রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য রাখা মৃত নারীদের ধর্ষণ করতো মুন্না ভগত (২০) নামে এক ডোম। যেসব মৃত তরুণীকে সে ধর্ষণ করেছে তাদের বয়স অনূর্ধ্ব ২০। তবে সবধরনের নারী লাশের সঙ্গে সে ধর্ষণে লিপ্ত হতো না। ভালো লাশের দিকেই তার নজর ছিল। আত্মহত্যাজনিত কারণে যাদের মৃত্যু হয়েছে বেছে বেছে তাদেরকেই সে ধর্ষণ করেছে। সড়ক দুর্ঘটনা বা অন্যান্য কারণে মৃত্যুর পর যেসব লাশ বিকৃত হয়ে যায় তাদের দিকে মুন্নার নজর ছিল না।
২০১৫ সালে এক নারীর আত্মহত্যাজনিত মৃত্যুর ঘটনায় হাইকোর্ট এক ঐতিহাসিক নির্দেশ দেন। তাতে বলা হয়, অপমৃত্যুর ঘটনায় নারীদের যৌনাঙ্গ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে যে মৃত্যুর আগে ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেছিল কিনা। এরপর থেকেই আদালতের নির্দেশ মেনে আসছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব। সম্প্রতি এই কাজ করতে গিয়ে মোহাম্মদপুর ও কাফরুল থানা এলাকায় অপমৃত্যু হওয়া ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী পাঁচ তরুণীর মৃতদেহে শুক্রাণুর উপস্থিতি পায় সিআইডি। ডিএনএ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পাঁচটি লাশেই একই ব্যক্তির শুক্রাণু। এরপরই বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসে সিআইডি। ভয়ঙ্কর এক সিরিয়াল কিলারের খোঁজ করতে গিয়ে বের হয়ে আসে জঘন্য এ রহস্য।
এদিকে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের লাশকাটা ঘরে আরও আট তরুণীকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। সব তরুণীর দেহে ওই হাসপাতালের ‘ডোম’ মুন্না ভক্তের ডিএনএ আলামত পাওয়া গেছে।
সিআইডি বলছে, গত বছরের ২৯ মার্চ থেকে চলতি বছরের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত মুন্না অন্তত পাঁচজন মৃত কিশোরীর লাশ ধর্ষণ করেছেন বলে তারা প্রমাণ পেয়েছে। মৃত এই কিশোরীদের বয়স ছিল ১১ থেকে ১৭ বছর। আত্মহত্যার পর তাদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছিল।
ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (সিআইডি) বিশেষ পুলিশ সুপার সামসুন নাহার জানান, যেসব মৃত তরুণীকে সে ধর্ষণ করেছে তাদের বয়স অনূর্ধ্ব ২০। ভালো লাশের দিকেই তার নজর ছিল। আত্মহত্যাজনিত কারণে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদেরকেই সে ধর্ষণ করেছে। সড়ক দুর্ঘটনা বা অন্যান্য কারণে মৃত্যুর পর যেসব লাশ বিকৃত হয়ে যায় তাদের দিকে মুন্নার নজর ছিল না।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির এসআই নিউটন কুমার দত্ত বলেন, তরুণী-কিশোরীদের মৃত দেহে পুরুষের শুক্রানুর সন্ধান পাওয়ায় আমরা প্রথমে মনে করি এটা কোনো সিরিয়াল কিলারের কাজ হতে পারে। ধর্ষণের পর ওই তরুণীদের হত্যা করা হতে পারে। অথবা ধর্ষণের অপবাদ সইতে না পেয়ে তারা আত্মহত্যা করেছেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে থানা পুলিশ সন্দেহজনকভাবে কাউকে কাউকে গ্রেফতার করে রিমান্ডেও নিয়েছে। মুন্না শনাক্ত হওয়ার কারণে অনেকেই হয়রানির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।
এসআই বলেন, আদাবর থানায় এক তরুণীর আত্মহত্যার ঘটনায় তার প্রেমিককে সন্দেহ করা হচ্ছিল। ওই প্রেমিকসহ দুই জনকে গ্রেফতার করে জেলেও পাঠানো হয়। সম্প্রতি পাওয়া ডিএনএ প্রতিবেদনে ওই তরুণীর শরীরে মুন্নার শুক্রাণু পাওয়া যায়।
শেরেবাংলানগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, বিষ খেয়ে ১৭ বছর বয়সি এক কিশোরীর আত্মহত্যার ঘটনায় ডিএনএ পরীক্ষায় সম্প্রতি মুন্নার ডিএনএ নমুনার মিল পাওয়া গেছে। আত্মহত্যার ঘটনার বিষয়ে শিগগিরই আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। আর মুন্নার ডিএনএ আলামত পাওয়ার বিষয়টি সিআইডিকে জানানো হয়েছে। এ নিয়ে সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।
কাফরুল এবং মোহাম্মদপুরে মৃত পাঁচ মৃত তরুণীকে ধর্ষণের দায়ে মুন্না এখন কারাবন্দি আছে। এরই মধ্যে ওই পাঁচটি ঘটনা তদন্ত শেষ পর্যায়ে। নতুন আটটি ঘটনার মধ্যে দুটিতে ডিএনএ রিপোর্ট পস্তুত করা হয়েছে। এই দুটি ঘটনা হলো শেরেবাংলানগর এবং আদাবর থানাধীন। অন্য ছয়টি ঘটনায় ডিএনএ আলামত ম্যাচিং করলেও এখনও রিপোর্ট তৈরি হয়নি। শিগগিরই রিপোর্ট প্রস্তুত করা হবে। এর পরই চার্জশিট দেওয়া হবে। চার্জশিটে মুন্নার সঙ্গে সহযোগী আসামি করা হচ্ছে তার মামা ও হাসপাতালের ডোম যতন কুমার লালকে। চার্জশিটে যতনকে সহযোগী আসামি করা হলেও তার বিরুদ্ধে ধর্ষণে সহযোগিতার সরাসরি অভিযোগ আনা হচ্ছে না। মূলত দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে তাকে চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। ওই হাসপাতালের অফিসিয়াল ডোম ও মর্গের ইনচার্জ হলেন যতন কুমার লাল। মুন্না হলো তার ভাগ্নে। মুন্না ওই হাসপাতালের কোনো কর্মচারীও না। ডোম যতনের ভাগ্নে হওয়ার সুবাদে মুন্না চার বছর ধরে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গের লাশকাটা ঘরে কাজ করত। যতনই তাকে এই সুযোগ করে দেন। সেই সুবাদে মুন্না মর্গেই থাকত। লাশকাটা ঘরেই ঘুমাত। এর সুযোগ নিয়েই মুন্না ধর্ষণ করতো একেরপর এক লাশ।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১২৫০
আপনার মতামত জানানঃ