জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন মা ও মেয়ে। নারায়ণগঞ্জের বরফা এলাকার হান্নান নামে এক আওয়ামী লীগ নেতা তাদের জমি ও বাড়ি দখল করে নিয়েছে অভিযোগ করে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন শিরিন খান ও তার মেয়ে। এসময় উপস্থিত জনতা ও পুলিশ তাদের বাধা দিয়ে চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শনিবার বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, কেরোসিন ঢালার পরপরই উপস্থিত লোকজন গায়ে আগুন ধরাতে বাধা দেন শিরিন আক্তার নামের ওই নারী ও তার মেয়েকে। পরে দুজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান প্রেস ক্লাবে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য।
প্রেস ক্লাবে উপস্থিত লোকজন ও সাংবাদিকদের সামনে শিরিন আক্তার জানান, নারায়ণগঞ্জের বরপা এলাকায় তিনি আট বছর আগে জমি কিনে বাড়ি করে বসবাস করে আসছেন, কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা আবদুল হান্নান দীর্ঘদিন ধরে বাড়ি ছাড়তে চাপ দিচ্ছেন। হান্নানই উল্টো তার নামে মামলা করে হুমকিধমকি দিচ্ছেন।
তিনি বলেন, ‘গত দুই মাস ধরে আমাকে বাড়ি যেতে দিচ্ছে না (হান্নান)। আমার স্বামী অসুস্থ। তিনি এসব যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। কোথায় আছেন, তা আমি জানি না।’
এর আগেও কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। দুই দিন আগেও তিনি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন।
ওই নারী আরও বলেন, ‘আমি স্থানীয় মানুষ ও প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে ব্যর্থ হয়েছি। পুলিশকে জানালে পুলিশ সহযোগিতা করছে, কিন্তু তাদের সঙ্গে পেরে উঠছে না। হান্নান বলতেছে আমাদেরকে আর বাড়ি না যেতে; জমির দলিলপত্র সব দিয়ে দিতে।
বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে কোনো উপায় না পেয়ে এই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছি। আমার আর কোনো উপায় নাই। আমার মেয়েটার ব্রেনে সমস্যা।’
শিরিন আরও জানান, প্রেস ক্লাবে আসার আগে নিজে কীটনাশক পান করেছেন; মেয়েকে ঘুমের ওষুধ খাইয়েছেন। এর আগেও কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। দুই দিন আগেও তিনি গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিলেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত শাহবাগ থানার পেট্রল ইন্সপেক্টর (পিআই) শেখ আবুল বাসার জানান, জমিজমা সংক্রান্ত ঘটনায় এই নারী তার সন্তানসহ প্রেস ক্লাবের সামনে গায়ে আগুন ঢেলে আত্মহত্যার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কোনও দুর্ঘটনা ঘটার আগেই আমরা তাদের বাধা দেই।
তিনি বলেন, শিরিন আক্তার জানিয়েছেন তিনি এখানে আসার আগে বিষ খেয়েছেন। আমরা তৎক্ষণাৎ তাদের ঢাকা মেডিক্যালে পাঠাই জরুরি চিকিৎসার জন্য।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, এসব ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এটা যে হঠাৎ করে হচ্ছে তা নয়। পর্যায়ক্রমে নিচে যেতে যেতে একটা গভীর সংকটে এসে আমরা দাঁড়িয়েছি। অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে, সম্পদ বাড়ছে, কিন্তু মানুষের মানবিক গুণাবলি কমে যাচ্ছে। এখন আমাদের সামনে কোনো আদর্শ নাই। আদর্শহীনতা, নীতিহীনতা—এগুলো দ্বারা রাজনীতি দূষিত হয়ে গেছে। জাতীয় রাজনীতি যদি দূষণমুক্ত হতো তাহলে সরকারের নীতি ভিন্ন হতো।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থানীয় আওয়ামীলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের দৌরাত্ম্য দিনদিন চাউর হয়ে উঠছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে ক্ষমতার চূড়ান্তে বসবাস করেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ও সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আগ্রহবোধ না করায় তাদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে চলেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭১২
আপনার মতামত জানানঃ