ধর্ষণের প্রমাণ পেতে দুই আঙুলের পরীক্ষা বা টু ফিঙ্গার টেস্ট অবৈজ্ঞানিক তো বটেই, পাশাপাশিই সমাজের পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের পরিচয় দেয় বলে জানিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। একইসাথে এ ব্যাপারে দায়ী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে।
সোমবার এ-সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানিতে বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি হিমা কোহলির বেঞ্চ এই নির্দেশ দেয়।
বছর দশেক আগে ভারতে ধর্ষণের পরীক্ষা হিসেবে টু ফিঙ্গার টেস্ট নিষিদ্ধ করা হয়। এর পরও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ধর্ষণের প্রমাণ পেতে এই ধরনের পরীক্ষা চালু রয়েছে।
এরই প্রেক্ষাপটে এই প্রক্রিয়া পুরোপুরি বন্ধ করতে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
ধর্ষণের শিকার নারীর টু ফিঙ্গার টেস্ট করানোর মনোভাবকে সমাজের ‘পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের প্রকাশ’ বলে মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
আদালত বলেছে, এই ধরনের পরীক্ষা কোনোভাবেই একজন ধর্ষণের শিকার নারীকে করানো যাবে না। যদি কেউ এই পরীক্ষা করেন, তবে তাকে অসদাচরণের দায়ে পড়তে হবে। কেউ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কি না তা প্রমাণে এই পরীক্ষা অপ্রাসঙ্গিক।
এই ধরনের পরীক্ষা কোনোভাবেই একজন ধর্ষণের শিকার নারীকে করানো যাবে না। যদি কেউ এই পরীক্ষা করেন, তবে তাকে অসদাচরণের দায়ে পড়তে হবে। কেউ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কি না তা প্রমাণে এই পরীক্ষা অপ্রাসঙ্গিক।
আক্ষেপ করে আদালতের বেঞ্চ বলেছে, ‘এই পরীক্ষা অবৈজ্ঞানিক তো বটেই, পাশাপাশিই আমাদের সমাজের পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের পরিচয় দেয়। এই পরীক্ষা একটি সম্পূর্ণ ভুল মনোভাবকে প্রাধ্যান্য দেয়, যা বলে, যৌনজীবনে সক্রিয় কোনও নারীকে ধর্ষণ করা যায় না।’
রায়ে বলা হয়, ধর্ষণের শিকার কারো যখন এই পরীক্ষা করানো হয় তিনি নিশ্চিতভাবেই আরও একবার একই মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যান। একটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণার ওপর দাঁড়িয়ে তাকে ওই যন্ত্রণা দেয়া অর্থহীন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, ধর্ষণ প্রমাণে শারীরিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে এ পদ্ধতির কোনো বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি নেই এবং এটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। পৃথিবীর অনেক দেশে আগে এই টেস্টের প্রচলন থাকলেও বর্তমানে এটি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে।
বস্তুত টু ফিঙ্গার টেস্ট এক বহু পুরনো প্রচলিত পরীক্ষা। যেখানে মেডিকেল অফিসার ধর্ষণের পর নারীর বিশেষ অঙ্গে দুটি আঙুল ঢুকিয়ে কুমারিত্ব পরীক্ষা করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বহুদিন আগেই জানিয়েছে, এ পরীক্ষার কোনো অর্থ নেই। এ পরীক্ষা থেকে রেপ সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানাও যায় না। বরং এই টেস্টের মাধ্যমে নারীকে অপমানই করা হয়।
২০১৩ সালে ভারত এবং ২০১৮ সালে বাংলাদেশ তথাকথিত এই ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ পদ্ধতি নিষিদ্ধ করে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮০৮
আপনার মতামত জানানঃ