকপণ্য খুচরা বিক্রি করা যাবে না৷
পাবলিক প্লেস তথা জনপরিসরে ধূমপান আগেই নিষিদ্ধ ছিল৷ তবে আগে জনপরিসরে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান রাখা যেতো৷ নতুন আইন হলে সেটা আর রাখা যাবে না৷ সেই সাথে প্রাঙ্গণের সংজ্ঞার মাধ্যমে জনপরিসর সংশ্লিষ্ট এলাকায়ও ধুমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে৷ অর্থাৎ, জনপরিসরে বা গণপরিবহণে কেউ জর্দা বা সাদাপাতাও খেতে পারবেন না৷
নতুন আইন পাস হলে রেলগাড়ি বা লঞ্চের মতো বহুকক্ষবিশিষ্ট গণপরিবহণেও ধুমপান করা যাবে না৷ যে কোন ধরনের রেস্টুরেন্ট, খাবার দোকান, কফি হাউজ, চায়ের দোকান ও প্রাঙ্গনও নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসবে৷ এছাড়া গণপরিবহণের তালিকায় অযান্ত্রিক যানবাহনকেও যুক্ত করা হয়েছে৷
পাবলিক প্লেসের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত সকল ভবনের বারান্দা, প্রবেশ ও বহির্গমন গেট এবং ভবন সংশ্লিষ্ট এলাকা, তাহা আচ্ছাদিত বা উন্মুক্ত যেভাবেই হোক না কেন, ভবনের সামনে পেছনের মাঠ, উন্মুক্ত স্থান বা বাগানও নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে৷
তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, “আমি তিনটা জিনিস বলবো৷ প্রথমত, আমাদের আইনের যে দুর্বলতা আছে৷ এটা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংশোধন করে আইনটাকে কম্প্রিহেনসিভ করতে হবে৷ দ্বিতীয়ত, এই আইনের বাস্তবায়ন শক্ত হাতে করতে হবে৷ তৃতীয়ত, তামাকের দাম এমনভাবে দাম বাড়াতে হবে, যেন এটা ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়৷”
তামাকবিরোধী স্বতন্ত্র বিশ্লেষক তাইফুর রহমান বলেন, ‘‘স্তরভিত্তিক কর কাঠামোকে পুরোপুরি তুলে দিয়ে যদি তামাকের কর ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো না যায় এবং এক্ষেত্রে তামাক কোম্পানির প্রভাবকে যদি দূর না করা যায়, তাহলে বড় ধরনের অগ্রগতি বেশ কঠিন হয়ে যাবে৷”
তিনি বলেন, ‘‘তামাক কোম্পানির মালিকানায় সরকারের যে সম্পৃক্ততা আছে, সেই জায়গায় একটা বড় ধরনের সাংঘর্ষিক অবস্থা রয়ে গেছে৷ বিশেষ করে এফসিটিসির ৫ (৩) অনুসারে সেখান থেকে সরকারকে বের হতে হবে৷ অন্যথায় তামাক কোম্পানিকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের জন্য কঠিন হয়ে যাবে৷”
তিনি বলেন, ‘‘এই জায়গায় তামাক কোম্পানিগুলো তামাকের উৎপাদনকে যেভাবে উৎসাহিত করছে৷ উৎসাহিত করার যেসব পদক্ষেপ নিতে পারছে, সেই জায়গায় সরকারকে শক্তিশালী অবস্থান নিতে হবে৷ আর এটা নিতে হলে এই তামাক কোম্পানির মালিকানা থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে৷ এই পদক্ষেপগুলো নিলে ২০৪০ সালের লক্ষ্য অর্জন অনেকখানি সম্ভব৷”
অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নিজেই কর ব্যবস্থাকে সহজীকরণ করার কথা বলেছিলেন৷ সেটা হয়নি৷ তখন সিগারেটের তিনটি স্তর ছিল৷ এখন সেটা চারটি স্তরে চলে গেছে৷ এটাকে আসলে এক স্তরে নামিয়ে আনতে হবে৷”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘লক্ষ্য আমাদের স্থির আছে৷ কিন্তু সেখানে আমরা একসঙ্গে লাফ দিয়ে যেতে পারবো না৷ কোথায় যাবো, কীভাবে যাবো, কীভাবে এগোবো-সেটা ঠিক করতে হবে৷’’
আপনার মতামত জানানঃ