একটি আটলান্টিক মহাসাগরের স্রোত যা ইউরোপে উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য দায়ী বিশ্বকে খুব দ্রুত ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। একটি নতুন গবেষণায় এই তথ্য সামনে এসেছে।
আটলান্টিক মেরিডিওনাল ওভারটার্নিং সার্কুলেশন (AMOC) নামে পরিচিত, এই স্রোতটি যুক্তরাজ্য এবং উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলিকে শীত অনুভব করতে বাধা দিচ্ছে। কিন্তু একটি নতুন সমীক্ষা অনুসারে, আটলান্টিক মহাসাগরের স্রোত আগের চেয়ে অনেক তাড়াতাড়ি সারা বিশ্বের জলবায়ুতে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
আটলান্টিক মেরিডিওনাল ওভারটার্নিং সার্কুলেশন উষ্ণ জলকে উত্তরে চালিত করে, যা সময়ের সাথে সাথে ঠান্ডা ও বাষ্পীভূত হয়ে লবণাক্ত এবং ঘন হয়ে যায়। এর ফলে এটি ডুবে যায় এবং ভূ-পৃষ্ঠে পৌঁছাবার আগে দক্ষিণে চলে যায় এবং আবার উষ্ণ হয়।
এভাবে চক্রটি পুনরাবৃত্তি হয়। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে উত্তর গোলার্ধের বরফ গলে যাওয়ায় (বিশেষ করে গ্রীনল্যান্ডের) আটলান্টিকের মিঠা পানির পরিমাণ বেড়েছে।
এছাড়াও, সমুদ্রের সামগ্রিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় চক্রটিকে আরও ব্যাহত করছে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে Amoc ভবিষ্যতে দুর্বল হয়ে পড়বে, আগামী শতাব্দীতে এই চক্র ভেঙে পড়তে পারে। একটি নতুন গবেষণা প্রস্তাব করে যে, ২০২৫ সালের প্রথম দিকে এই চক্রের একটি সম্পূর্ণ বা আংশিক পতন ঘটতে পারে ।
AMOC এর পতন পৃথিবীর সকলের জন্য একটি বিপর্যয়কর প্রভাব ফেলবে। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, কয়েক দশকের মধ্যে উত্তর গোলার্ধ জুড়ে তাপমাত্রা নিমজ্জিত হবে এবং বৃষ্টিপাত দক্ষিণে সরে যাবে।
পানীয় ও কৃষির জন্য প্রয়োজনীয় মিঠা পানির অভাব দেখা দেবে যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলিতে। আরেকটি প্রভাব হলো, গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের তাপমাত্রা বর্তমানে যা আছে তার চেয়েও দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।
কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান লেখক অধ্যাপক পিটার ডিটলভসেন বলেছেন, তিনি ফলাফল দেখে ‘বেশ শঙ্কিত’ ছিলেন, তবে কখন এই চক্রের পতন ঘটবে এবং এর পরিণতি কত দ্রুত হবে তা নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা রয়েছে।
অন্যান্য বিজ্ঞানীরা অনুসন্ধানের যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলেছেন, পূর্ববর্তী ৭০ বছরে আটলান্টিক স্রোতে পরিবর্তনের পরোক্ষ পরিমাপ হিসাবে সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রার ডেটা ব্যবহার করার উপর গবেষণার নির্ভরতা একটি নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি নয়।
প্রফেসর ডিটলভসেন বলেছেন, AMOC এর পতন গত ১২,০০০ বছর ধরে ঘটেনি এবং তারপরে কী ঘটেছিল তা খুঁজে বের করার জন্য একমাত্র উপলব্ধ রেকর্ডগুলি হিমবাহ থেকে নেওয়া বরফের নমুনায় রয়েছে।
এগুলি পরামর্শ দেয় যে, যখন AMOC ধসে পড়ে, তখন এটি উত্তর আটলান্টিকের চারপাশের গড় তাপমাত্রা এক দশকের মধ্যে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে গিয়েছিল।
মানব-উৎপাদিত গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি AMOC-কে দুর্বল করে দিচ্ছে কিনা জানতে চাইলে অধ্যাপক ডিটলভসেন বলেন: ‘আমরা গত ১২,০০০ বছর ধরে এমন পরিবর্তন দেখিনি, যা এখন দেখতে পাচ্ছি। আমরা নিশ্চিত যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের সাথে যে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ”
সাউদাম্পটনের ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফি সেন্টারের সামুদ্রিক পদার্থবিদ্যা এবং সমুদ্র সঞ্চালনের প্রধান অধ্যাপক পেনি হলিডে জানাচ্ছেন, AMOC এর পতন জনগণ এবং দেশের সরকারগুলির ওপর প্রভাব ফেলবে।
প্রতিটি দেশের জনসংখ্যার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য এবং পানি সরবরাহ করার ক্ষমতায় পরিবর্তন ডেকে আনবে। নতুন জলবায়ু পরিস্থিতির সাথে শক্তি সরবরাহ এবং চাহিদা দ্রুত পরিবর্তিত হবে। পরিকাঠামোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে এবং এর মোকাবেলা করার জন্য ভারী বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। ভেক্টর-বাহিত রোগের ধরণ এবং স্বাস্থ্য গভীরভাবে প্রভাবিত হবে।
বিশ্বব্যাপী, স্থল এবং সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র এই ধরনের দ্রুত পরিবর্তনশীল জলবায়ু পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে অক্ষম হবে এবং জীববৈচিত্র্য মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হবে।
AMOC-এর প্রভাবকে তাই কোনোমতেই উপেক্ষা করা উচিত নয় বলে মনে করেন পেনি হলিডে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৮৩০
আপনার মতামত জানানঃ