প্রথম নারী হিসেবে একা বিমান নিয়ে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়েছেন তিনি। এর আগে, কোনো নারীর এমন কৃতিত্ব ছিল না। অ্যামেলিয়া ইয়ারহার্ট যখন আটলান্টিক মহাসাগর পেরিয়েছিলেন, তখন নারীরা তো দূরের কথা, খুব বেশি পুরুষও বিমান চালাতে জানতেন না।
নিজের জেদ আর সাহসে ভর করে এই অসাধ্য সাধন করেছিলেন তিনি। তাও সেই বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে। তাকে দেখে পরবর্তী সময়ে বিমান চালনাকে পেশা হিসেবে নিয়েছিলেন অনেক নারী।
১৮৯৭ সালের ২৪ জুলাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাসে জন্ম অ্যামেলিয়ার। তার ছোটবেলা কেটেছিল দাদার বাড়িতে। সুযোগ পেলেই বাড়ির বাইরে খেলতে চলে যেতেন অ্যামেলিয়া।
১৯০৮ সালে বাবা-মায়ের কাছে আইওয়াতে চলে যান তিনি। পরে শিকাগো আর ফিলাডেলফিয়ায় কেটেছে অ্যামেলিয়ার কৈশোর। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় স্বেচ্ছাসেবক হয়েছিলেন অ্যামেলিয়া। টরন্টোতে আহতদের সেবা করার জন্য নার্সের কাজ শুরু করেন তিনি। বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন যুদ্ধবিমানের প্রদর্শন হতো। অবসর সময়ে তা দেখতে যেতেন অ্যামেলিয়া। তখনই বিমানের প্রতি তার ভালোবাসা জন্মায়।
১৯২১ সালে বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ নেন অ্যামেলিয়া। ঠিক করেন বিমান কিনবেন। টাকা জোগাড়ের জন্য নানা রকমের কাজ শুরু করেন অ্যামেলিয়া। ওই বছরই টাকা জমিয়ে বিমান কেনেন তিনি।
সময়টা ১৯২৮ সাল। আমেরিকা থেকে আটলান্টিক পেরিয়ে ইউরোপগামী বিমানে উঠেন অ্যামেলিয়া। এর আগে, কোনো নারী এই সাহস দেখাননি। ‘কুইন অফ এয়ার’ তকমা দেয়া হয় তাকে। চার বছর পর অ্যামেলিয়া নিজেই বিমান নিয়ে পাড়ি দেন আটলান্টিক মহাসাগর।
নিউ ফাউন্ডল্যান্ডের হারবর গ্রিস থেকে প্যারিস যাওয়ার কথা ছিল তার। আবহাওয়া খারাপ থাকার কারণে ২০ ঘণ্টা পর তিনি আয়ারল্যান্ডে বিমান অবতরণ করান। বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছিল। অ্যামেলিয়ার আগে কোনো নারীর এই পথ পাড়ি দেয়ার এই কৃতিত্ব নেই।
এমনকি তার আগে মাত্র এক জন পাইলটের এই কৃতিত্ব ছিল। সেদিক থেকে অ্যামেলিয়া দ্বিতীয়। তাকে পুরস্কৃত করেন তৎকালীন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হার্বার্ট হুবার। ১৯৩৫ সালে হনুলুলু থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় বিমান উড়িয়ে নিয়ে যান অ্যামেলিয়া। এর আগে, কোনো বিমান চালকের এই কৃতিত্ব ছিল না।
১৯৩৭ সালে আরও কঠিন অভিযানে নামার সিদ্ধান্ত নেন অ্যামেলিয়া। স্থির করেন, বিমানে চেপে গোটা পৃথিবী প্রদক্ষিণ করবেন। অ্যামেলিয়ার বয়স তখন ৩৯। ১৯৩৭ সালের ১ জুন মিয়ামি থেকে যাত্রা শুরু করেন তিনি। যাত্রাপথের দৈর্ঘ্য ২৯ হাজার মাইল। এই যাত্রায় তার সহকারী ছিলেন ফ্রেড নুনান। যাত্রা বিরতির অংশ হিসেবে করাচি এবং কোলকাতায় অবতরণ করে বিশ্রাম নিয়েছিলেন অ্যামেলিয়া।
এরপর ২৯ জুন অবতরণ করেন পাপুয়া নিউগিনিতে। আর মাত্র ৭ হাজার মাইল গেলেই লক্ষ্যপূরণ হতো অ্যামেলিয়াদের। ২ জুলাই হাউল্যান্ডের উদ্দেশে রওনা হন তিনি। সেখান থেকে লায়ের দূরত্ব ৪,১১৩ কিলোমিটার। গোটা যাত্রাপথের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জটা লুকিয়ে ছিল সেখানেই। হাউল্যান্ড থেকে উড়েই নিরুদ্দেশ হয়ে যায় অ্যামেলিয়াদের বিমান।
কোথায় গেল বিমানটি? ৮০ বছর কেটে গেলেও কাটেনি ওই রহস্য। জানা গেছে, সেদিন আবহাওয়া খারাপ ছিল। আচমকাই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় অ্যামেলিয়াদের বিমানের সঙ্গে। মনে করা হয়, পথ হারিয়ে ফেলেছিলেন অ্যামেলিয়া। উড়তে উড়তে জ্বালানি শেষ হয়ে যায় বিমানের। এর পরই সম্ভবত মুখ থুবড়ে পড়ে বিমানটি।
কেউ কেউ মনে করেন, জাপানের কোনো ছোট দ্বীপে অবতরণ করেছিল অ্যামেলিয়ার বিমান। তাকে আমেরিকার গুপ্তচর ভেবে আটক করে জাপানি সেনারা। বাকি জীবন সেখানেই বন্দি ছিলেন তিনি। অ্যামেলিয়া নিরুদ্দেশ হওয়ার পর তার স্বামী জর্জ পি পুটনাম তার জীবনী লেখেন। বইটির নাম ‘সোরিং উইংস’। ১৯৩১ সালে জর্জকে বিয়ে করেছিলেন অ্যামেলিয়া।
এসডব্লিউ/এসএস/১৯০৫
আপনার মতামত জানানঃ