ভারতের রাজধানী দিল্লির অদূরে হরিয়ানার নূহ-তে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে দু’জন নিহত ও আরও বহু লোক আহত হয়েছেন। ওই সহিংসতার পর গুরগাঁওতে একটি মসজিদ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, হামলায় ওই মসজিদের ইমামও নিহত হয়েছেন বলে জানা যাচ্ছে।
গোটা এলাকা জুড়ে পরিস্থিতি থমথমে। হরিয়ানা সরকার অবশ্য দাবি করছে অবস্থা এখন নিয়ন্ত্রণে, প্রচুর সংখ্যায় পুলিশও মোতায়েন করা হয়েছে।
নূহ-তে এই সহিংসতার সূত্রপাত হয় গতকাল (সোমবার) বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) একটি ধর্মীয় শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে। মাসকয়েক আগে নূহ-তে জুনায়েদ ও নাসির নামে দুই মুসলিম যুবককে তাদের গাড়িতে জীবন্ত জ্বালিয়ে মারার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত, মোনু মানেসর নামে এক ব্যক্তি ওই শোভাযাত্রায় অংশ নেবেন – এই খবর জানাজানি হলে এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
মোনু মানেসর নিজে অবশ্য পরে বার্তা সংস্থা পিটিআই-এর কাছে দাবি করেছেন, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পরামর্শেই তিনি শেষ পর্যন্ত ওই শোভাযাত্রায় যোগ দেননি।
কিন্তু মিও মুসলিম অধ্যুষিত নূহ ও মেওয়াট এলাকায় এই মিছিল ও তাতে মোনু মানেসরের যোগদানের খবরকে ঘিরে আগে থেকেই স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ ছিলেন।
এরপর ‘বৃজ মন্ডল জলাভিষেক যাত্রা’ নামে ভিএইচপি-র ওই ধর্মীয় মিছিলটি যখন বিকেলে নূহ-র খেডলা মোড় দিয়ে যাচ্ছিল, তখন এক বিরাট জনতা তাতে বাধা দেয়।
এরপরই দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, পাথর ছোঁড়াছুঁড়ি শুরু হয়ে যায়। রাস্তায় বহু গাড়ি ও মোটরবাইকও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। দিল্লির বেশ কাছেই গুরগাঁও-আলোয়াড় জাতীয় মহাসড়কের একটা বিস্তীর্ণ অংশ তখন কার্যত রণক্ষেত্রর চেহারা নিয়েছিল।
ওই সংঘর্ষে দুজন ‘হোমগার্ড’ বা সরকারি রক্ষী নিহত হয়েছেন বলে পরে হরিয়ানা পুলিশ সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে। আরও অন্তত জনাবিশেক লোক গুরুতর আহত হয়েছেন এবং স্থানীয় হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা চলছে।
এদিকে ক্রমশ ওই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে নূহ-র লাগোয়া গুরগাঁও এলাকাতেও। মাঝরাতের পর গুরগাঁওয়ের সেক্টর ৫৭ এলাকায় বিরাট জনতা একটি মসজিদে আগুন ধরিয়ে দেয়।
ওই মসজিদের ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান বিবিসি হিন্দির দিলনওয়াজ পাশাকে জানিয়েছেন, “মসজিদে তখন আমাদের ইমাম সাদ ছিলেন, তিনি হামলায় নিহত হয়েছেন। আরও কয়েকজন জখম হয়েছেন।”
আঞ্জুমান জামা মসজিদে ওই হামলার ঘটনায় একজন ব্যক্তি যে নিহত হয়েছেন, পরে গুরগাঁও পুলিশের পক্ষ থেকেও সে খবরের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
ইমাম সাদের ভাই শাদাব আনওয়ার সকালে বিবিসিকে জানান, “আমি শুধু এক ঝলকের জন্য আমার ভাইয়ের লাশটা দেখতে পেয়েছি। এখন আমরা মর্গের সামনে অপেক্ষা করছি, এখান থেকে গিয়েই আমরা এফআইআর দায়ের করব।”
মসজিদে হামলা চালানোর অভিযোগে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে বলেও পুলিশ নিশ্চিত করেছে। নূহ ও গুরগাঁও-তে গত বিকেল থেকে শুরু হওয়া এই হিন্দু-মুসলিম সংঘাতের রেশ এখনও থামেনি, গোটা এলাকায় পরিস্থিতি থমথমে হয়ে রয়েছে।
আজ (সোমবার) বেলা এগারোটা নাগাদ হরিয়ানার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা অনিল ভিজ অবশ্য দাবি করেছেন পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। গুজব ছড়ানো আটকাতে পুরো এলাকাতে মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। জারি করা হয়েছে কারফিউ-ও।
অনিল ভিজ জানিয়েছেন, পর্যাপ্ত সংখ্যায় পুলিশ এলাকা জুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে। আশেপাশের অন্যান্য এলাকা থেকেও পুলিশ বাহিনীকে ওখানে নিয়ে আসা হয়েছে।
তবে গোটা ঘটনায় ‘পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রে’র আভাস দেখতে পাচ্ছে হরিয়ানা সরকার। অনিল ভিজের কথায়, “হামলার ধরন দেখে মনে হচ্ছে এটা হঠাৎ করে হয়নি। অনেক পরিকল্পনা এঁটে ও ‘ইঞ্জিনিয়ারিং’ করেই এই দাঙ্গা বাঁধানো হয়েছে বলেই সরকার ধারণা করছে।”
তিনি আরও বলেন, “নূহ-তে হিন্দু ও মুসলিম বহু বহু বছর ধরে শান্তিতে পাশাপাশি বসবাস করছেন। এখন মনে হচ্ছে কেউ বা কারা সেই সম্পর্কের মধ্যে ইচ্ছে করে বিষ ঢেলে দিয়েছেন!”
এসডব্লিউ/এসএস১৮৫০
আপনার মতামত জানানঃ