প্রাণীজগতের সকল প্রাণীরই রয়েছে আলাদা আলাদা প্রজাতি। আমরা মানুষরাও কিন্তু এক প্রজাতির নই। মানুষেরও বেশ কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে। তবে বিবর্তনের পথ হেঁটে অন্য সকল প্রজাতিকে টেক্কা দিয়ে আজকে আমরা (হোমো স্যাপিয়েন্স) আধুনিক মানুষ হিসেব নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছি। টিকে রয়েছি কয়েক হাজার বছর ধরে। আর কয়েক হাজার বছর আগে নিয়ান্ডারথালরা এ পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
পশ্চিম ইউরোপের নিয়ান্ডারথালকে মানুষের প্রাচীনতম পূর্বপুরুষ বলে মনে করা হয়। প্রায় ২ লাখ বছর আগে পৃথিবীতে ছিল এই বনমানুষ। এবার তাদের খাদ্যাভাস সম্পর্কেই ধারণা পেলেন বিজ্ঞানীরা।
সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানীর গবেষণায় উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা গেল, ছোটখাটো সহজে শিকার করা যায় এমন প্রাণীই শুধু খেত না নিয়ান্ডারথাল গোত্রের আদিম মানবরা। বরং বড় বড় প্রাণীও শিকার করতেন এই নিয়ান্ডারথাল বনমানুষ।
প্রসঙ্গত, ২ লাখ বছর আগে পৃথিবীতে থাকা এই বনমানুষরা গুহার মধ্যেই থাকত। শিকারের মাধ্যমে খাবার জোগাড় করেই বেঁচে থাকত এই গুহামানবরা।
সম্প্রতি সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী পর্তুগালের অ্যালমোন্ডা গুহা থেকে এই বনমানুষদের দাঁতের নমুনা সংগ্রহ করে। সেই নমুনা বিশ্লেষণ করেই মেলে এই তথ্য। পাশাপাশি ১ লাখ বছর আগে অ্যালমোন্ডা গুহার চারপাশে প্রাগৈতিহাসিক মানুষরা কীভাবে বাস করত, সেই রহস্যও ভেদ করছেন বিজ্ঞানীরা।
সম্প্রতি পিএনএএস জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা থেকে জানা গেছে, এই মানুষদের মধ্যে জৈবিক পরিবর্তন কীভাবে হত তা বুঝতেও সাহায্য করবে নয়া তথ্য। কী এমন প্রাণী শিকার করত নিয়ান্ডারথালরা?
এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত এক বিজ্ঞানীর কথায়, নিজেদের চেহারার থেকে অনেকটাই বড় প্রাণীদের অনায়াসে শিকার করতে পারত এই বনমানুষরা। তবে আরো দশ হাজার বছর পর এই অঞ্চলে যে বনমানুষরা বাস করত, তারা অনেক ছোটখাটো প্রাণী শিকার করতো।
এই গবেষণার জন্য যে যে নমুনা সংগ্রহ করা হয়, সেগুলো যে সবকটি একই সময়ের তা নয়। বরং বিজ্ঞানীদের কথায়, কিছু নমুনা পাওয়া গিয়েছে যা ৯৫,০০০ বছর আগের বনমানুষের দাঁত। আবার কিছু পাওয়া গিয়েছে ১৩ শ’ বছর আগের নমুনা।
যা আদতে ম্যাগডালেনিয়ান যুগের কথা। ২৩ হাজার বছর থেকে ১৪ হাজার বছর পর্যন্ত এই যুগ চলেছিল পৃথিবীতে। এই সময়ের মধ্যেই পাওয়া যায় বাকি দাঁতগুলোর নমুনা। দুই ধরনের নমুনাকেই খুঁটিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়।
জানা যায়, একসময় ক্যানিবাল হয়ে ওঠে নিয়ান্ডারথালরা। নিজ প্রজাতির মাংস খাওয়াকে ক্যানিবালিজম বলে। একসময় নিয়ান্ডারথালদের মধ্যেও ক্যানিবালিজমের চর্চা ছিলো। নিয়ান্ডারথালরা যে নিজ প্রজাতির মাংস খেতো তার প্রমাণ মিলেছে বেলজিয়ামের গোয়েত গুহা থেকে প্রাপ্ত মানুষের হাড়ে। গবেষকরা সেই গুহা থেকে ৪০ হাজার বছর আগের যে হাড় পেয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে সদ্যোজাত বাচ্চা, শিশু, তরুণ এবং বয়স্ক মানুষের হাড়।
এসব হাড় বিশ্লেষণ করে তারা দেখেছেন, নিয়ান্ডারথালরা নিজ প্রজাতির মাংস খেতো। এই হাড়গুলো ঠিক সেই সময়ের যে সময় নিয়ান্ডারথালরা পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হওয়ার পথে এবং হোমো স্যাপিয়েন্সরা (বর্তমান মানুষ) তাদের জায়গা দখল করে নিচ্ছে। গবেষণায় আরো দেখা গেছে যে, নিয়ান্ডারথালরা বাস্তব বুদ্ধিসম্পন্ন ছিলো। ধ্বংসের পথে এসেও তারা তাদের মৃতদেহের দেখভাল করতো এবং দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতো। কিন্তু মৃতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকলে তারা মৃতদেহে খেয়ে ফেলতে শুরু করে।
সম্প্রতি আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির নৃবিজ্ঞানী হেলেন রুশিয়ের নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক টিম গোয়েত গুহা থেকে প্রাপ্ত নিয়ান্ডারথালদের হাড় নিয়ে গবেষণা করে দেখেছেন। তাদের গবেষণায়ও নরভক্ষণের প্রমাণ মিলেছে।
এ বিষয়ে ক্রিস্টিয়ান ক্যাসিয়াস বলেন, হাড়গুলোতে কেটে ফেলার চিহ্ন রয়েছে। সে হাড় থেকে মাংস বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। নিয়ান্ডারথালরা হাড়গুলো এমনভাবে ভেঙেছে যেভাবে তারা ঘোড়া এবং হরিণের হাড় ভাঙতো। এমনভাবে মাংস বিচ্ছিন্ন করেছে যেভাবে ঘোড়া এবং হরিণের মাংসা বিচ্ছিন্ন করতো হাড় থেকে। কিন্তু তারা ঠিক কী কারণে নিজেদের মাংস খেতো সেটা এখনো রহস্যের বিষয়।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪২০
আপনার মতামত জানানঃ