পরাজয়ের তেতো স্বাদ তাকে হয়তো খুব একটা পেতে হয়নি, কিন্তু সেই বিরল এক পরাজয়ের মুখোমুখি হয়েছেন এশিয়া মহাদেশ ও ভারতের শীর্ষ স্থানীয় ধনী গৌতম আদানি। ৯ দিন ধরে যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে, তার সাম্রাজ্যের ওপর দিয়ে, তাতে রীতিমতো লন্ডভন্ড হয়ে গেছে তার সাজানো বাগান।
গত ২৫ জানুয়ারি হিনডেনবার্গ নামের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ছোট একটি বিনিয়োগ কোম্পানি এক প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর তার ব্যক্তিগত সম্পদমূল্য প্রায় অর্ধেক কমে গেছে।
এই প্রতিবেদন প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই আদানির বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারদর হু হু করে কমছে। গত ৯ দিনে একটানা নিম্নমুখী ‘আদানি টোটাল গ্যাস’, ‘আদানি এন্টারপ্রাইজ’-এর মতো কোম্পানির শেয়ারদর। সেই সঙ্গে আদানির ব্যক্তিগত সম্পদমূল্য কমেছে প্রায় ৫৬ বিলিয়ন বা ৫ হাজার ৬০০ কোটি ডলার।
গৌতম আদানি বিশ্বের ধনী তালিকায় নামতে নামতে শুক্রবার রাতে পৌঁছে গেছেন কুড়িরও নিচে। আদানিদের গর্বের মিনারে এই ঘটনায় যে আঘাতই লাগুক না কেন এটা বাস্তব ঘটনা যে, আদানিদের এই পতন ভারতকে বিশ্বের পঞ্চম অর্থনীতির দেশ হওয়ার গৌরব থেকে বিচ্যুত করেছে।
ফ্রান্স এখন ভারতের জায়গায়। আর বৃটেন থেকে ভারত মাত্র ১০ কোটি ডলার ওপরে।বাজার থেকে আদানিদের প্রায় ১২৪ বিলিয়ন টাকা উধাও হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা ভারতীয় অর্থনীতিকে আঘাত করেছে।
সংসদের উভয় কক্ষ রাজ্যসভা এবং লোকসভা শুক্রবার আদানি-কাণ্ড নিয়ে উত্তপ্ত হয়। ভারত সরকার কোম্পানি ল’-এর ২০৬ ধারা অনুযায়ী ডিরেক্টর জেনারেল, কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্সকে এই বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, এই আইনের বলে সরকার যেকোনো সময়ে কোনো কোম্পানির আয়-ব্যয়ের হিসাব ও কাগজপত্র চাইতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই তৎপরতার পরই রিজার্ভ ব্যাংক একটি বিবৃতি জারি করে জানিয়েছে যে, ভারতীয় কোনো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের স্বার্থহানি হয়নি আদানিদের এই পতনের ফলে।
ভারতের তিন দশমিক দুই ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আদানিদের এই পতনে যা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
এদিকে শুক্রবারই আদানি প্রসঙ্গটি ভারতের সুপ্রিম কোর্টে গেছে। একটি জনস্বার্থের মামলায় হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টের সত্যতা নিয়ে যেমন প্রশ্ন তোলা হয়েছে, তেমনই শেয়ার ক্রেতাদের রক্ষাকবচের দাবি জানানো হয়েছে।
আদানিরা মুখরক্ষার জন্য শুক্রবারই তাদের কেনা নারী আইপিএল লিগে গুজরাট দলের কোচ হিসেবে নাম ঘোষণা করেছে অস্ট্রেলিয়ার নারী ক্রিকেট দলের প্রাক্তন রাচেল হেইন্সের। ভারতের প্রাক্তন ক্যাপ্টেন মিতালি রাজ এই দলের মেন্টর-উপদেষ্টা।
গৌতম আদানি দলটি কিনেছেন এক হাজার ২৭৯ কোটি টাকা দিয়ে। কিন্তু নারী দল সম্পর্কে উজ্জীবিত ঘোষণা কি পারবে আর্থিক দুনিয়ার বাউন্সার সামলাতে? আদানি গ্রুপই পারে একমাত্র এই প্রশ্নের জবাব দিতে।
বিদ্যুৎ কেনা নিয়ে বেঁকে বসছে বাংলাদেশ!
আদানির কোম্পানির কাছে আবার বড় ধাক্কার সম্ভাবনা। ভারত থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। আর আদানি গ্রুপের সঙ্গেই এব্য়াপারে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল বাংলাদেশ।তবে আদানি পাওয়ার লিমিটেডের সঙ্গে সেই চুক্তিটা ফের একবার পর্যালোচনা করতে চাইছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড ২০১৭ সালে আদানি পাওয়ার লিমিটেডের সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানি করার ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। ২৫ বছরের জন্য় এই চুক্তি করা হয়েছিল। ঝাড়খণ্ডের গোড্ডার তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে এই ১,৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশে সরবরাহ করার ব্য়াপারে কথাবার্তা হয়েছিল।
এদিকে ইউনাইটেড নিউজ অফ বাংলাদেশের তরফে খবর, বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড ইতিমধ্যেই আদানি পাওয়ার লিমিটেডকে চিঠি পাঠিয়েছে চুক্তির ব্যাপারটি পর্যালোচনা করার জন্য। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা এনিয়ে ঠিক কী অবস্থান নিচ্ছে সেব্যাপারেও আদানি পাওয়ারের কাছে পরিষ্কার করা হয়েছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশের শক্তিসম্পদ দফতরের মন্ত্রী নজরুল ইসলাম এই পাওয়ার প্লান্ট এলাকায় পরিদর্শন করেন।
এদিকে বিদেশ দফতরের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ের সময় জানিয়েছেন, এটা একটা সার্বভৌম সরকারের সঙ্গে একটি ভারতীয় কোম্পানির ব্যাপার। আমি মনে করি না এই ব্যাপারটির সঙ্গে আমরা কোনওভাবে জড়িয়ে আছি।
তিনি জানিয়েছেন, ভারতের অর্থনৈতিক উন্নতির মাধ্যমে আমাদের প্রতিবেশীরাও যাতে লাভবান হয় সেকথা আমরা বলি। যোগাযোগ যাতে সুগম থাকে সেব্যাপারে আমরা চেষ্টা করি। সেটা সশরীরে হতে পারে বা শক্তি সম্পদ দেওয়ার মাধ্যমেও হতে পারে। তবে বৃহত্তর ক্ষেত্রে এটা হল আমাদের একটা স্ট্র্যাটেজি। যেটার মাধ্যমে বলা হচ্ছে প্রতিবেশীদের অগ্রাধিকার।
এদিকে বাংলাদেশের সংবাদ সংস্থার তরফে বলা হয়েছে, BPDB’র ওই চিঠির মাধ্যমে এটা একটা আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করা হয়েছে যাতে আগের চুক্তিটার ব্য়াপারে আবার পর্যালোচনা করা হয়। এদিকে এই প্লান্টের মাধ্যমে আগামী মার্চ মাস থেকে বাংলাদেশে ৭৫০ মেগাওয়েট বিদ্যুৎ পাঠানোর কথা রয়েছে। তবে তার আগেই ফের আদানির সঙ্গে সেই চুক্তিটা নিয়ে পর্যালোচনার কথা বলছে বাংলাদেশ।
এসডব্লিউএসএস/১২৫০
আপনার মতামত জানানঃ