গণতান্ত্রিক দেশ দাবি করলেও বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নিষ্প্রাণ। রাজপথে আন্দোলন নেই। সরকারবিরোধী হরতাল নেই। সমাজে কোলাহল নেই। মিছিল নেই। প্রতিবাদী সমাবেশ নেই। অন্যদিকে সামাজিক স্থিতিশীলতা নেই। বিদেশি বিনিয়োগ নেই। দ্রব্যমূল্যে স্থিরতা নেই। শুধু আছে একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ক্ষমতার দম্ভ। শোষণ। যাদের বিষ নিশ্বাস থেকে রেহাই পাচ্ছে না, নিজ দলের কর্মীরাও। বলছি বর্তমান দেশে ক্ষমতার গদি জাকিয়ে বসা আওয়ামি লীগকে নিয়ে। দলটির অন্তর্বর্তী সংঘাতের আরও একটি কদর্য রূপ ফুটে উঠেছে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পৌরসভার একটি ঘটনায়। ওই পৌরসভার এক নারী কাউন্সিলর মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে ধর্ষণ চেষ্টার।
উল্লেখ্য, চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী প্রার্থী আ স ম মাহবুব উল আলম লিপন দ্বিতীয়বার মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন। এবার আসা যাক তার সাম্প্রতিক কীর্তিতে।
এ প্রসঙ্গে নারী কাউন্সিলর মিনু আক্তার বলেন, ‘মেয়র মাহাবুব আলম লিপন বিভিন্ন সময় মাদকাসক্ত থাকেন। ৩ আগস্ট আমি পৌরসভায় গেলে মেয়র তার পারসোনাল রুমে আমাকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। আমি কৌশলে ইজ্জত রক্ষা করে বের হয়ে এসেছি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সব কাউন্সিলরকে নিয়ে বৈঠক পর্যন্ত হয়েছে।’
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আ স ম মাহবুব উল আলম লিপনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ করেছেন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মিনু আক্তার।
চাঁদপুর প্রেসক্লাবে বৃহস্পতিবার বিকেলে তিনি স্বামী ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করেন। মিনু হাজীগঞ্জ পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘মেয়র মাহাবুব আলম লিপন বিভিন্ন সময় মাদকাসক্ত থাকেন। ৩ আগস্ট আমি পৌরসভায় গেলে মেয়র তার পারসোনাল রুমে আমাকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। আমি কৌশলে ইজ্জত রক্ষা করে বের হয়ে এসেছি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সব কাউন্সিলরকে নিয়ে বৈঠক পর্যন্ত হয়েছে।
‘এরপর ২২ আগস্ট ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনির কাজীকে দিয়ে আমাকে কুপ্রস্তাব দেন মেয়র। তাতে রাজি না হওয়ায় উনি আমাকে পৌরসভার কোনো সুযোগ সুবিধা দিচ্ছেন না, বিভিন্নভাবে হেনস্থা করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। পৌরসভার মাসিক তিন মিটিংয়ের মধ্যে দুইটিতে উপস্থিত থাকলেও হাজিরায় স্বাক্ষর করতে দেননি তিনি।’
মিনু বলেন, ‘ওনার আস্তাভাজন কাউন্সিলরদের দিয়ে আমাকে হুমকি দিচ্ছেন- তার কথামতো না চললে আমাকে কাউন্সিলর পদ থেকে বরখাস্ত করবেন।’
‘আমি প্রধানমন্ত্রী এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, আমাকে এই নেশাখোরের হাত থেকে রক্ষা করুন। আপনারা সঠিকভাবে তদন্ত করলে সব কিছু বেরিয়ে আসবে।’
“এ নিয়ে আমার সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। আজ তারা এ সব বিষয় নিয়ে মুখ খুলছেন না। আজ তারা ক্ষণিকের লোভ-লালসায় পৌরসভার মাধ্যমে অসাধু উপায়ে মেয়রের ছত্রছায়া বিভিন্নভাবে টাকা রোজগার বা উপার্জন করছেন।ওনার ক্ষমতার কারণে আমার সত্য কথাটাকেও তারা মিথ্যা বলে প্রচার করছেন, আমাকে খারাপ বলে অপবাদ দিচ্ছেন। ”
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মিনু আক্তার বলেন, “কাউন্সিলররা আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন; কিন্তু মেয়র ক্ষমা চাননি। তিনি আমাকে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
তিনি বলেন, ‘অনবরত হুমকির মুখে নিরুপায় হয়ে ৩১ অক্টোবর আমার ফেসবুক আইডি থেকে লাইভে এসে সব কিছু পৌরসভার বাসিন্দাদের সামনে তুলে ধরি। এরপর মঙ্গলবার রাতে মেয়রের কিছু লোক এসে আমাকে হুমকি-ধমকি দিয়ে যান। বুধবার মেয়র তার সঙ্গীদের দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মানববন্ধন করান।’
কাউন্সিলর মিনু বলেন, ‘এ ঘটনায় আমি কোর্টে অনেকবার গিয়েছি, কোনো আইনজীবী আমাকে সহযোগিতা করেননি। হাজীগঞ্জ থানায় গিয়েছি, সেখানকার দারোগা নাজিম জানিয়েছেন, আমার মামলা থানায় নিবে না।’
মিনু এসব ঘটনার বিচার চেয়ে প্রধানমন্ত্রী, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে জানান।
সংবাদ সম্মেলনে মিনুর স্বামী নূরে আলম, বাবা আনোয়ার হোসেন, মা ও তিন মেয়ে উপস্থিত ছিলেন।
সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাজীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহাবুব আলম লিপন।
তিনি বলেন, ‘এগুলো সব মিথ্যা ও বানোয়াট। ৭ নম্বর ওয়ার্ডে ওই কাউন্সিলরের বাড়ির এক বাসিন্দা জমিসংক্রান্ত বিষয়ে অভিযোগ করেন। ঘটনা নিষ্পত্তির জন্য ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মনির হোসেন কাজী ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কবির হোসেন কাজীকে তদন্তের দায়িত্ব দিই।
‘পরপর তিনটি নোটিশের পরও তার ও তার পরিবারের অসহযোগিতার কারণে সুরাহা করা যায়নি। অভিযোগের বিষয়টি যখন আমার অফিস সহকারী ড্রাফট করছিল, তখন ওই কাউন্সিলর গিয়ে চিল্লাচিল্লি করেন। এসব ঘটনার জের ধরে তিনি মিথ্যা ও বানোয়াট কাহিনী রটিয়েছেন।’
মেয়র বলেন, ‘এই ঘটনায় কাউন্সিলর মনির কাজী বাদী হয়ে মহিলা কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ১ নভেম্বর হাজীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দেন এবং ২ নভেম্বর আদালতে মানহানির মামলা করেছেন।’
এসডব্লিউএসএস/১৫৩০
আপনার মতামত জানানঃ