বড় সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে না আসায় দু:খ বা হতাশা প্রকাশ করে সাতই জানুয়ারির নির্বাচনে হওয়া অনিয়মগুলোর পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আহবান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ।
নির্বাচনের বিষয়ে দেওয়া এক বিবৃতিতে সংস্থাটি এ আহবান জানিয়েছে। রবিবার অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এককভাবেই ২২২ আসনে জয়লাভ করেছে।
তবে বিরোধী দল বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো এ নির্বাচন বর্জন করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনের নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে।
নির্বাচনের আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির বহু নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছিলো এবং এর মধ্যে দলের সিনিয়র কয়েকজন নেতাসহ অনেকে নেতাকর্মীর বিভিন্ন মামলায় কারাদণ্ড হয়েছে।
রাজনৈতিক নানা ঘটনাপ্রবাহের মাঝে নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে তীব্র মতবিরোধের মধ্যেই অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষকদল পাঠায়নি ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
প্রসঙ্গত, এর আগে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা।
আলাদা বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য বলেছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মানদণ্ড’ মেনে অনুষ্ঠিত হয়নি বলে তারা মনে করে।
তবে ভারত, চীন, রাশিয়া ও জাপানসহ অনেক দেশ এ নির্বাচনে জয়লাভের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা দিয়েছে।
মঙ্গলবার রাতে দেয়া বিবৃতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে ‘গত রবিবার বাংলাদেশে যে সংসদীয় নির্বাচন হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তা লক্ষ্য করেছে এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের ভিত্তিতে ইইউ ও বাংলাদেশের যে দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারিত্ব তা পুনর্ব্যক্ত করছে’।
একই সঙ্গে ওই নির্বাচনে সব বড় রাজনৈতিক দল অংশ না নেয়ায় সংস্থাটি দু:খ প্রকাশ করেছে। তবে ইইউ’র নির্বাচন বিশেষজ্ঞ দলের আসন্ন রিপোর্ট ও সুপারিশমালা প্রকাশের বিষয়ে কর্তৃপক্ষ একমত হওয়াকে তারা স্বাগত জানিয়েছে।
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার চেতনার ওপর ভিত্তি করে নির্বাচনে যেসব অনিয়ম হয়েছে তার সময়োপযোগী ও পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানিয়েছে সংস্থাটি।
নির্বাচনের সময় সহিংসতার নিন্দা করে ইইউ নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা থেকে বিরত থাকার জন্য সবার প্রতি আহবান জানিয়েছে।
“আইনের শাসন, বিচারিক স্বাধীনতা, সঠিক প্রক্রিয়া এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারকে গুরুত্ব দেয়া এবং নির্বাচনের আগে ও পরে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে বিরোধী দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের আটক করাটা খুবই উদ্বেগের”।
সংস্থাটি রাজনৈতিক বহুত্ববাদ, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক মানদন্ড এবং শান্তিপূর্ণ সংলাপের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উৎসাহিত করেছে।
“গণমাধ্যম, সিভিল সোসাইটি ও রাজনৈতিক দলগুলো কোন ধরণের সেন্সরশিপ ও প্রতিশোধের ভয় ছাড়াই কাজ করতে পারাটা জরুরি”।
বিবৃতিতে বলা হয় রাজনৈতিক, মানবাধিকার, বাণিজ্য ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে যেসব বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ অব্যাহত রাখবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
এর মধ্যে বাংলাদেশের সম্ভাব্য অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা জিএসপি প্লাস পাওয়ার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা কিছু দেশ কোন দল পাঠায়নি। এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বরেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়ে দিয়েছিলো যে এবারের এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য তারা কোন পূর্ণাঙ্গ দল পাঠাচ্ছে না।
এর আগে জুলাইয়ে সংস্থাটির যে প্রাক নির্বাচনী দল ঢাকায় এসেছিলো তাদের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই তখন ওই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছিলো। এর পর সেপ্টেম্বরেই ইউরোপীয় পার্লামেন্টে গৃহীত এক প্রস্তাবে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন প্রসঙ্গ এসেছে এবং অবাধ বাজার সুবিধা (ইবিএ) বাংলাদেশের জন্য অব্যাহত রাখা যৌক্তিক কী-না সেই প্রশ্নও তুলেছেন।
এ সুবিধার অংশ হিসেবে জিএসপি বা শুল্কমুক্ত সুবিধা পায় বাংলাদেশের পণ্য। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত এর বড় সুবিধাভোগী।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে ২০২৬ সাল পর্যন্ত এ সুবিধা পাওয়ার কথা বাংলাদেশের। কিন্তু ওই বছর স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটনার কথা।
তবে ২০২৬ সালে এটি হলেও পরবর্তী তিন বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার কথা রয়েছে। তবে সুবিধাটি পেতে হলে বাংলাদেশকে জিএসপি প্লাসের জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে হবে বাংলাদেশকে, যা নিয়ে ইউরোপীয় কমিশনের সঙ্গে এখন আলোচনা চলমান রয়েছে।
এর আগে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠায়নি ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ২০১৪ সালের নির্বাচন বিএনপি বর্জন করেছিলো। আর ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলেও ওই নির্বাচনে ‘নজিরবিহীন ভোট কারচুপি’র অভিযোগ রয়েছে।
আপনার মতামত জানানঃ