প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রজাতি আবিষ্কারে বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টার কোনো কমতি নেই। অন্যান্য বছরের মতো ২০২২ সালেও আবিষ্কৃত হয়েছে নানা নতুন প্রজাতির প্রাণী।
পৃথিবীতে মোট কয়টা জীব আছে তা কখনো জানতে চাওয়া হয় না, জানতে চাওয়া হয় পৃথিবীতে কয় প্রজাতির জীব আছে। প্রজাতি বলতে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যে সর্বাধিক মিলসম্পন্ন একদল জীবকে বোঝায়, যারা নিজেদের মধ্যে মিলনে উর্বর সন্তান উৎপাদনে সক্ষম, কিন্তু অন্য সদস্যদের সাথে মিলনে উর্বর সন্তান উৎপাদনে অক্ষম। যেমন মানুষ একটি প্রজাতি, কুকুর একটি প্রজাতি, বাঘ একটি প্রজাতি, সিংহ একটি প্রজাতি ইত্যাদি।
সাউদার্ন ম্যানড স্লথ
নতুনভাবে আবিষ্কৃত বেশিরভাগ জীবপ্রজাতিই হয় উদ্ভিদ, অমেরুদণ্ডী, মাছ, কিংবা উভচর। আকারে ক্ষুদ্র হওয়ায় মানুষের দৃষ্টির অগোচরে থেকে যায় প্রাণীগুলো। কিন্তু মাঝেমধ্যে বৃহদাকার প্রাণীও যুক্ত হয় এই তালিকায়।
২০২২ সালে ব্রাজিলে তেমনই এক স্লথ প্রজাতির সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আগে ভাবা হতো- ওই স্থানে শুধু এক প্রজাতির স্লথই বিদ্যমান। কিন্তু অঙ্গসংস্থানগত এবং ডিএনএ সংশ্লিষ্ট এক ট্যাক্সোনমিক (শ্রেণীকরণ) রিভিউ থেকে দেখা যায়, ওই স্থানে মোট দুই প্রজাতির স্লথ বিদ্যমান; নর্দার্ন (B. torquatus) এবং সাউদার্ন (B. crinitus)।
উভয় প্রজাতির অস্তিত্ব শুধু ব্রাজিলিয়ান আটলান্টিক ফরেস্টেই দেখা যায়, অর্থাৎ জীববিজ্ঞানের ভাষায় প্রজাতিটি ব্রাজিলের জন্য এন্ডেমিক। এর মধ্যে সাউদার্ন ম্যানড স্লথের দেখা মেলে রিও ডি জেনেইরো এবং এস্পিরিতো সান্তোতে, আর নর্দার্ন ম্যানড স্লথ বাস করে বাহিয়া এবং সারগিপে অঞ্চলে।
টিকটিকি
২০২২ সালে একটি নতুন প্রজাতি আবিষ্কারের মাধ্যমে মাদাগাস্কার থেকে মোট ৮টি ক্ষুদ্রাকৃতির টিকটিকির সন্ধান মিলেছে, যাদের দৈর্ঘ্য হাতের তর্জনী আঙুলের চেয়ে বড় নয়। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই Lygodactylus fritzi (টিকটিকি) হচ্ছে Domerguella গণের। ধারণা করা হচ্ছে, আবিষ্কৃত ওই আট প্রজাতিই বিপন্ন হবার পথে।
প্রখ্যাত সরীসৃপ শ্রেণীবিন্যাসকারী, জার্মানির দ্রেসদেন জুওলোজি মিউজিয়ামের পরিচালক উই ফ্রিতজের নামানুসারে এই সরীসৃপের বৈজ্ঞানিক নাম রাখা হয়েছে Lygodactylus fritzi।
চিরিকুই ফায়ার স্যালাম্যান্ডার
উজ্জ্বল বর্ণের নতুন প্রজাতির এক স্যালাম্যান্ডারকে আবিষ্কার করেছেন পানামার বিজ্ঞানীরা। জিন বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নতুন আবিষ্কৃত এই উভচরটি তার নিকট প্রজাতির স্যালাম্যান্ডার থেকে বর্ণ, পার্শ্ব পদের গঠন, উপরের পাটির দাঁত সংখ্যার বিবেচনায় আলাদা।
আইইউসিএন রেড লিস্টের তালিকাভুক্ত এই স্যালাম্যান্ডার বিপন্ন হবার ঝুঁকিতে আছে। বিজ্ঞানীদের একটি দল পানামার করদিলেরা দে তালামাঙ্কা পর্বত এবং লা আমিস্তাদ আন্তর্জাতিক উদ্যানে খোঁজ চালিয়ে এই নতুন প্রজাতি আবিষ্কার করেছেন। ধারণা করা হয়, পৃথিবীর এই জায়গাতেই স্যালাম্যান্ডারের সর্বোচ্চ প্রজাতিগত বৈচিত্র্য উপস্থিত।
সাপ
আকর্ষণীয় উজ্জ্বল রক্তবর্ণ, গাঢ় অঙ্গরেখা এবং ঘাড়ে হলুদ দাগওয়ালা Phalotris গণের নতুন এক প্রজাতির সাপ আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। পানামার পারা লা তিয়েরা অঞ্চলে গর্ত খোঁড়ার সময় আকস্মিকভাবে তারা সন্ধান পায় সাপটির। ধারণা করা হয় এই প্রজাতির বাস শুধু জঙ্গলে। এর সীমাবদ্ধ বাসস্থান, স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য, এবং সংখ্যালঘু হিসেবে একে বিপন্ন-প্রায় প্রজাতি হিসেবে আইইউসিএন রেড লিস্টের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এই প্রজাতির দুটি সাপের একটি সন্ধান মেলে প্যারাগুয়ের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র রাঞ্চো লাগুনা ব্লাংকাতে, আরেকটির ছবি তোলেন আলোকচিত্রশিল্পী কলোনিয়া ভলেনডাম। পৃথিবীতে এই পর্যন্ত এই প্রজাতির তিনটি সাপেরই সন্ধান মিলেছে।
বিষাক্ত মাকড়সা
বিষাক্ত মাকড়সার সম্পূর্ণ নতুন এক গণ আবিষ্কৃত হয়েছে থাইল্যান্ডে। মজার ব্যাপার হলো, এর আবিষ্কারক জোচো সিপ্পাওয়াট কোনো বিজ্ঞানী নন, তিনি একজন বন্যপ্রাণী বিষয়ক ইউটিউবার। নতুন এই বিষাক্ত মাকড়সা চোখে পড়ার পর তিনি তা নিয়ে যান মাকড়সা বিশেষজ্ঞ ড. নারিন চমফুফুয়াং এবং চাওওয়ালিত সংসাংচোটের কাছে।
এই বিষাক্ত মাকড়সাগুলো শুধু এক জাতের বাঁশেই অবস্থান করে। এই বাঁশের মধ্যে গর্ত করার ক্ষমতা নেই এই মাকড়সার, তাই সে অন্যান্য অমেরুদণ্ডী প্রাণীর খোঁড়া গর্তকেই বাসস্থান হিসেবে বানিয়ে নেয়। থাই সম্রাট তাকসিন দ্য গ্রেটের (১৭৩৪-১৭৮২) নামানুসারে এই প্রাণীর গণের নামকরণ করা হয়েছে, আর প্রজাতির নামকরণ করা হয়েছে বাঁশের ইংরেজি ‘Bamboo’ থেকে।
এসডব্লিউএসএস/১৯০৫
আপনার মতামত জানানঃ