বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্রমশ চীনের প্রভাব বাড়ছে। অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ চীনের ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল হলেও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতিতে চীনের তেমন কোন প্রভাব নেই। কিন্তু সামনের দিনগুলোতে এই প্রভাবগুলো বাড়বে বলে মনে করছেন বিভিন্ন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, বাংলাদেশকে ঘিরে চীন একটি মহাপরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে এবং সেই মহাপরিকল্পনার অংশ হিসাবে চীনের বন্ধু ঠিক করছে চীন।
বিভিন্ন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে তারা সম্পর্ক তৈরি করছে এবং প্রভাব বলয় বাড়াচ্ছে রাজনীতিবিদদের মধ্যে। এর ফলে অদূর ভবিষ্যতে চীন বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি শক্তিশালী অবস্থানে রাখতে পারে বলে অনেকে ধারণা করছেন।
ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা তাদের আলাদা আলাদা পর্যবেক্ষণে এ ধরনের মন্তব্য করেছেন। বাংলাদেশেও পরিস্থিতি বাস্তবতা বিচার বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে চীনের প্রভাব অনেকখানি বাড়ছে।
বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে প্রভাবশালী নেতা বাংলাদেশ সফর করেছেন নির্বাচনের পরপরই। বাংলাদেশের প্রধান এই রাজনৈতিক দলের বেশ কয়েকজন নেতা রয়েছেন যারা চীনের সঙ্গে প্রকাশ্যে এবং গোপনে গভীর সম্পর্ক রক্ষা করে চলেন।
এদেরকে চীনপন্থী হিসাবে অভিহিত করা যায়। একটা সময় আওয়ামী লীগে চীনপন্থীদের সংখ্যা অত্যন্ত কম ছিল। কিন্তু এখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তত চারজন প্রভাবশালী নেতা রয়েছেন, যারা চীনের স্বার্থ সংরক্ষণ করে এবং চীনের সাথে গোপন সম্পর্ক রয়েছে। এ রকম অন্তত দুজনের ব্যাপারে ভারত বাংলাদেশ সরকারের কাছে তাদের মনোভাব জানিয়েছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা এখনও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক জায়গায় রয়েছেন।
আওয়ামী লীগ ছাড়াও আওয়ামী লীগের আদর্শিক জোট ১৪ দলেও চীনের প্রভাব রয়েছে। ১৪ দলের মধ্যে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। সাম্প্রতিক সময়ে রাজনীতির নানা টানাপোড়েন এবং মেরুকরণে ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে চীন মুখী প্রবণতা আরও বেড়েছে। কারণ ভারতের কাছে উপেক্ষিত হয়ে এই সমস্ত নেতারা এখন চীনের প্রতি ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছেন।
একটা সময় ছিল বিএনপির সঙ্গে চীনের সখ্যতা ছিল অনেক বেশি। বিএনপির অনেক প্রভাবশালী নেতারা যেমন, প্রয়াত তরিকুল ইসলাম, মান্নান ভূঁইয়া, সাদেক হোসেন খোকা চীনপন্থী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু এখন বিএনপি অনেকটাই চীন থেকে দূরত্ব সৃষ্টি করেছে। এটি হয়েছে কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বিএনপি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক করতে চায় এ কারণে। তবে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বিএনপির মধ্যে আবার চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আগ্রহ দেখা গেছে। চীনেও এখন সব ফল একটিপাত্রে না রেখে সব দলের সঙ্গে আলাদা আলাদা সম্পর্কের নীতি অনুসরণ করে চলেছে। তাই বিএনপির সঙ্গেও এখন সম্পর্ক উন্নয়নের দিকে মনোযোগী হচ্ছে চীন।
চীন বাংলাদেশে কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাত দেখায় না। সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করার নীতি নিয়ে কাজ করছে। এমনকি স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী অপশক্তি জামায়াতের সঙ্গেও চীনের সাম্প্রতিক সময়ে যোগাযোগের খবর পাওয়া গেছে। জামায়াতের অত্যন্ত দুইজন নেতার সঙ্গে চীনের ঢাকাস্থ মিশনের কূটনীতিকদের সঙ্গে দুটি বৈঠকের খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও ছোট ছোট বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও চীন এখন ঘনিষ্ঠতা রাড়াচ্ছে আগের চেয়ে বেশি।
একটা সময় ছিল চীন যখন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শুধু অংশীদারিত্ব হিসেবে কাজ করত। কিন্তু এখন বাংলাদেশে চীনের রাজনৈতিক প্রভাব বলয় বিস্তারের একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। আর এ কারণে তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে। ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে চীনের প্রভাব বাড়ছে। বিশেষ করে মালদ্বীপের নির্বাচনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে চীন এখন আগ্রহী হয়ে উঠেছে বলেও কোন কোন মহল মনে করছে।
আপনার মতামত জানানঃ