গাজায় ইসরায়েলের হামলার শুরু থেকেই প্রধান শিকার হয়ে আসছে নারী ও শিশুরা। এ পর্যন্ত প্রায় ১৬ হাজার নারী ও শিশু নিহত হয়েছে। জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে প্রতি ঘণ্টায় গড়ে দুজন মাকে হত্যা করা হয়। খবর আল-জাজিরা।
গেল বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তিন মাস পেরিয়ে গেলেও থামেনি এ হামলা; বরং নতুন বছরে আরও বেড়ে গেছে এর তীব্রতা। সবশেষ ২৪ ঘণ্টায় অবরুদ্ধ উপত্যকাটিতে আরও ১৩২ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নির্বিচার হামলায় এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা ২৪ হাজার ছাড়িয়েছে, যার মধ্যে প্রায় সাড়ে ১০ হাজারই শিশু।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি হামলার মোট নিহতের মাঝে নারী ও মেয়ে শিশুদের সংখ্যা রয়েছে সামনে, প্রায় ৭০ শতাংশ।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল হামলার শুরুর পর থেকে গাজায় পিতৃহারা হয়েছেন ১০ হাজার শিশু। বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে ১০ লাখ নারী ও মেয়ে শিশু রয়েছে।
লৈঙ্গিক সমতা প্রচারকারী সংস্থা ইউএন উইমেন গতকাল শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) জানিয়েছে, ওই অঞ্চলে নারী ও মেয়েরা নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, আশ্রয় থেকে বঞ্চিত। তারা এখন ‘আসন্ন অনাহার ও দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি’ হয়ে দিন কাটাচ্ছে।
সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সিমা বাহাউস এক বিবৃতিতে বলেছেন, এ ১০০ দিন ও নিহতের সংখ্যা ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর যে আঘাত হেনেছে, তা আগামী প্রজন্মকেও তাড়িত করবে।
আরো বলেন, আজ গাজার নারী ও মেয়েদের অবস্থা নিয়ে আমরা যতই শোক করি না কেন, আগামীকাল মানবিক সহায়তাবিহীন অবস্থায় এবং ধ্বংস ও হত্যার মাধ্যমে সমাপ্তি নিয়ে শোক করব।
ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ২৪ হাজার ৭৬২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন ৬২ হাজার ১০৮ জন। এছাড়া নিখোঁজ রয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
অন্যদিকে দক্ষিণ ইসরায়েলে হামাসের আকস্মিক হামলায় প্রায় এক হাজার ৩০০ জন নিহত হয়। জিম্মি হিসেবে ধরা নেয়া হয় ২৪০ জনকে, যাদের মধ্যে কয়েক ডজন এরই মধ্যে মুক্তি পেয়েছেন।
এদিকে, দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে থাকা গাজায় বাড়ছে রোগ, বালাই। খাবার, পানির অভাবে চরম অপুষ্টিতে ভুগছে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা। স্বেচ্ছাসেবকদের গাড়িতে করে খাবার নিয়ে আসতে দেখলেই ছুটে গিয়ে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন বাস্তুচ্যুতরা। দিনের পর দিন ধরে একজনের একবেলার খাবার পুরো পরিবার ভাগ করে খাচ্ছে। বাচ্চারা সারাদিন খাবারের জন্য কান্না করতে থাকে। ক্ষুধায় বড়দেরও মাথা ঝিম ধরে থাকে, শরীর অবশ লাগে।
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি- ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, সাত অক্টোবর হামলা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৪ লাখ মানুষের কাছে খাদ্য সহায়তা পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে সংস্থাটি। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এ সহায়তা কিছুই নয় জানিয়ে সংস্থাটি বলছে, উপত্যকাটির প্রতিটি মানুষ ক্ষুধার্ত দিন কাটাচ্ছে।
আপনার মতামত জানানঃ