গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা ও গাজায় পাল্টা হামলার জেরে দুই মাসে মধ্যপ্রাচ্য ও এর বাইরের বিভিন্ন অঞ্চলে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের গ্রহণযোগ্যতা ও প্রভাব নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। গাজায় ইসরায়েলের নিরন্তর বোমা হামলায় হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ নিহত হওয়ার প্রেক্ষাপটে হামাস এখন নারী ও শিশুদের ওপর বর্বর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো একমাত্র সশস্ত্র সংগঠন হয়ে উঠেছে
মার্কিন গোয়েন্দাদের বৃহৎ পরিসরের এক গবেষণায় সম্প্রতি এসব তথ্য উঠে আসে। গবেষণায় অংশ নেওয়া কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে সিএনএন জানায়, সংগঠনটি নিজেদের আরব বিশ্বের বিভিন্ন অংশ ও মুসলিম বিশ্বে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সুরক্ষাকারী ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সাফল্যের সঙ্গে লড়াইকারী হিসেবে নিজেদের সফলভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। গত অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের হামলায় নারী-শিশুসহ ১ হাজার ২০০ জন নিহত হওয়ার পর থেকে তাদের প্রভাব বাড়তে থাকে।
হামাসের দৃষ্টিতে দক্ষিণ ইসরায়েলে ৭ অক্টোবরের হামলা ছিল একটি সফল অভিযান। তখন থেকে সংগঠনটিকে এর ক্রেডিট দেওয়া হচ্ছে; বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের কারামুক্ত করতে ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনার পর অধিকৃত পশ্চিম তীরে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েল কয়েকশ ফিলিস্তিনিকে মুক্ত করে। তাদের অধিকাংশই পশ্চিম তীরের বাসিন্দা।
মার্কিন সরকারের এক জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্যাপক জনপ্রিয় কোনো সংগঠন ছিল না হামাস। তবে বর্তমানে তারা বেশ জনপ্রিয়। ইসরায়েলে হামলার কারণে গাজার বাইরে হামাসের জনপ্রিয়তা বেড়েছে।
নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, অধিকৃত পশ্চিম তীরের চেয়ে অবরুদ্ধ গাজায় ৭ অক্টোবরের হামলার সমর্থন কম। পশ্চিম তীরের ৬৮ শতাংশ মানুষ এ হামলা সমর্থন করেছেন। পক্ষান্তরে গাজায় সমর্থন ছিল ৪৭ শতাংশ মানুষের। যুদ্ধ চলাকালে এ জরিপ চালানোয় এমনটা ফল হয়ে থাকতে পারে। কারণ, ইসরায়েলের অব্যাহত বোমা হামলায় গাজার বহু বাসিন্দা বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। জরিপে তাদের অসন্তোষ উঠে আসতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা এরই মধ্যে সতর্ক করে বলেছেন, ইসরায়েলের বোমায় বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের মৃত্যু হামাসের জনপ্রিয়তাকে আরও বাড়াবে। তারা এ-ও বলছেন, এ ধরনের বোমা হামলা কেবল সন্ত্রাসবাদকে দেশে-বিদেশে উস্কে দেবে। চলতি মাসের শুরুর দিকে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেন, এটা এমন এক ধরনের লড়াই, যেখানে কেন্দ্রে রয়েছেন বেসামরিক মানুষজন।
মার্কিন কর্মকর্তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, ফিলিস্তিন ছাড়াও বাইরের দেশগুলোতেও জনপ্রিয়তা বেড়েছে হামাসের। ফিলিস্তিনের সেন্টার ফর পলিসি ও সার্ভে রিসার্চের জরিপে দেখা গেছে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে হামাসের জনপ্রিয়তা সেপ্টেম্বরের ১২ শতাংশ থেকে বেড়ে ডিসেম্বরে ৪৪ শতাংশ হয়েছে। জর্ডানে, যেখানে অর্ধেকের বেশি মানুষ ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত, সেখানে মানুষ রাস্তায় নেমে হামাসের সমর্থনে বিক্ষোভ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জনাথন প্যানিকফ বলেন, ইসরায়েলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে কিছু একটা করছে– অধিকৃত পশ্চিম তীরে হামাসকে এমন একটি সংগঠন হিসেবেই দেখা হয়।
হামাসের এ উত্থানে ঝুঁকির কারণ দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে তারা মনে করেন, হামাসকে নিশ্চিহ্ন করা সম্ভব নয়। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, হামাসের সামরিক নেতৃত্বকে পরাজিত করা সম্ভব হতে পারে। কিন্তু যুদ্ধ করে সংগঠনটির আদর্শকে ধ্বংস করা সম্ভব নয়। মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, হামাসের প্রভাব কেমন হবে, তা পরিমাপ করা বস্তুত কঠিন।
২০০৭ সাল থেকে গাজায় সরকার পরিচালনা করছে হামাসের রাজনৈতিক শাখা। ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ইতিহাস সৃষ্টিকারী হামলার পর এখন গাজার ভেতরেও ইহুদিবাদী সেনাদের প্রবল পরাক্রমে প্রতিরোধ করছে সংগঠনটি। গত ৭ অক্টোবর থেকে হামাসের হামলায় ইসরায়েলের অন্তত ৪৭২ সেনা নিহত হয়েছে। তবে হামাসের দাবি, এ সংখ্যা আরও বেশি হবে।
আপনার মতামত জানানঃ