মেট্রোরেলের লাইন-৫ নির্মাণে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) কাছে আরও ৩০০ মিলিয়ন (৩০ কোটি) ডলার চায় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
দেশের প্রথম মেট্রোরেলের গাবতলী থেকে দাশেরকান্দি (এমআরটি-৫ সাউদার্ন রুট) পর্যন্ত অংশ নির্মাণে ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন (৪৭০ কোটি) মার্কিন ডলার ব্যয় হবে। এরমধ্যে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন (২৫০ কোটি) মার্কিন ডলার অর্থায়নে আগ্রহ দেখিয়েছে এডিবি।
এমআরটি লাইন-৫ সাউদার্ন রুট হিসেবে পরিচিত এ লাইনটি নির্মাণে এডিবি ইতোমধ্যে ২.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আরও ৩০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিলে এই প্রকল্পে সংস্থাটির ঋণ দাঁড়াবে ২.৮ বিলিয়ন ডলার।
রোববার সকালে এমআরটি লাইন ৫ সাউদার্ন রুটের স্টেকহোল্ডার কন্সালটেশন সভায় ডিএমটিসিএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক বাড়তি সহায়তা চেয়ে বলেন, আর ৩০০ মিলিয়ন ডলার পাওয়া গেলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অন্য কোন সংস্থা বা দেশের আর্থিক সহায়তা লাগবে না।
প্রকল্পটির পরিচালক আব্দুল ওয়াহাব জানান, দুই বছরের বেশি সময় ধরে পরিচালনা করা সমীক্ষায় প্রকল্পটির নির্মাণ ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন ডলার। এতে সরকারের তহবিল থেকে ব্যয় হবে ১.৮ বিলিয়ন ডলার।
সূত্র জানায়, প্রাথমিক সমীক্ষায় প্রকল্পটির ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫.৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। ব্যয় মেটাতে বেশ কিছু দেশ ও সংস্থার কাছে কো-ফাইন্যান্সার হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
এ বিষয়ে কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনার বেশ অগ্রগতি হয়েছিল। সংশোধিত প্রাক্কলনে ব্যয় কমে আসায় অন্য কোন সংস্থার দ্বারস্থ হতে চায় না সরকার।
অনুষ্ঠানে ডিএমটিসিএল এমডি জানান, প্রকল্পটির আওতায় গাবতলী থেকে আফতাবনগর পর্যন্ত ১২.৮ কিলোমিটার পাতাল ও আফতাবনগর থেকে দাশেরকান্দি পর্যন্ত ৪.৬ কিলোমিটার উড়াল মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে। মোট ১৫টি স্টেশনের মধ্যে ১১টি স্থাপন করা হবে মাটির নিচে।
তিনি আরও জানান, আগামী বছরের শেষের দিকে অবকাঠামো নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়া হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে কাজ শেষ হলে প্রতিদিন ১০ লাখ যাত্রী এই লাইনটি ব্যবহার করবেন।
ডিএমটিসিএল এমডি এম এন সিদ্দিক বলেন, এবিডি এই প্রথম মেট্রোরেলের কোনও প্রজেক্টে বিনিয়োগ করছে। এ প্রকল্পে এডিবির কাছে অনুরোধ, তাদের বিনিয়োগ আরও ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যেন তারা বাড়ায়। এডিবির জন্য এটি বড় কোনও অর্থ নয়। আশা করি এডিবি তাদের সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
এডিবিকে অতিরিক্ত অর্থ অর্থায়ন করতে অনুরোধ করে তিনি বলেন, এডিবি বর্তমানে যা অর্থ দিচ্ছে, তার থেকে অল্প কিছু বেশি দিলে পুরো প্রকল্প এডিবি’র অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। তাদের কাছে অনুরোধ, তারা যেন আরও ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে।
এমআরটি লাইন-৫ সাউদার্ন রুট ২০৩০ সালের মধ্যে গাবতলী থেকে দাশেরকান্দি পর্যন্ত ১৭ দশমিক ৪০ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে। এরমধ্যে পাতাল ১২ দশমিক ৮০ কিলোমিটার এবং উড়াল ৪ দশমিক ৬০ কিলোমিটার। এতে মোট ১৬টি স্টেশনের মধ্যে ১২টি পাতাল এবং চারটি উড়াল।
স্টেশনগুলো হলো- গাবতলী, টেকনিক্যাল মোড়, কল্যাণপুর, শ্যামলী, কলেজগেট, আসাদগেট, রাসেল স্কয়ার, পান্থপথ, সোনারগাঁও হোটেল, হাতিরঝিল পশ্চিম, নিকেতন, রামপুরা, আফতাবনগর পশ্চিম, আফতাবনগর মধ্য, আফতাবনগর পূর্ব, দাশেরকান্দি।
স্টেশনের নাম সমন্বয় করা এবং ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ পর্যায়ে জানিয়ে এমএন সিদ্দিক বলেন, আমরা এখন বিনিয়োগে যাবো। মেট্রোরেলে পরিবেশের ক্ষতি হবে না, যানজটের কমে আসবে, দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
এবি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, এবিডি’র অর্থায়ন এই প্রথম মেট্রোরেলের কোনও প্রজেক্টে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পে এডিবির কাছে অনুরোধ, তাদের বিনিয়োগ আরও ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যেন তারা বাড়ায়। আশা করি এডিবি তাদের সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
তিনি বলেন, ঢাকায় মোট ছয়টি মেট্রোরেল লাইন চালু হলে প্রতিদিন ৫০ লাখের বেশি মানুষ এর সুবিধা পাবেন। এর ফলে যানজট কমে আসবে। দ্রুত যাতায়াতের সুবাদে লোকজন পরিবার ও অফিসে বেশি সময় দিতে পারবেন।
এসডব্লিউএসএস/২১০০
আপনার মতামত জানানঃ