হোয়াইট হাউজে প্রবেশের তিন বছর অল্পবিস্তর আয়কর দিলেও শেষ বছরে একটি টাকাও কর দেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের কয়েক বছরের আয়কর রিটার্ন প্রকাশ করে দেশটির প্রতিনিধি পরিষদের একটি কমিটি জানিয়েছে এ তথ্য।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছয় বছরের আয়কর রিটার্ন জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করা হয়েছে। নথিগুলো গোপন রাখতে ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা ভেঙে দিয়ে শুক্রবার কংগ্রেস কমিটি নথিগুলো প্রকাশ করে।
নথিতে দেখা গেছে, ২০২০ সালে ট্রাম্প এবং তার স্ত্রী মেলানিয়া কোনো কর পরিশোধ করেননি। খবর দ্য গার্ডিয়ান ও রয়টার্সের।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে ট্রাম্প আয়করের তথ্যগুলো গোপন রাখার চেষ্টা করছিলেন। করের তথ্য প্রকাশ করা নিয়ে কয়েক বছর ধরে রিপাবলিকান এ নেতার সঙ্গে ডেমোক্রেটিক আইনপ্রণেতাদের আইনি লড়াই চলছে। গত মাসে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট মামলাটির নিষ্পত্তি করেছে।
শুক্রবার কংগ্রেস কমিটি ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ট্রাম্পের সংশোধিত আয়কর রিটার্ন প্রকাশ করেছে। এর আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে কংগ্রেসের নিম্ন কক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ নথিগুলো পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের মেয়াদের শেষ বছরে অর্থাৎ ২০২০ সালে ট্রাম্প এবং তাঁর স্ত্রী মেলানিয়া কোনো ধরনের কেন্দ্রীয় আয়কর পরিশোধ করেননি।
ট্রাম্প যে বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য প্রচারণা শুরু করেন অর্থাৎ ২০১৫ সালে তিনি এবং মেলানিয়া আয়কর বাবদ ৬ লাখ ৪১ হাজার ৯৩১ ডলার পরিশোধ করেছেন।
২০১৬ ও ২০১৭ সালে তারা ৭৫০ ডলার শোধ করেছেন। ২০১৮ সালে প্রায় ১০ লাখ ডলার, ২০১৯ সালে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৪৪৫ ডলার পরিশোধ করেছেন। ২০২০ সালে তাদের কর পরিশোধের পরিমাণ শূন্য। এ বছরই ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছেন।
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প বলেছিলেন চীনে থাকা অ্যাকাউন্টটি ২০১৫ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, তার দাবি ছিল প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগেই তিনি চীনের অ্যাকাউন্ট বাদ দিয়েছেন। কিন্তু আয়কর রিটার্নে দেখা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্য, চীন এবং আয়ারল্যান্ডে তার অ্যাকাউন্ট থাকার তথ্য উল্লেখ করেছেন। ২০১৮ সালে শুধু যুক্তরাজ্যে একটি অ্যাকাউন্ট থাকার কথা জানিয়েছেন।
চীনের এই অ্যাকাউন্ট প্রসঙ্গে নিউ ইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানায়, চীনে ব্যবসায়ের লক্ষ্যে ২০১২ সালে সাংহাইয়ে একটি অফিস খোলেন ট্রাম্প। দীর্ঘকালীন বিশেষ প্রকল্পের জন্য ৫টি ছোট কোম্পানিতে ট্রাম্প বিনিয়োগ করেন কমপক্ষে ১ লাখ ৯২ হাজার ডলার। এসব কোম্পানি ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৯৭ হাজার ৪০০ ডলার খরচ দেখিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আয়করের মতো ছোটখাটো খরচ এবং অ্যাকাউন্টিং ফি।
এর ব্যাখ্যায় ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের একজন আইনজীবী অ্যালান গার্টেন নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকাকে বলেন যে ট্রাম্প ইন্টারন্যাশনাল হোটেলস অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ‘যুক্তরাষ্ট্রে অফিস থাকলেও চীনা ব্যাংকের সাথে অ্যাকাউন্ট খুলেছে স্থানীয় কর দেয়ার সুবিধার্থে।’
গার্টেন বলেন, “২০১৫ সাল থেকে অফিসটিতে কোনো কাজ হচ্ছে না। কোনো চুক্তি, লেনদেন বা ব্যবসায়িক কার্যক্রম সেখানে সম্পন্ন হয়নি।”
আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডে গলফ কোর্স, ফাইভ স্টার হোটেলের চেইনসহ যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে এবং বাইরে বহু ব্যবসায়িক উদ্যোগ রয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় ৬ হাজার পৃষ্ঠার নথির মধ্যে ২ হাজার ৭০০ পৃষ্ঠায় ট্রাম্প ও তার স্ত্রীর ব্যক্তিগত আয়করের তথ্য উল্লেখ করা আছে। তিন হাজারের বেশি পৃষ্ঠায় ট্রাম্পের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর আয়করের তথ্য দেওয়া আছে।
২০২৪ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় অনুসন্ধানী সাংবাদিক, স্বাধীনধারার কর বিশেষজ্ঞ এবং অন্যরা ট্রাম্পের আয়করের তথ্যগুলো ব্যবহার করতে পারবেন। ট্রাম্পের সম্পদ, তাঁর ব্যবসায়িক কার্যক্রমের ওপর তারা আলোকপাত করতে পারবেন। ট্রাম্প কীভাবে তাঁর করের দায় কমিয়ে নিয়েছিলেন তাও খতিয়ে দেখতে পারবেন তারা।
২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেন ট্রাম্প। আয়কর রিটার্ন দাখিল না করেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনি।
কয়েক দশকের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল না করা প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বী তিনি। আয়কর রিটার্নের তথ্য গোপন রাখতে কমিটির বিরুদ্ধে তিনি মামলা করেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হাইকোর্ট কমিটির পক্ষে রুল জারি করে।
গত সপ্তাহে কমিটি বলেছে, চার বছরের মধ্য তিন বছরই ট্রাম্পের কর প্রদানের তথ্য নিরীক্ষা না করার মধ্য দিয়ে কর সংগ্রহকারী ইন্টারনাল রেভেন্যু সার্ভিস নিজেই নিজের বিধি ভঙ্গ করেছে।
রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানায়, সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রথম তিন বছর কিছু না কিছু কর দিলেও শেষদিকে তা একদম শূন্যে নামিয়ে ফেলেছেন। অবশ্য কর না দেয়ার পেছনে ব্যবসায় মুনাফা ঘাটতির ছুতা দেখিয়েছেন তিনি।
এদিকে অন্য একটি খবরে বলা হয়, আয়করের হিসাব সামনে আসায় তদন্তের মুখে পড়তে পারেন ট্রাম্প। এদিকে অন্য একটি খবরে বলা হয়, আয়করের হিসাব সামনে আসায় তদন্তের মুখে পড়তে পারেন ট্রাম্প।
অন্যান্য প্রেসিডেন্টরা নিয়মিত আয়কর রিটার্ন প্রকাশ করলেও ট্রাম্প তা চাননি। পরে প্রতিনিধি পরিষদ একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে করের হিসাব প্রকাশে সম্মত হয়।
ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের মুখপাত্র স্টিভেন চেউং বলেছেন, করের হিসাব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই প্রকাশ্যে আনা হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্টের সঙ্গেই যখন এটা হয়েছে, সাধারণ আমেরিকানদের সঙ্গেও ঘটতে পারে।
এর আগে ২০২০ সালে নিউইয়র্ক টাইমসের একটি ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত অন্তত ১০ বছর কোনো করই দেননি দেশটির এ শীর্ষ ব্যবসায়ী। অবশ্য ট্রাম্প তখন এ অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। তার দাবি ছিল, ওই সময়ে তিনি ‘প্রচুর’ আয়কর দিয়েছেন।
এসডব্লিউএসএস/১৭২০
আপনার মতামত জানানঃ