মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে এলিট ফোর্স র্যাব এবং বাহিনীটির সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পরই বাংলাদেশের নানা প্রসঙ্গে দেশটি যেভাবে মন্তব্য করেছে তাতে এই ঘটনা দিয়ে যে কেউ চাইলে মায়ের চেয়ে মাসীর দরদ বাগধারার অর্থ বোঝাতে পারবে। কখনও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কখনও রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে, তো কখনও বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে।
এরই ধারাবাহিকতায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস আজ বুধবার সকালে নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাসায় যান। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার সময় প্রায় ৪৫ বছর আগের গুমের ঘটনা ও সামরিক শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তার কাছে স্মারকলিপি দেয় ‘মায়ের কান্না’ নামের একটি সংগঠন।
১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর বিদ্রোহ দমনের নামে বিমান বাহিনীর সহস্রাধিক সদস্য গুমের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সংগঠন ‘মায়ের কান্না’। তারা জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করেন। ৪৫ বছর পূর্বের গুমের ঘটনা ও সামরিক শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেন।
সকাল ৯টা ৫ মিনিটে সুমনের বাসায় প্রবেশ করেন রাষ্ট্রদূত। প্রায় ২৫ মিনিট তিনি সেখানে অবস্থান করেন। এরপর তিনি ওই বাসা থেকে বেরিয়ে যান।
এ সময় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি মার্কিন রাষ্ট্রদূত। সুমনের পরিবার থেকেও সাংবাদিকদের কিছু বলা হয়নি। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের বাংলাদেশ ডেস্কের অফিসার লিকা জনসন।
প্রসঙ্গত, বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমন ২০১৩ সালে নিখোঁজ হন। ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর বসুন্ধরার খালার বাসা থেকে র্যাব পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনকে। তিনি বিএনপির ঢাকা মহানগরের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির (বর্তমানে ঢাকা উত্তরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ড) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
বাংলাদেশে এরইমধ্যে নির্বাচনের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে বাংলাদেশের জনগণকেই এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ দেশের জনগণ, সরকার ও সুশীল সমাজকে আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। এটি ভালোভাবে সম্পন্ন করতে সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। এমনটাই বলছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস এ প্রসঙ্গে বলেছেন, মূলত, নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশের জনগণ। আশা করছি, নির্বাচন কমিশন একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেবে। নির্বাচন কমিশন তাদের স্বাধীন সত্তা প্রয়োগ করবে। মানবাধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় ছাড় দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি অনুযায়ী দেশটি মানবাধিকার এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আপস করবে না।
বাংলাদেশ নিয়ে গত বছর কয়েকের তুলনায় বেশ চিন্তিত যুক্তরাষ্ট্র। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসকে বেশ তৎপরই মনে হয়েছে। প্রতিদিনই তাগিদ দিয়েছেন সুষ্ঠু নির্বাচনের। কেবল সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ নয়, সর্বজন গ্রহণযোগ্যসহ বিশেষায়িত নানা আকাঙ্খা যোগ করে চলেছেন। বারবার বলেছেন, সামনের নির্বাচন হতে হবে আন্তর্জাতিক মানের। মানবাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়েও কথা বলেছেন সমানে। এমনকি জবাবদিহি ছাড়া র্যাবের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুযোগ নেই- এমন খাসকথাও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন পিটার হাস।
অথচ নানা ঘটনার পরিক্রমায় ২০০৮ সালের পর থেকে বাংলাদেশে কমতে থাকে মার্কিন রাষ্ট্রদূতদের ভূমিকা তথা তৎপরতা। বিগত দুইজন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ঢাকায় কেবল রুটিন ওয়ার্কে ছিলেন। কিন্তু সেই জায়গা থেকে সরে এসেছেন নতুন রাষ্ট্রদূত হাস। বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছেন। পরামর্শ দিচ্ছেন। আকাঙ্খার কথা জানাচ্ছেন।
এখানে প্রশ্ন মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এ ব্যস্ততা নির্বাচনের জন্যই? আগে-পিছে অন্য কিছু নেই তো? প্রশ্নগুলো ঘুরলেও জবাব স্পষ্ট নয়। আদ্যোপান্ত জানা আরো অপেক্ষার বিষয়।
এসডব্লিউএসএস/১৮২২
আপনার মতামত জানানঃ