খ্রিস্টপূর্ব ৭ হাজার অব্দের দিকে ফিলিস্তিনের লেভানটিন উপকূল ঘেঁষে ছিল সামুদ্রিক মৎস আহরণ, পশুপালন ও শস্য উৎপাদনভিত্তিক এক অনন্য মিশ্র বসতি। আতলিত ইয়াম নামের এই বসতিটি মূলত একটি প্রাচীন নিওলিথিক গ্রাম।
মিশ্র সমাজব্যবস্থার অনন্য মিশেলে গড়া এই গ্রামটির কিছুকাল পূর্বেও অস্তিত্ব ছিল। তবে, কী এমন হলো যার কারণে বর্তমানে গ্রামটির স্থান হয়েছে সাগরের অতল গহ্বরে? কী-ই বা ঘটেছিল এর বাসিন্দাদের সাথে? কারণ জানতে চলুন যাত্রা করা যাক এর পেছনের ইতিহাসে।
১৯৬০ সালের এক শীতের সকাল। নিত্যদিনের মতো মৎস্য আহরণের উদ্দেশ্যে উপকূলে জাল ফেলেছে স্থানীয় জেলে সম্প্রদায়। সুকৌশলী এই জেলেদের জালে ঝাঁকে ঝাঁকে আটকা পড়ছে মাছ। আটকা পড়েছে সামুদ্রিক শৈবালে জড়িয়ে থাকা ক্ষয়ে যাওয়া এক প্রাচীন নিদর্শনও।
প্রথম দেখায় নিদর্শনটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক নমুনা মনে হওয়ায় স্থানীয় প্রত্নতত্ত্ববিদদের নিকট দ্রুততার সাথে খবর পৌঁছে দিল তারা। ছোট্ট এই নিদর্শন যে বহন করছে দারুণ কিছুর সংকেত তা বুঝতে বেশিক্ষণ ভাবতে হয়নি প্রত্নতাত্ত্বিকদের। তাই তো তীব্র শীত উপেক্ষা করে আটঘাট বেধে তারা বেরিয়ে পড়লেন উপকূলের উদ্দেশ্যে। প্রথম ধাপে জায়গাটুকু জরিপের জন্য পৌঁছে গেলেন নীল জলরাশির সেই সমুদ্রতটে।
সিদ্ধান্ত হলো- রোমাঞ্চকর রহস্য উদঘাটন আর প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের গুপ্ত ভান্ডার সন্ধান না করে ফেরা হবে না নীড়ে। আর তাই পূর্ণ প্রস্তুতি সেরে নব উদ্যমে শুরু হলো গবেষণা কাজ। একে একে খুঁজে পাওয়া গেলো নানাবিধ প্রত্নতাত্ত্বিক নমুনা। নড়েচড়ে বসল প্রত্নতাত্ত্বিক মহল।
এর ঠিক কিছুকাল পর, ১৯৮৪ সালে একই উপকূল ঘেঁষে সাগরতলে হারিয়ে যাওয়া পুরনো জাহাজের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন অনুসন্ধানে বের হয় আরেকদল অনুসন্ধিৎসু প্রত্নতাত্ত্বিক। যার নেতৃত্বে ছিলেন নৌ-প্রত্নতত্ত্ববিদ এহুদ গ্যালিলি। বর্তমান ইজরায়েলের কারমেল উপকূল সংলগ্ন এলাকা অতিক্রমের সময় গ্যালিলির দৃষ্টিগোচর হয় প্রাচীন এই গ্রাম।
অতঃপর, তার হাত ধরে ইতালিয়ান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ জিওফিজিক্স অ্যান্ড ভলকেনোলজির বিজ্ঞ প্রত্নতাত্ত্বিক মারিয়া প্যারেস্কি উঠে-পড়ে লাগেন এর গবেষণায়। বেরিয়ে আসে নানা তথ্য-উপাত্ত। কার্বন ডেটিংয়ের মাধ্যমে জানা যায়, ডুবে যাওয়া এ গ্রামের বয়স ৮,৯০০-৮,৩০০ বছরের মাঝামাঝি কোনো এক সময়!
প্যারেস্কির গবেষণামতে, গ্রামটির সন্নিকটে অবস্থিত মাউন্ট এটনা নামক পর্বতের ঢাল ঘেঁষে উদ্ভব হয় এক সুবৃহৎ আগ্নেয়গিরির আকস্মিক অগ্নুৎপাত। ভেঙে পড়ে বিশালাকার এটনা পর্বতের একাংশ। সৃষ্টি করে ১৩০ ফুট উচ্চতার শক্তিশালী সুনামির, যা মূহুর্তের মধ্যে গ্রাস করে নেয় পুরো গ্রাম।
সুনামি-পরবর্তী সময়ে এখানে-সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পাথরের ধাক্কায় বিক্ষিপ্ত হাজারও মাছের দেহাবশেষ জানান দেয় সুনামির প্রমাণ। সুনামির তান্ডবে লন্ডভন্ড বসতি ছেড়ে মানুষগুলো স্থানান্তরিত হয় অন্যত্র।
তবে, কয়েকজন গবেষক অন্য কারণ হিসেবে প্রতিকূল আবহাওয়াকেও দায়ী করেন। তাপমাত্রার আকস্মিক পরিবর্তনের ফলে শীতল বরফখন্ড গলতে শুরু করলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। ফলে ধীরে ধীরে ডুবতে শুরু করে গ্রামটি, যা সেখানকার অধিবাসীদের বাধ্য করে গ্রামটি ছাড়তে।
এসডব্লিউএসএস/১৪০০
আপনার মতামত জানানঃ