অনেকের মুঠোফোন, ব্যাগ, ম্যানিব্যাগ চেক করা হয়। এই পথের যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, মোবাইল ফোন, ব্যাগ, মানিব্যাগ ও গাড়ির সিটের নিচে পর্যন্ত তল্লাশি করা হয়েছে। কোথায় যাচ্ছে তার বিস্তারিত তথ্য দিতে হয়েছে। তথ্যে গরমিল হলেই গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বিএনপি’র সমাবেশে যাচ্ছি কিনা তাও জিজ্ঞাসা করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শনিবার সকাল থেকেই গণপরিবহনের সংকট দেখা দিয়েছে গাজীপুরের বিভিন্ন অংশে।
বাস ছাড়াও সিএনজি, রাইড শেয়ারিং বাইক বা গাড়ি কিংবা ভাড়ায় চালিত প্রাইভেট কারসহ কোনো যানবাহনই তেমন দেখা যাচ্ছে না। সব মিলিয়ে ভোগান্তির পাশাপাশি পুলিশের চেকিং-তল্লাশিতে বিব্রত সাধারণ জনগণ।
শনিবার সকাল থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত টঙ্গীর গাজীপুরা, কলেজগেট, চেরাগ আলী, স্টেশন রোড ও টঙ্গী বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, যানবাহন না পেয়ে কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেছেন অনেকে। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পর অনেকে পায়ে হেঁটে রওনা দিয়েছেন গন্তব্যে। আবার কেউ কেউ ফিরে গেছেন নিজ বাসায়।
মিজানুর রহমান চাকরি করেন রাজধানীর তেজগাঁওয়ের একটি ছাপাখানায়। সকাল ৯টার দিকে নিজ বাসা থেকে টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় পৌঁছান। তিনি বলেন, ‘বাসের জন্য কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো লাভ হয়নি। রাইড শেয়ারিং অ্যাপে উবার, পাঠাও পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছি।’
সকাল থেকে টঙ্গী স্টেশন রোড এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে যাত্রীদের ব্যাগ, জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইল ফোন তল্লাশি করছে পুলিশ। এ ছাড়া সন্দেহজনক ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্তে পুলিশ তাদের আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এতে যাত্রীরা বিব্রত বোধ করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক যাত্রীই এমন অভিযোগ করেছেন।
টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় তল্লাশি চৌকিতে দায়িত্বরত টঙ্গী (পূর্ব) থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এম সাফায়েত ওসমান বলেন, সমাবেশ উপলক্ষে ঢাকায় কোনো নাশকতাকারী, ক্ষতিকর দ্রব্য ও বেআইনি অস্ত্র নিয়ে যাতে কোনো সন্ত্রাসী প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য তল্লাশি ও নজরদারি করা হচ্ছে।’
সড়কপথের পাশাপাশি টঙ্গীর তুরাগ নদের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে নৌ-পুলিশ। আজ শনিবার সকাল থেকে তুরাগ নদে চলাচল করা ডিঙি নৌকা ও মালামাল পরিবহনকারী নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তুরাগ নদের এক মাঝি বলেন, ‘গতকাল রাতেই পুলিশের পক্ষ থেকে খেয়া পারাপার ও সব নৌযান চলাচল বন্ধ রাখতে বলা হয়।’
টঙ্গী নৌ-পুলিশ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক হজরত আলী মিলন বলেন, ‘নৌপথে আমাদের তল্লাশি চলছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নৌপথের যাত্রীদের দেহ ও তাদের সঙ্গে থাকা ব্যাগে তল্লাশি করা হচ্ছে।’
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টঙ্গী স্টেশন রোড, টঙ্গী বাজার, কলেজগেট, কামারপাড়া মোড়সহ বেশ কয়েকটি স্থানে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। এ ছাড়া আবদুল্লাহপুর ও বেড়িবাঁধ এলাকায় তল্লাশি চৌকি বসানো হয়েছে।
বোর্ড বাজার এলাকায় থেকে রিকশাযোগে আবদুল্লাহপুর এলাকায় আসা নিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। রাস্তায় বাস নেই বললেই চলে। আধা ঘণ্টা পর পর একটা বাসের দেখা মিলছে। তাও সব রুটের বাস নেই। গণপরিবহন না থাকার সুযোগে তাঁরা দ্বিগুণ-তিন গুণেরও বেশি ভাড়া হাঁকাচ্ছেন। আমরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছি।’
গাজীপুর জেলা বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান আহম্মেদ বলেন, ‘মহাসড়কে গণপরিবহন স্বাভাবিকভাবেই চলছে। আজ ঢাকায় দুই দলের সমাবেশে যাওয়ার জন্য গাজীপুর থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়ে সমাবেশে গেছেন দুই দলের নেতা-কর্মীরা। তাই মহাসড়কে গণপরিবহন তুলনামূলক কম।’
আপনার মতামত জানানঃ