ইতিহাসের সফলতম জলদস্যু একজন নারী! হ্যাঁ, অবাক লাগলেও সত্যি। বলা চলে, ‘ঝেং শি’ নামের এই চীনা নারী দক্ষিণ চীন সাগরে রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছিলেন।
এমনকি একসময় ঝেং শির আধিপত্য এত বেশি অঞ্চলে বিস্তৃত হয় যে, চীনা রাজবংশের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
তরুণী ঝেং শি দেখতে অনেক সুন্দরী ছিলেন। তার জলদস্যু হয়ে ওঠার গল্পটা একটু অন্যরকম। অল্প বয়সেই দারিদ্র তাকে ঠেলে দিয়েছিল পতিতাবৃত্তির দিকে। গুয়াংডং প্রদেশের এক পতিতালয়েই ‘ঝেং’ নামের এক জলদস্যুর সঙ্গে আলাপ হয় তার। তারপর বিবাহ।
ঝেং সেই সময়ের নামকরা দস্যু ছিলেন। তার নেতৃত্বে কুখ্যাত ‘লাল নৌবহর’ দক্ষিণ চীন সাগরে ত্রাস ছড়াত। তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী জলদস্যু গ্রুপগুলোর সাথে জোট তৈরি করেন। ফলে একটি বিশাল দস্যু-জোট তৈরি হয়, যে জোট ক্রমেই অপ্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে। পর্তুগিজরা তাদের সমৃদ্ধ নৌশক্তি নিয়ে বাধা দিতে আসলে উল্টো পরাজিত হয়ে ফিরে যায়।
‘ঝেং’-এর মৃত্যুর পর ‘ঝেং শি’ নামে দস্যুবৃত্তির দায়িত্ব নেন তিনি। ‘ঝেং শি’ নামটির অর্থও ‘ঝেং-এর বিধবা স্ত্রী’। খুন, লুঠ কিংবা অপহরণ- সবেতেই পারদর্শী ছিলেন কুখ্যাত এই দস্যুরানি। এমনকি ব্রিটিশ ও পর্তুগিজ নৌবাহিনীকেও সে-সময় যুদ্ধে পরাজিত করেন তিনি।
ঝেং শি চীনা রাজবংশের আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠলে ব্রিটেন এবং পর্তুগালের সাহায্য নিয়ে তাকে পরাস্ত করতে নৌ-অভিযান প্রেরণ করে। কিন্তু ঝেং শির বিশাল বাহিনীর কাছে তারা টিকতেই পারেনি। শোচনীয় পরাজয় বরণ করতে হয় তাদের। এমনকি সম্মিলিত রাজকীয় বাহিনীর ষাটটি জাহাজ দখল করে নেয় ঝেং শির দস্যুরা।
উপায়ান্তর না দেখে চীনা রাজবংশ সুন্দরী দস্যুরাণী ঝেং শিকে সমঝোতার প্রস্তাব দেয়। সমঝোতা অনুযায়ী, লুটের মালামাল নিজের কাছে রাখার নিশ্চয়তা পান। এছাড়াও সমঝোতার ফলাফল হিসেবে দস্যুরানী তার ‘ডান হাত’ খ্যাত চ্যাং পাওকে বিয়ে করেন। অদ্ভুত শোনালেও সত্য, চ্যাং পাও তার পালিত পুত্র ছিল!
সমঝোতার পর তার জীবন সম্পর্কে খুব বেশি জানা যায় না। তিনি তার শৈশবের এলাকায় ফিরে যান এবং গোপনে বসবাস করতে থাকেন। ১৮৪৪ সালে ৬৯ বছর বয়সে তিনি মারা যান।
আপনার মতামত জানানঃ