সকল গ্রহ, উপগ্রহ, গ্রহাণু, নক্ষত্র, গ্যালাক্সি, ধূমকেতু, ব্ল্যাক হোল সহ সমস্ত মহাজাগতিক বস্তুকে একত্রে মহাবিশ্ব বলে। এমনকি সমস্ত মহাজাগতিক বস্তু যে অসীম শূন্যস্থানে বিরাজ করছে তাও মহাবিশ্বের অংশ। তবে শুধু এই অসীম সংখ্যক মহাজাগতিক বস্তু বা মহাশূন্যই নয়, সময়ও মহাবিশ্বের একটি অপরিহার্য অংশ। অর্থাৎ, বলা যেতে পারে যে, সকল মহাজাগতিক বস্তু বা শক্তি, মহাশূন্য ও সময়ের যে সমষ্টি বিবেচনা করা করা হয় তাই মহাবিশ্ব
এবার এই মহাজগৎ যখন বয়সে একেবারেই শিশু, সে সময়কার ৬টি বৃহৎ গ্যালাক্সির সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু গ্যালাক্সিগুলো বিশ্লেষণের পর গোটা মহাজগৎ নিয়ে আমাদের এতদিনকার ধারণাগুলো প্রশ্নের মুখে পড়ে গেছে।
শিশু মহাবিশ্বে গ্যালাক্সিগুলো ছিল ছোট। অথচ আবিষ্কৃত ৬টি গ্যালাক্সি অনেকটাই আমাদের মিল্কিওয়ের মতো পরিণত। তাহলে কি মহাবিশ্বের বয়স আমরা যা জানতাম তার থেকে আরও বেশি?
বৃটিশ গণমাধ্যম ইনডিপেন্ডেন্টের খবরে জানানো হয়েছে, এই গ্যালাক্সিগুলোর যে ছবি বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন তা বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণের মাত্র ৫০০ থেকে ৭০০ মিলিয়ন বছর পরের।
অর্থাৎ তখন আমাদের মহাবিশ্বের মাত্র উদয় হয়েছে বলা চলে। মহাবিশ্বের বর্তমান বয়সের মাত্র তিন শতাংশ বয়স ছিল তখন।
মহাবিশ্বের উৎপত্তি ও বিকাশ সংক্রান্ত যেসব তত্ত্ব আছে তার মধ্যে বহুর প্রচলিত হল ‘বিগব্যাঙ’ তত্ত্ব। বাংলায় একে বলা হয় ‘মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব’।
এই তত্ত্বের মতে মহাবিশ্ব একসময় অত্যন্ত উত্তপ্ত ও ঘনরূপে বা ঘন অবস্থায় ছিল যা অতি দ্রুত প্রসারিত হচ্ছিল। দ্রুত প্রসারণের ফলে মহাবিশ্ব ঠাণ্ডা হয়ে যায় এবং বর্তমান প্রসারণশীল অবস্থায় পৌঁছায়।
জানা গেছে, বিগব্যাঙ বা মহাবিস্ফোরণ সংঘটিত হয়েছিল প্রায় ১৩.৭৫ বিলিয়ন বছর (১৩৭৫ কোটি বছর) আগে এবং এটাই মহাবিশ্বের বয়স। বিগব্যাঙ তত্ত্ব একটি বহু পরীক্ষিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব যা বেশিরভাগ বিজ্ঞানী গ্রহণ করেছেন।
এর কারণ, জোতির্বিদদের পর্যবেক্ষিত প্রায় সব ঘটনাই এই তত্ত্ব সঠিক ও ব্যাপকভাবে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম। বর্তমান কালের বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এই তত্ত্বের পক্ষে যুক্তি দেন এবং পদার্থবিদ্যার দৃষ্টিকোণ থেকে এর ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন।
ফলে কেউই সেসময় এত পরিণত গ্যালাক্সি আবিষ্কারের কথা আশা করেনি। পেন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জোয়েল লেজা বলেন, অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে আমাদের নতুন আবিষ্কার গোটা বিজ্ঞানটাকেই সমস্যায় ফেলে দিয়েছে। বিশ্বজগৎ নিয়ে আমাদের এতদিনকার ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে নতুন গ্যালাক্সিগুলো। এই গ্যালাক্সিগুলো হিসেবের থেকে অনেক বেশি বড়।
তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করেছিলাম মহাবিশ্ব জন্মের প্রথমে ক্ষুদ্র, শিশু গ্যালাক্সি দেখতে পাব। কিন্তু আমরা যা পেয়েছি তা আমাদের গ্যালাক্সির মতোই পরিণত। অথচ ওই সময়টাকে আমরা মহাবিশ্বের মাত্র উদয় হয়েছে বলে বিশ্বাস করতাম।
জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের পাঠানো ওই ছবিতে মহাবিশ্ব সৃষ্টির প্রথম দিকের আলোও ধরা পড়ছে। ফলে প্রাচীনতম সময়ের গ্যালাক্সি এবং তারকাদের নিয়ে গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, আমাদের মহাবিশ্বের বয়স ১৩.৭ বিলিয়ন বছর।
আর এই টেলিস্কোপ দিয়ে দেখা গেছে ১৩.৫ বিলিয়ন বছর আগের মহাবিশ্বকেও। কিন্তু নতুন এই গ্যালাক্সিগুলো এখন মহাবিশ্বের বয়সকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।
বিজ্ঞানীরা এত ভারী বস্তুর সন্ধান পেয়েছেন যে সেগুলো যদি কোনো নক্ষত্র হয় তাহলে তা এতদিনের ধারণার তুলনায় অন্তত ১০০ গুণ বেশি ভারী। ন্যাচার জার্নালে এই গবেষণাটি প্রকাশ করা হয়েছে। যে-সব বিজ্ঞানকে একদম নিশ্চিত বলে জানা ছিল এতদিন, তাও এর ফলে প্রশ্নের মুখে পড়ে গেছে।
এসডব্লিউএসএস/২০৩০
আপনার মতামত জানানঃ