বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে খাটো নারী ভারতের জ্যোতি আমগে। আমগের উচ্চতা মাত্র ৬২ দশমিক আট সেন্টিমিটার (২ ফুট শূন্য দশমিক ৭ ইঞ্চি)। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে জ্যোতিকে অনেকেই চেনেন। তবে জানেন কি? সোশ্যাল মিডিয়ার যুগের প্রায় শত বছর আগেই এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে খাটো নারী পলিন পরিচিত হয়ে ওঠেন বিশ্বে।
পলিন মাস্টারস, যিনি প্রিন্সেস পাউলিন নামেই পরিচিত ছিলেন। তার উচ্চতা ছিল ৬১ সেন্টিমিটার। তিনি ১৮৭৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নেদারল্যান্ডসের উত্তর ব্রাবান্টের ওসেনড্রেখ্টের ছোট্ট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও তার জন্মের বছর নিয়ে কিছু বিতর্ক রয়েছে এবং কেউ কেউ বলে যে তার জন্ম হয় ১৮৭৮ সালে।
জন্মের সময় তার উচ্চতা ছিল মাত্র ৩০ সেমি (১১.৮ ইঞ্চি)। তার বাবা-মা ধরেই নিয়েছিলেন পলিন বেশিদিন বাঁচবে না। সাধারণত এমন শিশুরা জন্মের সময় কিংবা এর কিছুদিন পরই মারা যায়। তবে আশ্চর্যজনকভাবে পলিন বেশ ভালোভাবেই বেঁচে গিয়েছিলেন। এমনকি বিশ্বে খ্যাতিও অর্জন করেছিলেন। মা আন্না মারিয়া কাউয়েনবার্গ ও বাবা ছুতার মিচিয়েল মাস্টারসের নয় সন্তানের মধ্যে পঞ্চম ছিলেন পলিন।
পলিনের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। তার জন্মের আগে, তার বাবা বাড়ি তৈরির জন্য ঋণ নিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য বজ্রপাতে তাদের সেই বাড়ি পুড়ে যায়। তাই বাড়িটি থাকার জন্য একেবারেই উপযুক্ত ছিল না। পলিনের জন্ম হয়েছিলে শস্যাগারে।
পলিনের বাবা-মা তার প্রথম জন্মদিনের আগে বেলজিয়াম এবং নেদারল্যান্ডসের মেলায় তাকে ঘুরে বেড়াতে শুরু করে, লোকেরা ছোট মেয়েটির অবস্থা দেখে অর্থ প্রদান করতে থাকে। সহজ বাংলায় বললে, পলিনকে দেখিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেন তারা। এতেই পলিনের পরিবারের আর্থিক অবস্থাও ভালো হয়ে থাকে। একসময় এই টাকা দিয়েই তারা নিজেদের জন্য একটি বিশাল ভিলা তৈরি করেছিল।
এই অর্থ দিয়েই পলিনের বোনদের ব্যয়বহুল বোর্ডিং স্কুলে পাঠানো হয় এবং তার ভাইদেরও ভালো স্কুলে পড়াশোনা করাতে সক্ষম হন তার বাবা-মা। নয় বছর বয়সে, পলিনের উচ্চতা হয় মাত্র ৫৪.৬১ সেন্টিমিটার (২১.৫ ইঞ্চি) এবং তার ওজন ৪ পাউন্ড ৫ আউন্স (১.৯৫ কেজি) হয়েছিল।
১৮৮৯ সালে তার বাবার মৃত্যুর পর, তার বোনের স্বামী জোসেফ ভার্সচুরেন তার কর্মজীবনের পরিচালনার দায়িত্ব নেন। তার ছোট আকার তাকে সারাবিশ্বে তারকা বানিয়ে দিয়েছে ততদিনে। জোসেফ পলিনকে সঙ্গে নিয়ে ইউরোপের থিয়েটারে ঘুরতে থাকেন। পলিনকে দেখতে বহু মানুষ ভিড় জমাতেন থিয়েটারগুলোতে। পলিন লন্ডন, এডিনবার্গ, হামবুর্গ, বার্লিন এবং প্যারিসের জায়গায় এভাবে নিজেকে প্রদর্শন করাতেন।
পলিন সবার খুব প্রিয় হয়ে ওঠেন। তাকে জার্মান সম্রাট দ্বিতীয় কায়সার উইলহেম একটি ছোট গাড়ি উপহার দিয়েছিলেন। যেটা ঘোড়ার বদলে কুকুর দ্বারা টানা হতো। হ্যানোভারের জ্যাকোবি কারখানায় উৎপাদিত এই গাড়িটির উচ্চতা ছিল মাত্র ৯০ সেন্টিমিটার। পলিন তার কর্মজীবনে নেদারল্যান্ডসের রানী এমা কর্তৃকও অভ্যর্থনা পেয়েছিলেন।
সপ্তাহে ১ হাজার ডলার উপার্জন করতেন পলিন। যা আজ প্রায় ৩৬ হাজার ডলারের সমান। পলিনকে চিকিৎসকরা এতো জার্নি করতে নিষেধ করতেন। তবে আয়ের জন্য তাকে সেই নিষেধ বারবার অমান্য করতে হয়েছে। তিনি নিউমোনিয়া এবং মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৮৯৫ সালের শুরুর দিকে ১৯ বছর বয়সে মারা যান।
আপনার মতামত জানানঃ