গাছেরাও কথা বলে। একে অন্যের খোঁজ নেয়, হুঁশিয়ার করে আসন্ন বিপদ থেকে। আর ধারণা নয়। এই তত্ত্ব এবার প্রমাণিত। রীতিমতো ক্যামেরাবন্দি। এই প্রথম গাছেদের ‘কথা বলা’ ধরা পড়ল ক্যামেরায়। রেকর্ড করলেন জাপানের বিজ্ঞানীরা। নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
এদিকে, জাপানী বিজ্ঞানীরা ভিডিও প্রকাশ করে জানালেন যে, একে অপরের সঙ্গে কথাও বলতে পারে উদ্ভিদেরা। গাছেদের কথপোকথনের ‘রিয়্যাল টাইম ফুটেজ’ সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন তাঁরা।
সাল ১৯০১। আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু প্রথম প্রমাণ করেছিলেন গাছেরও জীবন আছে। তবে এই প্রথম জাপানী বিজ্ঞানীরা ভিডিও প্রকাশ করে জানালেন যে, একে অপরের সঙ্গে কথাও বলতে পারে উদ্ভিদেরা। গাছেদের কথপোকথনের ‘রিয়্যাল টাইম ফুটেজ’ সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন তাঁরা।
এই বিষয়ে ‘সায়েন্স অ্যালার্ট’ জানাচ্ছে, সম্প্রতি জাপানের একদল বিজ্ঞানী এই উদ্ভাবন করেছেন। দলে ছিলেন মলিকিউলার বায়োলজিস্ট থেকে শুরু করে পোস্ট-ডক্টোরাল রিসার্চার, পিএইচডি-রত শিক্ষার্থী প্রভৃতি। জানা গিয়েছে, পরীক্ষার জন্য এই বিজ্ঞানীরা একটি এয়ার পাম্পকে দুটি কৌটোর সঙ্গে যুক্ত করেন। একটিতে ছিল শুঁয়োপোকা আর টমাটো গাছের পাতা। অপরটিতে আরাবিডপসিস থাইল্যাঙ্কা নামে এক ধরনের আগাছাজাতীয় উদ্ভিদ। শুঁয়োপোকাগুলোকে পাতা আর আগাছা খেতে দেন বিজ্ঞানীরা।
অন্যদিকে, আরাবিডপসিস থাইল্যাঙ্কা প্রজাতিরই অন্য একটি আগাছার প্রতিক্রিয়া রেকর্ড করতে শুরু করেন বিজ্ঞানীরা। দ্বিতীয়টি ছিল পোকাহীন। পরীক্ষার জন্য একটি বায়োসেন্সর ব্যবহার করা হয়েছিল। দেখা যায়, তার সবুজ আলো জ্বলে উঠেছে। পাশাপাশি সেন্সরে ধরা পড়েছে ক্যালসিয়াম আয়নের অস্তিত্বও।
সায়েন্স অ্যালার্টের তথ্য অনুসারে, গাছপালা বায়ুবাহিত যৌগগুলির সূক্ষ্ম কুয়াশা দ্বারা বেষ্টিত থাকে, এই যৌগগুলিকেই তারা একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করে। এই যৌগগুলি বিপদের আঁচ পেয়েই একে অপরকে সতর্ক করে।
জাপানী বিজ্ঞানীরা যে ভিডিওটি প্রকাশ করেছেন তাতে দেখা গিয়েছে কী ভাবে গাছপালা এই বায়বীয় অ্যালার্মগুলি গ্রহণ করে এবং প্রতিক্রিয়া জানায়। সাইতামা বিশ্ববিদ্যালয়ের আণবিক জীববিজ্ঞানী মাসাতসুগু টয়োটার নেতৃত্বে গবেষণাটি চালানো হয়েছে। গবেষণাপত্রটি নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর দলের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন ইউরি আরতানি এবং তাকুয়া উমুরা।
বিজ্ঞানীদের দল পর্যবেক্ষণ করেছেন যে কী ভাবে একটি অক্ষত উদ্ভিদ কীটপতঙ্গের আক্রমণের পর ক্ষতিগ্রস্ত উদ্ভিদদের দ্বারা নির্গত উদ্বায়ী জৈব যৌগগুলির মাধ্যমে সজাগ হয়ে ওঠে এবং পরিবেশগত বিপদ থেকে নিজেদের রক্ষা করে।
উদ্ভিদদের কথপোকথন রেকর্ড করার জন্য বিজ্ঞানীরা একটি এয়ার পাম্পকে পাতা আর শুঁয়োপোকা ভর্তি বাক্সের সঙ্গে এবং সর্ষে পরিবারের একটি সাধারণ আগাছা অ্যারাবিডোপসিস থালিয়ানা ভর্তি আর একটি বাক্সের সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন। গবেষকরা একটি উজ্জ্বল সবুজ রঙের বায়োসেন্সর যোগ করেছিলেন যা ক্যালশিয়াম আয়নকে শনাক্ত করতে সাহায্য করেছিল। মানুষের শরীরের কোষগুলিও একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে এই ক্যালশিয়াম সিগন্যালিং পদ্ধতি ব্যবহার করে।
ভিডিওতে স্পষ্ট ধরা পড়েছে, ক্ষতিগ্রস্থ গাছগুলি তাদের আহত প্রতিবেশীদের কাছ থেকে বার্তা পাওয়া মাত্রই পাতায় ক্যালশিয়াম সংকেতের বিস্ফোরণের মাধ্যমে নিজের প্রতিক্রিয়া জানায়।
প্রসঙ্গত, মানব কোষ সংযোগের মাধ্যম হিসাবে ক্যালসিয়াম আয়নকেই ব্যবহার করে থাকে। বিজ্ঞানীদের দলটি ‘গাছেদের কথা বলার’ যে ভিডিও প্রকাশ্যে এনেছে, তাতে পোকাহীন, দ্বিতীয় গাছটির, প্রথম এবং ‘আহত’ (যেহেতু শুঁয়োপোকা সেটি খেয়েছে) গাছটির থেকে বিপদ সংকেত পেয়েছে। তার প্রমাণ, বার্তা পাওয়ামাত্রই সেন্সরের সবুজ হয়ে জ্বলে ওঠা এবং ক্যালসিয়াম আয়নের অস্তিত্ব ধরা পড়া।
বিজ্ঞানীদের দাবি, যে সব গাছ কীটপতঙ্গ বা অন্য কিছুর দ্বারা আক্রান্ত হয়, তারা বাতাসে ‘ভিওসি’ তথা ‘ভোলাটাইল অরগ্যানিক কম্পাউন্ড’ নিঃসরণ করে। সুস্থ, প্রতিবেশী গাছটি সেই ‘ভিওসি’ গ্রহণ করে সতর্ক হয়। এটাই গাছেদের আন্তঃসংযোগ। এটাই তাদের ‘কথা বলা’। যা প্রথমবার ক্যামেরাবন্দি করলেন জাপানী বিজ্ঞানীরা।
আপনার মতামত জানানঃ