বেশকিছু বাণিজ্যিক ব্যাংক ডলার সংকটের পাশাপাশি তারল্য সংকটও মোকাবিলা করছে। ডলার সংকট মোকাবিলায় যেমন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ডলার কিনছে, তেমনি তারল্য সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ তারল্য সহায়তার আওতায় ধার নিচ্ছে।
গত ৫ দিনে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নিয়েছে ৬৮ হাজার কোটি টাকা। একই সময়ে কলমানি মার্কেট থেকে ধার নিয়েছে আরও ১৩ হাজার কোটি টাকা। দুই খাত থেকে ধার নিয়েছে ৮১ হাজার কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধার নিয়েছে বুধবার। এদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রেপোর (কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কেনা ট্রেজারি বিল পুনরায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কিনে নেওয়া) মাধ্যমে ধার নিয়েছে ২৩ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা।
সাম্প্রতিক সময়ে রেপোর মাধ্যমে এটিই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ধার দেওয়ার ঘটনা। ২৮টি ব্যাংক ও ২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এসব অর্থ ধার নিয়েছে। এর আগে একদিনে সর্বোচ্চ ২৬ হাজার কোটি টাকা ধার দেওয়া হয়েছিল।
একই দিনে কলমানি মার্কেট থেকে ব্যাংকগুলো ধার নিয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। এ দুটে মিলে ব্যাংকগুলো এক দিনে ধার করেছে ২৬ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা।
আমানতের চেয়ে ঋণ প্রবাহ বেশি হওয়া, রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স কমার কারণে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকগুলোতে তারল্য প্রবাহ কমে গেছে। এ ছাড়া আমদানি ব্যয় ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কিনছে। এতে মোটা অঙ্কের অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে যাচ্ছে।
এর বাইরেও সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ছাপানো টাকায় সরকারকে ঋণ দেওয়া হচ্ছে না। ফলে সরকারকে ঋণের জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ট্রেজারি বিল বিক্রি করে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে সরকারকে ঋণের জোগান দিচ্ছে।
এ কারণে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট বেড়েছে। এই সংকট মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সরকারি ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগ করা অর্থ পুনরায় ধার হিসাবে দিচ্ছে। ১ দিন বা ৭ দিন মেয়াদে এসব ধার নিচ্ছে ব্যাংকগুলো। এর মাধ্যমে তারল্য সংকট মোকাবিলা করা হচ্ছে।
গত সপ্তাহের শুরুর দিন থেকেই ব্যাংকগুলোর ধারের প্রবণতা ছিল। ফলে রোববার রেপোর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ধার নিয়েছিল ১৪ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, সোমবার নিয়েছিল ১৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা, মঙ্গলবার নিয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। বুধবার নিয়েছে ২৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এসব মিলে ব্যাংকগুলো ৪ দিনে ধার নিয়েছে ৬৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
এর বাইরে রোববার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রতিদিনই কলমানি মার্কেট থেকে ব্যাংকগুলো ধার করেছে। গত ৫ দিনে এক ব্যাংক অন্য ব্যাংক থেকে ধার নিয়েছে ১৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বৃৃহস্পতিবার ১ দিনেই নিয়েছে ৫ হাজার ৪১ কোটি টাকা। সুদের হার ৯ দশমিক ২৫ শতাংশে বেঁধে রাখা হলেও মেয়াদি ঋণের সুদহার বাড়ছে। এটি ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে গত সপ্তাহে। বৃহস্পতিবার এ হার সর্বোচ্চ ছিল সাড়ে ১০ শতাংশ।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদের হার বাড়ানোর কারণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার নেওয়ার খরচ বেড়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার কম নেয় সে কারণেই নীতির সুদের হার বাড়ানো হয়েছে।
এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে টাকার প্রবাহ কমাতে চাচ্ছে। একই সঙ্গে ট্রেজারি বিলের সুদের হারও বেড়েছে। এ হার এখন ১১ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ফলে সরকারকে ঋণ দিয়েও ব্যাংকগুলো বাড়তি মুনাফা করছে।
আপনার মতামত জানানঃ