প্রায় ১০ হাজার বছর আগে কৃষিকাজের আবির্ভাব হওয়ার আগে প্রস্তরযুগে মানুষ কী খেত? দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একটি বদ্ধমূল ধারণা ছিল প্রাচীন মানুষ বিশাল সব প্রাণী শিকার করত।
তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করত ম্যামথের মতো বড় প্রাণীর ঝলসানো মাংস। কিন্তু আইবেরোমরুসিয়ান নামে একটি পুরনো প্রস্তরযুগের জনগোষ্ঠীর ওপর নতুন এক গবেষণা প্রচলিত এই ধারণার ওপর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। আইবেরোমরুসিয়ান গোষ্ঠীর মানুষ ছিল শিকারি-সংগ্রাহক।
১৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার বছর আগে বর্তমান মরক্কোয় তাদের বসবাস ছিল। দেশটির বিখ্যাত তাফোরালত গুহায় ৩০ জনের বেশি বিভিন্ন বয়সী আইবেরোমরুসিয়ানে মানুষের কবর পাওয়া গিয়েছিল।
এই জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো গবেষণা, মানুষের পূর্বপুরুষরা খাদ্য হিসেবে মূলত মাংসের ওপর নির্ভর করত—এমন ধারণা বাতিল করে দিতে পারে। ‘নেচার ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন’ জার্নালে গত সপ্তাহে প্রকাশিত এক গবেষণায় এ কথা বলা হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা অন্তত সাতজন আইবেরোমরুসিয়ানের কঙ্কালের হাড় ও দাঁতে সংরক্ষিত রাসায়নিক উপাদান বিশ্লেষণ করে দেখেছেন মাংস নয়, বরং তাদের খাদ্যের প্রোটিনের প্রধান উৎস ছিল উদ্ভিদ। গবেষকরা দাঁতের এনামেল এবং কঙ্কালের হাড়ের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক মৌলিক উপাদানের বণ্টন ও উপস্থিতি পরিমাপ করেছেন।
উল্লেখ্য, খাদ্যের জৈব উৎসর ওপর নির্ভর করে আইসোটোপগুলোর গঠনপ্রকৃতি ভিন্নতর হয়।
সুইডেনের স্টকহোমের ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব ন্যাচারাল হিস্ট্রির প্রত্নজীববিদ্যার অধ্যাপক লার্স ওয়ারডেলিন এ বিষয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদলের গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ১৫ হাজার বছর আগে উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকায় বসবাসকারীরা কালেভদ্রে মাংস খেতে পেত।
বুনো ওট, পাইন বাদাম, শিকড়জাতীয় সবজি ও বিভিন্ন ধরনের ডালই ছিল ওই ‘শিকারি-সংগ্রাহক’ জনগোষ্ঠীর প্রধান খাদ্য। অধ্যাপক ওয়ারডেলিন মনে করেন, আর্কটিকের মতো খুব অনুর্বর পরিবেশের ব্যতিক্রম ছাড়া প্রাচীন মানুষ সম্ভবত মাংস থেকে খুব বেশি ক্যালোরি পায়নি।
প্রসঙ্গত, বিশ্বের ইতিহাসে প্রস্তর যুগ বলতে মানব ও তার সমাজের বিবর্তনের ধারায় একটা পর্যায়কে বোঝানো হয় যখন মানুষের ব্যবহার্য হাতিয়ার তৈরির মূল উপকরণ ছিল পাথর। এই সময়কালটি প্রায় ৩.৪ মিলিয়ন বছর স্থায়ী হয়েছিল এবং ৪,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ২,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে শেষ হয়েছিল, ধাতব কাজের আবির্ভাবের সাথে।
তবে পাথরের ব্যবহারই প্রস্তর যুগের একমাত্র সনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য বলে মনে করা হয় না। বিরল হলেও কাঠ এবং প্রাণির হাড়ের তৈরি হাতিয়ার ব্যবহারের নিদর্শনও পাওয়া গেছে । এসময় স্বর্ণ ছাড়া অন্য কোন ধাতুর ব্যবহার ছিল অজানা । প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার থেকে ও পূর্ব আফ্রিকার সাভানা অঞ্চল থেকে বাকি বিশ্বে মানুষের ছড়িয়ে পড়ার সময় থেকে প্রস্তর যুগের শুরু ধরা হয়।
প্রস্তর যুগের শেষ হয় কৃষির উদ্ভাবন, গৃহপালিত পশুর পোষ মানানো এবং তামার আকরিক গলিয়ে তামা আহরণের মাধ্যমে মানুষ ধাতুর ব্যবহার শুরু করলে। এই যুগটিকে প্রাগৈতিহাসিক যুগ বলা হয় কারণ তখনো লিখন পদ্ধতি আবিষ্কার হয়নি এবং মানব সমাজের লিখিত ইতিহাস সংরক্ষণ করা শুরু হয়নি ।
আপনার মতামত জানানঃ