২০১৯ সালে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ও সুবিধা সংক্রান্ত ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫-ক অনুচ্ছেদ রহিত করে লোকসভায় বিল পাস করে মোদি সরকার। এর আগে রাজ্যসভায় বিলটি পাস হয়। এ বিষয়ে দায়ের করা একটি আর্জির শুনানি শেষে সম্প্রতি রায় দিয়েছে সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট। রায়ে মোদি সরকারের সিদ্ধান্তকে বহাল রাখা হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা ও সুবিধা বাতিল করে কি তার চূড়ান্ত ভারতভুক্তি নিশ্চিত করা যাবে? কাশ্মীরিরা কি তা মেনে নেবে? নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। অতীতই তার সাক্ষী। কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও কাশ্মীর পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি মেহবুবা মুফতি হয়তো অতীতের ইতিহাসে দৃষ্টি রেখেই বলেছেন: ‘জম্মু-কাশীরের জনগণ আশা হারাবে না বা হাল ছাড়বে না। সম্মান ও মর্যাদার জন্য লড়াই অব্যাহত থাকবে।’
একথা বলার অপেক্ষা রাখে না, কাশ্মীরি জনগণ কাশ্মীরের ভারতভুক্তি কখনোই মেনে নেয়নি। তাদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও জবরদস্তির মাধ্যমে কাশ্মীরকে ভারতভুক্ত করা হয়। নিরংকুশ আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার বা বৃহত্তর স্বায়ত্ত্বশাসনের জন্য কাশ্মীরি জনগণ সেই ১৯৪৭ সাল থেকে লড়ে যাচ্ছে।
এই ন্যায়সঙ্গত লড়াই-সংগ্রাম দমনে ভারত লাগাতার এক চক্ষুনীতি অনুসরণ করে আসছে। এই দমন-দলনে কাশ্মীরের জনগণের মধ্যে এ প্রত্যয় দৃঢ় হয়েছে যে, কোনো অবস্থাতেই ভারতের সঙ্গে থাকা সম্ভব নয়। স্বাধীনতাই একমাত্র মুক্তির উপায়। বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, স্বাধীনতা অনিবার্য হলেও কাশ্মীরি জনগণের একটি ক্ষুদ্রাংশ সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫-ক অনুচ্ছেদের সুবাদে ভারতের সঙ্গে এক ধরনের মানসিক নৈকট্য অনুভব করতো।
তাদের সেই মানসিক নৈকট্যটিও অনেক আগে শেষ হয়ে গেছে। বিজেপিসহ সংঘ পরিবারভুক্ত সংগঠনসমূহের কর্তা ব্যক্তিরা হয়তো ভাবছেন, ৩৭০ ও ৩৫-ক অনুচ্ছেদ রহিত করার মাধ্যমে কাশ্মীরকে চিরদিনের জন্য ভারতের অংশ করে নেয়ার কাজটি তারা সম্পন্ন করেছেন। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা অবশ্য সেটা মনে করেন না। তাদের মতে, কাশ্মীরকে চিরদিনের মতো হারানোর একটা পথ রচিত হয়েছে এর মাধ্যমে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, কাশ্মীর কখনই ভারতের অংশ ছিল না। কাশ্মীরের স্বাধীনচেতা সংগ্রামী জনগণ কখনোই বরিহরাগত আগ্রাসন ও শাসন মেনে নেয়নি।
কাশ্মীর ভারতের প্রতিবেশী। তবে কখনোই তা তার অংশ বা অধীন ছিল না। অপূর্ব নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অধিকারী কাশ্মীরকে ভূস্বর্গ বলা হয়। সম্রাট জাহাঙ্গীর বলেছিলেন, ‘আগার ফেরদৌস বেরোয়ে যমিন আস্ত,… হামিন আস্ত, হামিন…. আস্ত, হামিন আস্ত।’
(পৃথিবীতে যদি কোনো বেহেশত থাকে, তবে তা এখানে, এখানে, এখানে।) শান্তি ও সৌন্দর্যের কারণে কাশ্মীর সুদূর অতীতকাল থেকে বহিরাগত বিজেতাদের প্রলুব্ধ করেছে। তারা অভিযান চালিয়ে ভূস্বর্গ দখল করে নিয়েছে। কিন্তু সে দখল ধরে রাখতে পারেনি।
অন্য কোনো শক্তি তা দখলে নিয়েছে কিংবা কাশ্মীরিরাই স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করেছে। কোনো আগ্রাসী শক্তিই আখেরে কাশ্মীরে টিকে থাকতে পারেনি। এটাই কাশ্মীরের ইতিহাস।
কাশ্মীর সুপ্রাচীন এক জনবসতির নাম। খ্রিস্টপূর্ব তিন হাজার বছর আগে এখানে জনবসতি গড়ে ওঠে বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন। এই হিসাবে এখন থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে এখানে জনবসতি ছিল। সম্ভবত নুহ (আ.) এর বংশধররাই এখানে বসতি গড়ে তোলে।
প্রত্নতাত্ত্বিকেরা কাশ্মীরে প্যালিওলাথিক, নিওলিথিক ও মেগালিথিক-সকল যুগের প্রত্ননিদর্শন খুঁজে পেয়েছেন। এসব নিদর্শন কাশ্মীরের জনবসতির প্রাচীনত্বের সাক্ষ্য দেয়। অনেকেই মনে করেন, আদি বাসিন্দাদের অনেকে বিভিন্ন সময়ে হত্যাকাণ্ড প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও রোগব্যাধির শিকার হলেও কাশ্মীরের এখনকার জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই আদি বাসিন্দাদের উত্তরাধিকার বহন করছে।
কাশ্মীরি জনগোষ্ঠী সকল যুগে সকল ক্ষেত্রে প্রতিবেশী জনগোষ্ঠীর চেয়ে অগ্রসর ছিল বলে অনুমিত হয়। তাদের সভ্যতার বিকাশ ধারা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, প্রত্যক্ষ নিদর্শন ইত্যাদি থেকে সেটা বুঝা যায়। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যায়, ভারতে যখন ইতিহাস রচনা বা চর্চার কোনো ধারণাই ছিল না, কাশ্মীরে তখন ইতিহাস লিখিত হয়েছে। এইসঙ্গে সংরক্ষণও।
খ্রিস্টপূর্ব ১১৮৪ সাল থেকে পরবর্তী সময়ের কাশ্মীরের প্রায় সকল শাসকের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায় ইতিহাস গ্রন্থাদিতে। শাসনকাল ও শাসকদের একটি তালিকা দিয়েছেন পারভেজ দেওয়ান। সেই তালিকা থেকে দেখা যায়, মহাভারতের যুদ্ধের (তিন থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে) আগে রাজা প্রথম গোনানডা ২০ বছর কাশ্মীর শাসন করেন।
এরপর অজ্ঞাত সময় থেকে পান্ডুরাজবংশ শাসন করে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় সড়ক পর্যন্ত। সেখান থেকে খ্রিস্টযুগের শুরু পর্যন্ত শাসন করে মৌর্য রাজবংশ। কুশান রাজবংশের শাসন ছিল ১৭৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। তারপর গোনানডা (দ্বিতীয়) রাজবংশের শাসন চালু ছিল পঞ্চম শতাব্দী পর্যন্ত। হুন শাসকদের শাসন ছিল ৬২৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পরের ৯৪৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শাসন করেন কারকোটা রাজবংশের শাসকরা।
অতঃপর বিচ্ছিন্ন কয়েকজন রাজা শাসন করেন কিছুকাল। ১১০১ সাল থেকে শুরু হয় লোহারা রাজবংশের শাসন। দ্বিতীয় লোহারা রাজবংশের শাসন শেষ হয় ১৩৩৯ সালে। সেখান থেকে শুরু হয় মুসলিম বা সুলতানী শাসন। কিছু ব্যতিক্রম বাদে শাহ মীর রাজবংশের শাসনই মূলত সুলতানী শাসন।
এরপর ধারাবাহিকভাবে মীর্জা হায়দার দৌলত কাসগরী (১৫৪১-১৫৫১), চাক রাজবংশ (১৫৬১-১৫৮৯), মোঘল (১৫৮৯-১৭৫২), আফগান (১৫৫২-১৮১৯), শিখ (১৮১৯-১৮৪৬) এবং ডোগরা (১৮৪৬-১৯৪৭) শাসনের অধীনে ছিল কাশ্মীর।
শাসনকাল ও শাসকের এই তালিকা থেকে দেখা যাচ্ছে, প্রায় পাঁচশ’ বছর মুসলমান শাসকরা কাশ্মীর শাসন করেছেন। কাশ্মীরের সুদীর্ঘ ইতিহাসে মুসলিম শাসনামলটিই ‘স্বর্ণযুগ’ হিসাবে স্বীকৃত। কাশ্মীরে ইসলামের আগমন সম্পর্কে একজন ঐতিহাসিক বলেছেন, আরব থেকে উত্তর ভারত হয়ে ইসলাম কাশ্মীরে এসেছে।
কাশ্মীরের একজন শাসক ইসলাম গ্রহণের পর কাশ্মীরিদের অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করে। এছাড়া সুফী-দরবেশদের প্রভাবে বিপুল সংখ্যক কাশ্মীরি ইসলাম গ্রহণ করে। এভাবে কাশ্মীর ইসলামী সভ্যতা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের গর্বিত পীঠস্থানে পরিণত হয়। গত শতকের মাঝামাঝি সময়ে দেখা যায়, কাশ্মীরের মোট জনসংখ্যার ৯৯ শতাংশই মুসলমান। এখনো সেটা বহাল আছে। জম্মুতে মুসলমানের সংখ্যা হিন্দুর প্রায় সমান থাকলেও বর্তমানে হিন্দুর সংখ্যা ৬৫ শতাংশ।
১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের আগে যখন জম্মু-কাশ্মীর ডোগরা রাজাদের অধীন, তখন তার আয়তন ছিল ২ লাখ ২২ হাজার ৩৩৬ বর্গ কিলোমিটার। এই বিশাল ভূখণ্ড এখন তিন রাষ্ট্রের মধ্যে বিভাজিত হয়ে আছে। ভারতের নিয়ন্ত্রণে আছে প্রায় এক লাখ বর্গ কিলোমিটার, যা মোট ভূমির ৪৫ শতাংশ।
পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে আছে ৭৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার বা ৩৬ শতাংশ। আর চীনের অধীনে আছে ৩৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার বা ১৬ শতাংশ। পরবর্তীতে পাকিস্তান চীনের মধ্যে সীমান্ত সংক্রান্ত সমঝোতায় চীন পাকিস্তানের মধ্য থেকে আরও পেয়েছে পাঁচ হাজার ৮০০শ’ বর্গ কিলোমিটার। এতে চীনের নিয়ন্ত্রিত এলাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ শতাংশ।
পাকিস্তান-ভারত ও চীন-ভারত যুদ্ধের মধ্যদিয়ে কাশ্মীর এই তিন রাষ্ট্রের মধ্যে বিভাজিত হয়েছে। ১৯৪৮ ও ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ বাঁধে। এর মধ্যে ১৯৪৮ সালের যুদ্ধে পাকিস্তান কাশ্মীরের একাংশ দখলে নেয়, যা আজাদ কাশ্মীর নামে পরিচিত। বাকি অংশ ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকে।
১৯৬২ সালে চীন-ভারত যুদ্ধের সময় চীন কাশ্মীরের অংশ বিশেষ দখল করে, যা তার ভূখণ্ড বলে চীন দাবি করে। এই তিন রাষ্ট্রে বিভাজিত কাশ্মীরের ভারত অধিকৃত অংশটি এখন তার স্বায়ত্তশাসন ও সংবিধানে বর্ণিত বিশেষ মর্যাদা ও সুযোগ হারালো। শুধু তাই নয়, তাকে দ্বিখণ্ডিত করে লাদাখ এলাকাকে আলাদা করা হয়েছে।
কাশ্মীরের বিভাজন ও কাশ্মীরিদের বর্তমান বিপর্যয়ের সূত্রপাত অনেক আগে। কাশ্মীরে মোঘল শাসনের অবসান ঘটে ১৭৫২ সালে। অতঃপর সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয় আফগান শাসন, যা স্থায়ী হয় ১৮১৯ সাল পর্যন্ত। আফগান শাসন কাশ্মীরিদের জন্য খুব সহনযোগ্য ছিল না। কোনো কোনো শাসক সুশাসক ও ন্যায়বিচারক হিসাবে খ্যাতি লাভ করলেও কোনো কোনো শাসক ছিলেন অত্যাচারী ও জনপীড়ক।
শেষ পর্যন্ত আফগান শাসকদের দুর্বলতার কারণে ও জনসমর্থন না থাকায় শিখ সাম্রাজ্যের অধিশ্বর রঞ্জিত সিং আফগানদের যুদ্ধে পরাজিত করে কাশ্মীর অধিকার করে নেন। শিখ শাসন স্থায়ী হয় ২৮ বছর (১৮১৯-১৮৪৬)। এরপর ব্রিটিশ-শিখ যুদ্ধে (১৮৪৫-১৮৪৬) শিখেরা ব্রিটিশদের কাছে পরাজিত হয়। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে, শিখ সাম্রাজ্যের অধীনে বেশ কিছু প্রশাসনিক প্রদেশ ছিল যার মধ্যে জম্মু, কাশ্মীর, লাদাখ, বালটিস্তানের গিলগিট উল্লেখযোগ্য।
শিখ সাম্রাজ্যের অধীন জম্মুর শাসক ছিলেন ডোগরা (হিন্দু বর্ণবিশেষ) জমিদার গুলাব সিং। পরে তিনি লাদাখ ও বালটিস্তানের শাসন কর্তৃত্বও অধিকার করেন। শিখ সাম্রাজ্যের অধীন থাকাকালেই ডোগরা জমিদার ব্রিটিশদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। যখন ব্রিটিশ-শিখ যুদ্ধ বাঁধে তখন গুলাব সিং শিখদের পক্ষাবলম্বন করা থেকে বিরত থাকেন। যুদ্ধ শেষে শিখদের পরাজয়ের পর যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তাতে কাশ্মীরসহ শিখ সাম্রাজ্যের কিছু এলাকা ব্রিটিশদের হাতে আসে।
৯ মার্চ, ১৮৪৬ তে এই চুক্তি হয়। এর এক সপ্তাহ পর (১৬ মার্চ) অমৃতসরে গুলাব সিংয়ের সঙ্গে ব্রিটিশদের আর একটি চুক্তি হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী ৭৫ লাখ রুপির বিনিময়ে গুলাব সিং ব্রিটিশদের কাছ থেকে কাশ্মীরসহ পাহাড়ী কয়েকটি জেলার মালিকানা লাভ করেন। একটি ভূখণ্ড এবং তার জনগণ এখানেই অর্থের বিনিময়ে বিক্রী হয়ে যায়। এদিকে লক্ষ্য রেখেই মহাকবি আল্লামা ইকবাল কাশ্মীরিদের ‘বিক্রীত জাতি’ হিসাবে অভিহিত করেছেন।
এ প্রসঙ্গে সাংবাদিক আর এস গুলের একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করা যেতে পারে। তিনি লিখেছেন, ‘ডাচদের কাছে নিউইর্য়ক সিটি বিক্রি হয়েছিল ১৬১৪ সালে ২৪ ডলারে। রাশিয়ানদের কাছ থেকে ১৮৬৭ সালে আমেরিকা কিনেছিল রাশিয়ান আমেরিকা ৭.২ মিলিয়ন ডলারে। পরে তার নাম হয়েছিল আলাস্কা। কিন্তু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ১৮৪৬ সালে কাশ্মীর বিক্রির ঘটনা কোনো জাতি বিক্রি হওয়ার সর্বাধিক আলোচিত বিষয়। ১৭০ বছর পরও ৭৫ লাখ রুপির ক্রয়চুক্তি, যা কাশ্মীর থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরে অমৃতসরে স্বাক্ষরিত হয়েছিল, এখনো কাশ্মীরি জাতিসত্ত্বার সমস্যার মূল হিসাবে সামনে আসছে।’
বস্তুত ১৯৪৭ সালের পর সৃষ্ট কাশ্মীর সঙ্কটের মূল নিহিত রয়েছে ‘বিক্রী চুক্তির’ মধ্যে। এই চুক্তি বলে ডোগরা জমিদার গুলাব সিং কাশ্মীরের মালিক বনে গেলেও কাশ্মীরিরা কখনো তার মালিকানা স্বীকার করে নেয়নি। শিখ সমাজের অধীন কাশ্মীরের শাসক ছিলেন শেখ গোলাম মহিউদ্দীন। তিনি যখন মৃত্যুশয্যায়, তার পুত্র শেখ ইমামুদ্দীন গভর্নরের দায়িত্ব নিয়ে গুলাব সিংয়ের কাছে কাশ্মীর হস্তান্তর করতে অস্বীকার করেন।
ফলে তাদের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং যুদ্ধে গুলাব সিং পরাজিত হন। তখন তার সাহায্যে এগিয়ে আসে ব্রিটিশ সৈন্য। উভয়পক্ষের মধ্যে যুদ্ধে শেখ ইমামুদ্দীন পরাজিত হন। অতঃপর ডোগরা জমিদার (রাজা, মহারাজ) কাশ্মীরিদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন ও শোষণের অবিশ্বাস্য অধ্যায়ের সূচনা করেন। ডোগরারা একশ’ বছর (১৮৪৬-১৯৪৭) কাশ্মীর দখল ও শাসন করেন।
এই সময়ে তারা তাদের বিনিয়োজিত অর্থের সাতশত গুণ বেশি অর্থ কাশ্মীরিদের কাছ থেকে ট্যাক্স-খাজনা বাবদ আদায় করেন। ডোগরাদের অত্যাচার-নির্যাতন ও শোষণ এতই নির্মম ও অমানবিক ছিল যে, ব্রিটিশ কর্মকর্তা লর্ড কিম্বারলি ১৮৮৪ সালে তখনকার ভাইসরয়ের কাছে লিখেছিলেন, ‘যদিও হিন্দু পরিবারকে রাজ্যের সার্বভৌমত্ব ন্যস্ত করা হয়েছিল, তবু মুসলমান জনগণের পক্ষে ব্রিটিশ সরকারের হস্তক্ষেপ করতে ইতোমধ্যেই বেশি দেরি হয়ে গেছে।’
বলা বাহুল্য, লর্ড কিম্বারলির বক্তব্যের ওপর যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে ওই ‘হস্তক্ষেপ’ যদি তখনই করা হতো, ডোগরাদের কাছ থেকে শাসন কর্তৃত্ব ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করতো তাহলে কাশ্মীরের পরবর্তী ইতিহাস ভিন্নরকম হতে পারতো। ডোগরা রাজাদের অধীনস্ত জম্মু-কাশ্মীরসহ অন্যান্য এলাকা সরাসরি ব্রিটিশ শাসনের অধিভুক্ত থাকলে ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের নীতিমালা অনুযায়ী কাশ্মীর পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হতো অনিবার্যভাবে। সেক্ষেত্রে কাশ্মীর নিয়ে পরবর্তীতে পাকিস্তান-ভারত একাধিক যুদ্ধ হতো না। কাশ্মীর সংকট সৃষ্টিই হতো না।
আপনার মতামত জানানঃ