ভিজিএফ কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে এক গৃহবধূকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে আওয়ামী লীগের এক নেতা। একই সঙ্গে ওই ধর্ষণের ঘটনা ভিডিওচিত্র ধারণ করে তা ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেয়। গত বছরের ৩ অক্টোবর নাটোরের নলডাঙ্গায় এ ঘটনা ঘটে। জানাজানির পর গত শুক্রবার(০৮জানু) রাতে ওই ঘটনায় মামলা হলে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- উপজেলার পিপরুল ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম দেওয়ান ও তার সহযোগী বকুল হোসেন। অপর সহযোগী রেজাউল পলাতক রয়েছেন।
নাটোরে গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় বলা হয়েছে, গত বছরের ৩ অক্টোবর বিকেলে নলডাঙ্গার পিপরুল ইউনিয়নে এক দিনমজুরের স্ত্রীকে ভিজিএফের কার্ড করে দেওয়ার কথা বলে বাড়িতে ডেকে নেন আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিম দেওয়ান। পরে ওই নারীকে পাশের একটি বাড়িতে নিয়ে ধর্ষণ করেন তিনি। এ সময় তার দুই সহযোগী বকুল ও রেজাউল ধর্ষণের দৃশ্যের ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। এ ঘটনা কাউকে বলতে বারণ করে গৃহবধূকে ভয়ভীতি দেখানোর পাশাপাশি সবসময় তাকে নজরদারিতে রাখতেন ইব্রাহিম দেওয়ান। পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে গত শুক্রবার রাতে ওই গৃহবধূ বাদী হয়ে নলডাঙ্গা থানায় ইব্রাহিম দেওয়ান, বকুল হোসেন ও রেজাউল করিমকে আসামি করে ধর্ষণ মামলা করেন। মামলার পর রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে ইব্রাহিম ও বকুলকে গ্রেপ্তার করে।
এ ব্যাপারে পিপরুল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কলিম উদ্দিন জানান, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। ভিজিএফ ও ভিজিডি কার্ড দেওয়ার নামে ইব্রাহিম দেওয়ান যে নোংরামি করেছেন, তা ক্ষমার অযোগ্য এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ঘটনায় তিনি দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বলেন, মামলা দায়েরের পর পুলিশ আজ ভোরে আসামি ইব্রাহিম দেওয়ান ও বকুল হোসেনকে নিজ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। সকাল সাড়ে ১০টায় তাদের নাটোরের আদালতে হাজির করলে আদালত তাদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। অপর আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিম দেওয়ানের নামে এলাকায় একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সালিশের নামে প্রতারণা, ছিনতাই, সুদ ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয় নেতারা ধর্ষণসহ বহু অপকর্মই করে থাকেন, যার বিরুদ্ধে স্থানীয়রা অভিযোগ করতেও ভয় পান। স্থানীয় পদপ্রাপ্ত প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে থানা প্রশাসনও এক প্রকার নমনীয় থাকেন। সেটা হোক ভয় অথবা কোনো বিনিময় মাধ্যমে। খুব ঠেকায় না পড়লে স্থানীয় প্রশাসন মামলা নেন না। ফলে স্থানীয় নেতারাও লিপ্ত থাকেন লাগাম ছাড়া অপরাধকর্মে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলা বা অনিয়মসহ স্থানীয় নেতাদের ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করেন, ক্ষমতার কারণে স্থানীয় নেতাদের কুদৃষ্টির শিকার হোন গ্রামের অসহায় নারীরা এবং ধর্ষণের শিকার হলেও অভিযোগ তুলতে কিংবা মামলা করতে ভয় পান। দেশে আইনের অনুশাসনের অভাব রয়েছে বলে এসব ঘটনা ঘটে বলে মনে করেন তারা।
এসডাব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬১০
আপনার মতামত জানানঃ