আবারও কোভিড ভাইরাস নিয়ে চাঞ্চল্যকর দাবি উঠলো। এবার এই দাবি করেছেন চীনের উহান ল্যাবরেটরিতে কাজ করা এক বিজ্ঞানী। ধারণা করা হয়, এই চীনের উহান থেকেই বিশ্বে ছড়িয়েছে কোভিড।
দাবি করা হচ্ছে, করোনা ভাইরাস মানুষের তৈরি! আমেরিকার মদতেই এই কাজ করেছে চীন! এমনটাই বিস্ফোরক দাবি করেছেন উহান শহরের বিতর্কিত গবেষণাগারের এক প্রাক্তন বিজ্ঞানী। তার এই মন্তব্যের পর তুঙ্গে জল্পনা। অনেকেরই দাবি, জৈব অস্ত্র হিসেবে ওই আণুবীক্ষণিক জীবগুলিকে তৈরি করা হয়েছে।
২০১৯ সালের শেষের দিকে উহানে প্রথম করোনা ভাইরাসের দেখা মিলে। তার পরের বছর থেকেই বিশ্বজুড়ে শুরু হয় করোনার মৃত্যুমিছিল। মহামারীর দাপটে রীতিমতো বেকায়দায় পড়ে আমেরিকার মতো উন্নত দেশগুলিও। আর ওই মারণ ভাইরাসটি চীনের ‘উহান ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি’ থেকেই ছড়ায় বলে অভিযোগ করে ওয়াশিংটন। এহেন পরিস্থিতিতে ২০২১ সালে ‘বিজ্ঞানে অবদানের জন্য’ বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানটিকে সর্বোচ্চ সম্মানের জন্য মনোনীত করেছিল চীন।
এদিকে, অ্যান্ড্রু হাফ নামের ওই বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, কোভিড ভাইরাস আসলে মানুষেরই তৈরি! উহানের যে ল্যাবরেটরিতে তিনি কাজ করতেন সেখান থেকেই প্রথমে ভাইরাস ছড়িয়েছিল বলে এর আগেও দাবি উঠেছিল। অ্যান্ড্রু হাফের এমন বক্তব্যের পর আবারও সেটি সামনে চলে এলো।
খবরে বলা হয়, মার্কিন গবেষক অ্যান্ড্রু হাফ বৃটিশ সংবাদপত্র দ্য সানে তার এই বিবৃতি দিয়েছেন। তার দাবি, চীন সরকার পরিচালিত উহানের ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি থেকেই প্রথম কোভিড ভাইরাস লিক করেছিল।
এ নিয়ে একটি বইও লিখেছেন তিনি। নাম, ‘দ্যা ট্রুথ এবাউট উহান’। এতে ওই বিজ্ঞানী দাবি করেন, মার্কিন সরকার করোনাভাইরাস নিয়ে ফান্ডিং করেছিল চীনে।
সংক্রামক ব্যাধি নিয়ে কাজ করা ইকো হেলথ অ্যালায়েন্স নামে একটি নন প্রফিট অর্গানাইজেশনের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু হাফ। তার দাবি, উহানের ওই গবেষণাগারে উপযুক্ত সুরক্ষা ছিল না। তার জেরেই ভাইরাস লিক করে যায়।
উল্লেখ্য, বায়োসেফটি, বায়ো সিকিউরিটি, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট নিয়ে বিদেশের ওই গবেষণাগারে পর্যাপ্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ছিল না।
দ্য সান পত্রিকায় তিনি জানিয়েছিলেন, চীন প্রথম থেকেই জানত এটা জেনেটিকালি ইঞ্জিনিয়ার্ড এজেন্ট। ভয়াবহ বায়োটেকনোলজিকে চীনে ট্রান্সফার করার জন্য মার্কিন সরকারকেও দায়ী করতে হয়।
তিনি জানিয়েছেন, যেটা দেখেছিলাম তা আতঙ্কিত হওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। আমরা তাদের হাতে শুধু জৈব অস্ত্রের প্রযুক্তিকে তুলে দিয়ে চেয়েছিলাম। কার্যত বিস্ফোরক দাবি করেছেন মার্কিন বিজ্ঞানী।
যে ভাইরাস প্রাণ কেড়েছে হাজার হাজার মানুষের, যে ভাইরাস কার্যত স্তব্ধ করে দিয়েছিল গোটা পৃথিবীকে, সেই করোনার কীভাবে উৎপত্তি হয়েছিল তা নিয়ে রহস্যের জট খোলেনি এখনও। তার মধ্যে সামনে এল এই ভয়াবহ দাবির বিষয়টি।
এমনকি অ্যান্ড্রু হাফ আরও দাবি করেছেন, প্রায় দশ বছর ধরে উহান গবেষণাগারের সঙ্গে করোনা সংক্রান্ত গবেষণা চালাচ্ছে আমেরিকার সরকারি সংস্থা ‘National Institutes of Health’।
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে হাফের সংস্থা বাদুড়ের কোভিড ভাইরাস নিয়ে নানা ধরনের গবেষণা করে আসছে। এই কাজের জন্য National Institutes of Health (NIH) থেকে অর্থও পেত ওই সংস্থা। আবার এই কাজের জন্য ওই সংস্থার সঙ্গে চীনের উহান ল্যাবের সঙ্গে ভালরকম যোগাযোগ ছিল। বায়োমেডিক্যাল সংক্রান্ত বিভিন্ন গবেষণা, জনস্বাস্থ্য গবেষণার জন্য এই NIH-ই আমেরিকার সরকারের প্রধান এজেন্সি।
২০১৪ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ইকোহেল্থ অ্যালায়েন্স-এ কাজ করেছেন অ্যান্ড্রু হাফ। তার দাবি, ওই সংস্থা উহান ল্যাবকে একটি বিষয়ে সাহায্য করত। কী সেই কাজ? বাদুড়কে যে করোনা ভাইরাস আক্রমণ করে, সেটি অন্য কোনও প্রজাতিকে যাতে আক্রমণ করতে পারে তার জন্য ওই ভাইরাসকে তৈরি করা। ভাইরাসটিকে সেভাবে সক্ষম করার জন্য কী ভাবে কাজ করতে হবে সেটা নিয়েই কাজ চলত।
হাফের দাবি, চীন প্রথম থেকেই জানত এটা জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারড এজেন্ট। পাশাপাশি আমেরিকার দিকেও অভিযোগের আঙুল তুলেছেন তিনি। তার দাবি, ‘চীনের হাতে এই বিপজ্জনক বায়োটেকনোজি তুলে দেওয়ার পিছনে মার্কিন সরকার দোষী।’
নিউ ইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, The Sun-কে হাফ বলেছেন, ‘আমি যা দেখেছি তাতে আমি ভীত। আমরা জৈব অস্ত্রের কারিগরি ক্ষমতা তুলে দিয়েছি ওদের হাতে।’
এসডব্লিউএসএস/০৮২২
আপনার মতামত জানানঃ