বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভে পুলিশি বাধার এএফপির খবর প্রচার করেছে বৃটেনের গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। এতে বলা হয়েছে, রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোতে অবরোধকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করেছে। বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এবং তার মিত্ররা গত বছর থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের দাবিতে ধারাবাহিক বিক্ষোভ করে চলেছে।
শনিবার বেশ কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ রাস্তাগুলো থেকে হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এ নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ফারুক আহমেদ বলেন, কিছু কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। আমরা টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করেছি। আহমেদ বলেন, শহরের অন্তত চারটি স্থানে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র নেতা গয়েশ্বর রায় ও আমানউল্লাহ আমানকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
এএফপি’র সাংবাদিকরা ধোলাইখালে দেখেছেন যে, বিক্ষোভকারীরা দাঙ্গা পুলিশ এবং তাদের যানবাহনের দিকে ঢিল ছুড়ে প্রতিশোধ নিচ্ছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, ছয় বিক্ষোভকারীকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিক্ষোভের কারণে রাজধানী এবং দেশের অন্যান্য অংশের মধ্যে পরিবহন যোগাযোগ ব্যাপকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে।
আসলে দুই বেগমের লড়াই নিয়ে বিদেশি মিডিয়ায় একটা সময় প্রচুর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ইকোনমিস্ট, নিউ ইয়র্ক টাইমস প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোর শিরোনামেই তখন থাকতো ‘টু ব্যাটলিং বেগমস’। বলছিলাম, ওয়ান-ইলেভেনের আগে পরের ঘটনার কথা। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে?
দফা এক কিন্তু রফা কি? মহল্লার গলিতে অবস্থিত চায়ের টং থেকে পাঁচ তারকা হোটেলের লবিতে ক্যাপাচিনো বা লাটেতে চুমুক দিতে দিতে নীতি-নির্ধারক মহলও একই প্রশ্নই তুলছেন। তাদের টেবিলে নানা প্রস্তাব কাঁটাছেঁড়া চলছে। এটা হলে এটা হবে? ওটা হলে কি হবে? সবশেষে সমাধানহীন যদি আর কিন্তুতেই ঘুরপাক খাচ্ছে সবকিছু।
ওয়ান-ইলেভেনের পর গত তিন টার্ম ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ সরকার। এই সময়কালে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয়নি একটিও। মানুষ তার ন্যূনতম ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত লম্বা সময়।
সাধারণ চাকুরে শাহজাহান মিঞা আন্দোলন মিছিল-মিটিং পছন্দ করেন না কিন্তু ওনার চাওয়া একটাই, নিজের ভোটটা দিতে চান। বেসরকারি কিন্ডার গার্টেনের শিক্ষিকা মমতাজ বেগমের আক্ষেপ, স্বাধীনতার ৫৫ বছর চলে গেলেও আমরা নির্বাচনটা হাসি নিয়ে উপভোগ করবো তা এখনও তলানিতে।
কথা তো ঠিক। আবারও কি রাজনীতি একই পথে এগুচ্ছে? এরই মধ্যে জল গড়িয়েছে অনেক দূর। আইন আর সংবিধান নিয়ে বাহাস চলছে। যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ লড়াই করেছে তারাই তা বাতিল করেছে। অন্যদিকে যেই বিএনপি তা নাকচ করেছিল তার জন্য রাজপথে তারা লড়ছে।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খবরের শিরোনামেও বদল ঘটেছে। এখন আর শিরোনামে টু ব্যাটলিং বেগমস নেই। এবারের শক্তির লড়াইও কি পুরনো চেনা পথেই হাঁটবে? এই লড়াইয়ের কাউন্টার পার্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কার্যত বন্দি। নানা রোগের সঙ্গে লড়াই করছেন তিনি। নয়াপল্টনের বিশাল সমাবেশের পর অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকই প্রশ্ন তুলেছেন, মাঠের লড়াইটা কি তাহলে দৃশ্যত ওয়ান বেগম বার্সেস আদারস।
দুদলের পাল্টাপাল্টি চলছে রাজনীতিতে। নব্বইয়ের পর বেশকটি নির্বাচনে ইশতেহার প্রকাশে চমক দিতে বড় দলগুলো ওৎ পেতে থাকতো কে কত চমক দিচ্ছে তা বুঝতে। আর সরকারি দল বসে থাকছে বিএনপি কি কর্মসূচি দিচ্ছে তার দিকে। ২৭শে জুলাইয়ের পূর্ব নির্ধারিত বিএনপির মহাসমাবেশ নিয়ে যে নাটক হয়েছে ডিএমপি আর সরকারি দলের তা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ট্রল দেখলেই বোঝা যায়।
বিএনপির পাশাপাশি আওয়ামী লীগকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি খবরে নেটিজেনরা অম্লমধুর হিউমার ছড়িয়েছেন এন্তার। রাতে যখন বিএনপির মহাসমাবেশ একদিন পিছালো তা নিয়ে সরকারের ৩ অঙ্গ সংগঠনও অবস্থান বদলালো। অবস্থান কর্মসূচি নিয়েও চলছে একইরকম খেলা। পুলিশি নিষেধাজ্ঞায় বিরোধীরা কর্মসূচি পালন করছে। মুখোমুখি দু পক্ষই। সকাল থেকেই খবর আসছে রাজধানীর চারপাশে সংঘর্ষের।
ধোলাইখাল, গাবতলী, মাতুয়াইল, উত্তরায় অ্যাকশনে পুলিশ। বিএনপির স্থায়ীয় কমিটির সদস্য গয়েশ্বর রায় গুরুতর আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ ছড়িয়েছে রাজধানীর চারপাশের প্রবেশমুখেই। চলছে ধরপাকড়।
ঢাকার আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে আছে এক অজানা শঙ্কায়। চলমান পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান স্পষ্ট, নীরব ভূমিকায় সাউথ ব্লক। যত দিন যাচ্ছে পরিস্থিতি ততই ঘোলাটে হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এসডব্লিউএসএস/১৩৫০
আপনার মতামত জানানঃ