চলতি বছরের মার্চ মাসে দেশে ৪৫৮টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৫৮৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আহত হয়েছেন ১০৯৭ জন।
নিহতের মধ্যে নারী ৮৮, শিশু ৭৩। ১৭৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৯৪ জন, যা মোট নিহতের ৩৪.৩৯ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৬.৮৩ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১০৭ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ১৮.৯৭ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৮১ জন, অর্থাৎ ১৪.৩৬ শতাংশ। এই সময়ে ৬টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৮ জন নিহত হয়েছে। ১৯টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত এবং ৪ জন আহত হয়েছে।
সোমবার (৪ মার্চ) সকালে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমানের পাঠানো এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। ফাউন্ডেশনটি ৭টি জাতীয় দৈনিক, ৫টি নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।
প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে—ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; বেপরোয়া গতি; চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; তরুণ ও যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।
দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়- মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৯৪ জন (৩৪.৩৯%), বাস যাত্রী ৫৩ জন (৯.৩৯%), ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি আরোহী ৪৯ জন (৮.৬৮%), মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স যাত্রী ২২ জন (৩.৯০%), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা) ১০৪ জন (১৮.৪৩%), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-আলমসাধু-পাখিভ্যান-মাহিন্দ্র-টমটম) ২৪ জন (৪.২৫%) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশা ভ্যান আরোহী ১১ জন (১.৯৫%) নিহত হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে ১০ দফা সুপারিশও জানিয়েছে ফাউন্ডেশনটি। সুপারিশগুলো হচ্ছে—দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করা; চালকের বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা; বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করা; পরিবহনের মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্বরাস্তা (সার্ভিস লেন) তৈরি করা; পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করা; গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করা; রেল ও নৌ-পথ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমানো; টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা এবং সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করা।
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনায় গত মার্চ মাসে প্রতিদিন গড়ে ১৯ জন নিহত হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছিল ১৬ দশমিক ৭৫ জন। এ হিসাবে ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চ মাসে প্রাণহানি বেড়েছে ১৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এসব দুর্ঘটনায় ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী কর্মক্ষম মানুষ নিহত হয়েছেন ৪৬৩ জন।
বাংলাদেশে ক্রমাগত বাড়ছে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনা। ২০২২ সালে গত ৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে বলে দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতির। ৬৭৪৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯৯৫১ জন নিহত, ১২৩৫৬ জন আহত হয়েছেন। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের বার্ষিক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।
২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালে সড়কে দুর্ঘটনা ১৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ ও প্রাণহানি ২৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেড়েছিল। নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, মোটরসাইকেল, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল ও ত্রি-হুইলার সরকারি আদেশ অমান্য করে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে অবাধে চলাচলের কারনে বিগত ৮ বছরের মধ্যে বিদায়ী ২০২২ সালে সড়কে সর্বোচ্চ দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটে।
এসডব্লিউএসএস/১৫৩০
আপনার মতামত জানানঃ