প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন হিসেবে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার কসবা গ্রামের ‘আল্লাহর মসজিদ’। তৎকালীন বাংলার মুসলিম স্থাপত্যের এক ঐতিহাসিক নিদর্শন এ মসজিদটি নির্মাণের সময়কাল কিংবা ইতিহাসযুক্ত কোনো শিলালিপি পাওয়া না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে পঞ্চাদশ শতাব্দীতে হযরত খান জাহান আলী (রহ.) আমলে মসজিদটি নির্মিত হয়েছে। এটি দেখতে অনেকাংশে বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদের মতো।
জনশ্রুতি রয়েছে, প্রায় সাতশ’ বছর পূর্বে মসজিদটি জ্বীন দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। মসজিদটি নির্মাণের ব্যাপারে বিভিন্ন অলৌকিক কাহিনীর কথা বর্ণিত রয়েছে। আর এ অলৌকিকতার জন্য মসজিদটি ‘আল্লাহর মসজিদ’ নামে পরিচিত রয়েছে।
সরেজমিনে মসজিদ ঘুরে দেখা গেছে, ৩৮ ফুট করে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে নির্মিত মসজিদের দেয়ালগুলো প্রায় ৭ ফুট করে চওড়া। এছাড়াও পাতলা ইট আর চুন-সুরকি দিয়ে নির্মিত মসজিদের পূর্ব দেয়ালে তিনটি, উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে একটি করে মোট পাঁচটি শিখরাকার সরু উঁচু খিলানযুক্ত প্রবেশপথ রয়েছে। প্রবেশপথের খিলানের ওপরের প্যানেলে কিছু ফুল ও ডায়মন্ড অলংকরণ করা হয়েছে।
পাশাপাশি ছাদ বরাবর চারদিকে কার্ণিশ রয়েছে, যেগুলো মসজিদের চার কোণে থাকা স্তম্ভের সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে। নয় গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদের অভ্যন্তরে চারটি পাথরের স্তম্ভ রয়েছে এবং পশ্চিম দেয়ালে তিনটি মিহরাব রয়েছে। মাঝখানের মিহরাবটি আকারে বড়। ঐতিহাসিক এ আল্লাহর মসজিদটি এক নজর দেখতে প্রতিনিয়ত দূর-দূরান্তের আসছেন মানুষ।
এছাড়াও মনের আশা পূরণ হওয়ায় মানত নিয়ে আসছেন কেউ কেউ। আবার অনেক ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা এ মসজিদে এসে নফল নামাজ আদায় করছেন। মসজিদের চারপাশে হাঁটার জন্য রয়েছে রয়েছে প্রশস্ত রাস্তা। এছাড়াও মসজিদ কমপ্লেক্সের পূর্ব দিকে রয়েছে বিশাল দীঘি। যেখানে নারী-পুরুষদের গোসল ও ওজুর জন্য রয়েছে আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও মসজিদে নারীদের নামাজ আদায়ের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে।
মসজিদের খাদেম মো. বাবুল ফকির বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে ঐতিহাসিক এ মসজিদের খাদেম হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমাদের পূর্ব পুরুষ থেকে শুনে আসছি প্রায় সাতশ’ বছর পূর্বে এ মসজিদ খানা জ্বীন দ্বারা নির্মিত হয়েছে। মসজিদটি নির্মাণের ব্যাপারে বিভিন্ন অলৌকিক কাহিনীর কথা বর্ণিত রয়েছে। আর এ অলৌকিকতার জন্য মসজিদটি ‘আল্লাহর মসজিদ’ নামে পরিচিত রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা তারেক মাহমুদ বলেন, আল্লাহর মসজিদের নকশা, বাইরে ও অভ্যন্তরের গঠনশৈলী এবং ছাদের ওপরের গম্বুজ, প্রবেশপথের অবস্থান ও অলংকরণ দেখে হযরত খান জাহান আলী (রহ.) আমলে নির্মিত বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
তিনি আরো বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক পর্যটক মসজিদটি একনজর দেখার জন্য আসেন।
মসজিদে মানত নিয়ে আসা মাদারীপুর জেলার বাসিন্দা মামুন হোসেন বলেন, আমি প্রবাসে যাওয়ার নিয়ত করেছি। প্রবাসে গিয়ে যাতে ভালোভাবে পৌঁছাতে পারি এবং আয়রোজগার করতে পারি, এ জন্য আমার মা আমাকে এখানে নিয়ে আসার জন্য মানত করেছিলেন। তাই মায়ের সঙ্গে এখানে এসেছি। নফল নামাজ আদায় করেছি। মসজিদটি দেখে মনের মধ্যে একটা প্রশান্তি অনুভব করেছি।
গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বলেন, এরই মধ্যে মসজিদটি একাধিকবার পরিদর্শন করেছি। প্রাচীন স্থাপত্য এ নিদর্শনটি বর্তমানে প্রত্নত্তত্ত্ব অধিদফতরের তত্বাবধানে দেখভাল করছেন।
আপনার মতামত জানানঃ