গবেষকরা বলেছেন, তাদের অনুসন্ধানটি আদিম যুগের মানুষের ব্যবহার করা সামুদ্রিক প্রযুক্তি, বিভিন্ন নৌকা ও তাদের সমুদ্র অতিক্রম করার যে আত্মবিশ্বাস এবং দক্ষতা ছিল, তার ‘সাক্ষী’ হয়ে থাকবে।
প্রত্নতাত্ত্বিকরা প্রশান্ত মহাসাগরের তিমুর দ্বীপে এমন এক গভীর গুহা খুঁজে পেয়েছেন, যেখানে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি বিভিন্ন এমন পাথর ও প্রাণীর হাড়ের সন্ধান মিলেছে।
বিষয়টি তাদের নতুন করে ভাবাতে বাধ্য করছে, আদিবাসীরা কবে ও কীভাবে প্রথম পাড়ি জমিয়েছিল অস্ট্রেলিয়ায়।
দীর্ঘদিন ধরেই দক্ষিণপূর্ব এশিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউ গিনি’তে মানুষের পাড়ি জমানোর মাইলফলক হিসেবে দেখা হত তিমুর দ্বীপকে। তবে, নতুন গবেষণা এ তত্ত্বটিকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে বলে উঠে এসেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদনে।
এজন্য গবেষকরা অস্ট্রেলিয়ার উত্তর দিকে অবস্থিত দেশ পূর্ব তিমুরে অবস্থিত ‘লাইলি রক শেল্টার’ থেকে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক পাথর ও পলির তারিখ বিশ্লেষণ করেছেন যাতে এ অঞ্চলে মানুষের প্রথম আগমনের বিষয়টি নিখুঁতভাবে খুঁজে বের করা যায়।
রক শেল্টারটিতে ৫৪ হাজার থেকে ৫৯ হাজার বছর পুরোনো পলি সংরক্ষিত আছে, যা এ অঞ্চলের অন্য কোনও জায়গায় নেই। তবে, সেইসব পলিতে মানব আগমনের কোনও নজির মেলেনি।
এর সম্ভাব্য মানে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে মানুষের প্রথম আগমন ঘটেছিল ৪৪ হাজার বছর আগে। আর সে সময়ের আগে কোনো মানব বসতিও গড়ে ওঠেনি তিমুর দ্বীপে।
এ অনুসন্ধানে ইঙ্গিত মিলেছে, অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছানো প্রথম দিকের মানুষরা তিমুর নয়, বরং নিউ গিনি’কে যাত্রাপথ হিসেবে ব্যবহার করেছিল।
“বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এ দ্বীপগুলো হয়ত অস্ট্রেলিয়ায় আদিম মানবদের ‘গেটওয়ে ক্রসিং’ হিসেবে কাজ করেছে,” বলেন ‘অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’ কর্তৃক পরিচালিত গবেষণাটির সহ-লেখক ড. শিমোনা কিলি।
“পূর্ব তিমুর ও এর কাছাকাছি অবস্থিত ফ্লোরস দ্বীপের বিভিন্ন সাইটে মানুষের আগমনের বিভিন্ন চিহ্ন বিশ্লেষণ ও তুলনা করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, দক্ষিণ ওয়ালেসিয়ান দ্বীপগুলোর বিস্তৃত অঞ্চলে মানুষের কোনও অস্তিত্ব ছিল না।”
এমনকি এ গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, এইসব দ্বীপে মানুষের পাড়ি জমানোর বিষয়টি চলমান প্রক্রিয়া ছিল, যেখানে অস্ট্রেলিয়ায় প্রাথমিক বসতি স্থাপনে সময় লেগে গেছে কয়েক হাজার বছর।
“গবেষকদের প্রচলিত ধারণা ছিল, আদি মানব, যারা সমুদ্র পাড়ি দিয়ে এইসব দ্বীপে পৌঁছেছিল, তা আসলে ভুলবশত এসেছে। ঘটনাটি অনেক আগে ঘটার কারণে সম্ভবত এমন ধারণা তৈরি হয়েছে,” বলেন ড. কিলি।
“কিন্তু তিমুরে তাদের পাড়ি জমানোর ঘটনাটি মোটেও কাকতালীয় ছিল না। এটি মূলত মানব বসতি স্থাপনের বড় এক প্রচেষ্টা ছিল, যার প্রমাণ মিলেছে এ যাত্রায় পাড়ি জমানো মানুষের সংখ্যা দেখে।”
গবেষকরা বলেছেন, তাদের অনুসন্ধানটি আদিম যুগের মানুষের ব্যবহার করা সামুদ্রিক প্রযুক্তি, বিভিন্ন নৌকা ও তাদের সমুদ্র অতিক্রম করার যে আত্মবিশ্বাস এবং দক্ষতা ছিল, তার ‘সাক্ষী’ হয়ে থাকবে।
তিমুর দ্বীপে মানুষের প্রথম আগমন ঘটেছে সম্ভবত এর কাছাকাছি অবস্থিত ফ্লোরস দ্বীপ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে। আর তারা গুহাটি এতটা নিবিড়ভাবে ব্যবহার করেছে, যেখানে তাদের পায়ের তলা দিয়ে গুহার মেঝে পোড়ানোর এমনকি মাড়ানোর স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে।
“বসতি স্থাপনের পূর্ববর্তী অবস্থা থেকে সে জায়গায় মানুষের নিবিড় অবস্থানে রূপান্তরের বিষয়টি স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে এর পলি থেকে,” বলেন এই গবেষণার আরেক লেখক ও ‘ফ্লিন্ডার্স ইউনিভার্সিটি’র সহযোগী অধ্যাপক মাইক মর্লে।
এদিকে, গুহাটি খননের সময় ছোট পাথরের হাতিয়ার ও পোড়া মাছের হাড় খুঁজে পেয়েছিলেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা, তবে সেগুলো ঠিক কী কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল, সে বিষয়টি নিশ্চিত নয়।
“যেহেতু তারা অনেক সময় খাবার হিসেবে শেলফিশ বা ছোট প্রাণী খেত, তাই এ ধরনের খাবার সংগ্রহ করতে বড় কোনও ছুরির প্রয়োজন পড়ত না। কিন্তু পাতা ছিঁড়ে তা দিয়ে ঝুড়ি বোনা এমনকি কাঠের সরঞ্জাম তৈরির ক্ষেত্রেও এইসব ছোট ও সূক্ষ্ম হাতিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল,” ব্যাখ্যা করেন ড. কিলি।
আপনার মতামত জানানঃ