সিরিয়ায় আবারও মিসাইল হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে রাজধানী দামেস্ক ও তার আশেপাশের এলাকায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস।
সিরিয়ান অবজারভেটরি বলেছে, ক্ষেপণাস্ত্রটি একটি ইরানি সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কাছাকাছি আঘাত করেছে। এতে বেসামরিক নাগরিকসহ ১৫ জন নিহত হয়।
২০১১ সালে সিরিয়ায় যুদ্ধ শুরুর পর প্রতিবেশী দেশটিতে ইসরায়েল শত শত বিমান হামলা চালিয়েছে। সাধারণত সিরিয়ার সেনাবাহিনী, ইরানি বাহিনী ও লেবাননের হিজবুল্লাহকে লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে। তবে আবাসিক এলাকায় হামলার ঘটনা বিরল।
সম্প্রতি আঘাত হানা ভয়াবহ ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট সংকটের মধ্যেই ইসরায়েলি আক্রমণের মধ্যে পড়তে হলো দেশটিকে। তবে সিরিয়ার সেনাবাহিনী নিহতের সংখ্যা পাঁচ জন বলে জানিয়েছে। সেনাবাহিনীর দাবি, ইসরায়েলি হামলায় চার বেসামরিক এবং এক সেনা সদস্য নিহত হয়েছে।
শনিবার দিবাগত রাতে সিরিয়ার কাফর সুসা এলাকায় এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। এ এলাকায় মূলত নিরাপত্তা সংস্থা ও গোয়েন্দা সদর দপ্তরগুলোর অবস্থান। জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বসবাস সেখানে।
সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দিবাগত রাত ১২টা ২২ মিনিটের দিকে ইসরায়েলি শত্রুরা দামেস্ক এবং আশপাশের বিভিন্ন এলাকা লক্ষ্য করে গোলান মালভূমি থেকে বিমান হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে আবাসিক এলাকাও আছে।’
শুরুতে সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছিল, হামলায় ৫ জন নিহত ও ১৫ জন আহত হয়েছেন। কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ফুটেজে দেখা গেছে, হামলায় একটি ১০ তলা ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ভবনের নিচের দিকের তলাগুলোর অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে।
বিবিসির রিপোর্টে বলা হয়, যে এলাকায় মিসাইলগুলো বিধ্বস্ত হয়েছে তা অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী এ হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চায়নি। ইসরায়েল প্রায়শই সিরিয়ায় থাকা ইরান এবং হিজবুল্লাহর অবস্থানে মিসাইল হামলা চালায়।
তবে তারা এসব হামলার দায় স্বীকার করে না। ১৩ দিন আগে সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমে ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পর এটাই ইসরায়েলের প্রথম আক্রমণ।
রোববার যে এলাকায় হামলা হয়েছে সেখানে সিরিয়ার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা থাকেন এবং নিরাপত্তা সংস্থার সদর দপ্তরগুলো অবস্থিত। হামলায় বেশ কয়েকটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলাগুলো চালানো হয়েছে গোলান হাইটস থেকে। লন্ডন ভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, বেসামরিক নাগরিকসহ এই হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছে।
সিরিয়ান অবজারভেটরির প্রধান রামি আবদেল রহমান এ হামলাকে সিরিয়ার রাজধানীতে সবচেয়ে ভয়াবহ ইসরায়েলি হামলা বলে উল্লেখ করেছেন।
দামেস্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় চারজন নিহত হওয়ার এক মাসের বেশি সময় পর নতুন এ হামলা হলো। গত ২ জানুয়ারি ওই হামলা চালানো হয়েছিল। সিরিয়ান অবজারভেটরি বলছে, বিমানবন্দর ও আশপাশে হিজবুল্লাহ ও ইরানপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অবস্থান লক্ষ্য করে হামলাটি হয়েছিল।
এর পাশাপাশি তের দিন আগের ভয়াবহ ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত সিরিয়ার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে বলে জানিয়েছে একটি মানবাধিকার সংগঠন।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি সিরিয়া ও তুরস্কে আঘাত হানা ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম সিরিয়ার উত্তরপশ্চিম প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর নিয়ন্ত্রণে।
ভূমিকম্পে সিরিয়ার নিহতের বেশিরভাগই এই উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে হয়েছে বলে জাতিসংঘের একটি সংস্থার বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
প্রাণঘাতী ওই ভূমিকম্পের পর সেখানে বৃহস্পতিবার রাতভর প্রথমবার সিরীয় সেনাদের সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ হয়েছে বলে জানিয়েছে সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস।
তারা বলেছে, সরকারি বাহিনী বিদ্রোহী অধ্যুষিত শহর আতারেবের উপকণ্ঠে গোলা ছুড়েছে। কাছাকাছি যুদ্ধক্ষেত্রে দুই পক্ষের মধ্যে ভারি অস্ত্রশস্ত্র দিয়েও যুদ্ধ চলছে।
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের পরিচালক রামি আবদুলরেহমান বলেছেন, ভূমিকম্প কেবল আতারেব ও এর আশপাশের এলাকাগুলোরই ২৩৫ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।
দেশটির উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে ৬ ফেব্রুয়ারির ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা এরই মধ্যে চার হাজার ৪০০ ছাড়িয়ে গেছে।
সরকারি বাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সরকারি বাহিনী নিয়ন্ত্রিত সারাকেবের কাছে উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের আরেক এলাকায়ও তুমুল লড়াই হয়েছে; আসাদবাহিনী হামা প্রদেশের দুটি গ্রামের উপকণ্ঠে গোলা ছুড়েছে বলেও দাবি করেছে সিরিয়ান অবজারভেটরি।
দেশটিতে ২০১১ সাল থেকে শুরু হওয়া সংঘাত এরই মধ্যে লাখো মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে, জনসংখ্যার অর্ধেককে পরিণত করেছে উদ্বাস্তুতে, লাখ লাখ মানুষকে বাধ্য করেছে অন্য দেশে শরণার্থী হতে।
ভূমিকম্পের আগেই সিরিয়ার উত্তরপশ্চিমাঞ্চলের ৪০ লাখের বেশি মানুষ ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল ছিল। ভূমিকম্পের পর পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে, সেখানে ঠিকভাবে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না অভিযোগ অনেক দাতা সংস্থার।
এসডব্লিউএসএস/১৫৫৫
আপনার মতামত জানানঃ